বর্তমান সময়ে যেন বলিউডে বায়োপিকের হিড়িক দেখা যাচ্ছে। তেমনই অভিনেতা রাজকুমার রাও অভিনিত একটি বায়োপিক সিনেমা আসছে। অভিনেতার আসন্ন এই সিনেমাকে ঘিরে মানুষের মধ্যে আলোচনার শেষ নেই। যাকে নিয়ে মূলত এই বায়োপিক তাঁর কাহিনী শুনলে হয়তো আপনিও চমকে উঠবেন। রাজকুমার রাও ‘শ্রীকান্ত’ নামের একটি সিনেমায় অভিনয় করছেন।
আসলে এই সিনেমাটি তৈরি হয়েছে ভারতের অন্যতম ধনী ব্যবসায়ীকে নিয়ে। যিনি আবার দৃষ্টিশক্তিহীন। তাঁর নাম হল শ্রীকান্ত বোল্লা। তিনি এখন কোটি টাকায় ব্যবসা করেন। এখন আপনিও নিশ্চয়ই ভাবছেন যে কে এই শ্রীকান্ত বোল্লা? তাহলে বিশদে জানতে ঝটপট পড়ে ফেলুন আজকের এই প্রতিবেদনটি।
শ্রীকান্ত বোল্লার কাহিনী
আকচার রাস্তাঘাটে বিশেষভাবে সক্ষম ব্যক্তিদের দেখলে তাদের কতটা অসহায় মনে হয়। কিন্তু অনেকেই আছেন যারা নিজেদের প্রতিবন্ধতাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে জীবনে প্রতিষ্ঠিত হয়ে ওঠেন। তেমনই একজন মানুষ হলেন এই শ্রীকান্ত বোল্লা। তিনি জন্ম থেকেই চোখে দেখতে পান না। তাতে কী, নিজের এই প্রতিবন্ধতাকেই হাতিয়ার করে এই মানুষটি এখন বড় ব্যবসায়ী হয়ে উঠেছেন। তিনি এখন কোটি টাকা মূল্যের কোম্পানির মালিক। অন্ধ হলেও তিনি MIT থেকে পড়াশোনা করেছেন। আর এই শ্রীকান্তের চরিত্রকেই এখন বড় পর্দায় তুলে ধরবেন রাজকুমার রাও। ইতিমধ্যে রাজকুমার রাও অভিনীত ‘শ্রীকান্ত’-এর ট্রেলার প্রকাশ্যে এসেছে। এই সিনেমাটি আগামী ১০ মে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাবে।
এদিকে এই ট্রেলার দেখার পরেই মানুষ এখন শ্রীকান্ত বোল্লা সম্পর্কে জানতে মানুষ এখন অনেক কৌতূহলী হয়ে উঠেছেন। শ্রীকান্ত বোল্লা একজন ভারতীয় শিল্পপতি এবং বোলান্ট ইন্ডাস্ট্রিজের মালিক। শ্রীকান্ত বোল্লা ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজিতে বিজ্ঞান ম্যানেজমেন্টে পড়াশোনা করেছেন। জানা যায়, শ্রীকান্ত বোল্লা ১৯৯১ সালের ৭ জুলাই অন্ধ্রপ্রদেশের মছলিপত্তনমে জন্মগ্রহণ করেন। শ্রীকান্ত বোল্লার অত্যন্ত দরিদ্র পরিবারে জন্ম নেন। শ্রীকান্ত বোল্লার পরিবার মূলত কৃষির উপর নির্ভরশীল ছিল। ২০২২ সালে শ্রীকান্ত স্বাতীকে বিয়ে করেন। এখন দু’জনেই কন্যা সন্তানের বাবা-মা হয়েছেন। আপনি জানলে অবাক হবেন, মাত্র ৬ বছর বয়সে শ্রীকান্ত বোল্লা প্রতিদিন কয়েক কিলোমিটার হেঁটে স্কুলে যেতেন। সহপাঠী ও ভাইয়ের সহযোগিতায় তিনি এই দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতেন। কিন্তু আপনারা জেনে অবাক হবেন যে শ্রীকান্ত বোল্লার কোনও বন্ধু ছিল না।
ছোটোবেলায় মেরে ফেলার পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল
এক সাক্ষাৎকারে শ্রীকান্ত বলেছিলেন, ‘ছোটবেলায় আমার বাবা-মাকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল যাতে আমাকে মেরে ফেলা হয়। পাড়ার লোকজন বলতো আমার কোনও মূল্য নেই, সেজন্য আমাকে বালিশ চাপা দিয়ে মেরে ফেলা উচিত।’ এরপর আট বছর বয়সে শ্রীকান্ত হায়দরাবাদে দৃষ্টিহীনদের জন্য একটি বোর্ডিং স্কুলে ভর্তি হন। এ সময় তিনি স্কুলে সাঁতার, দাবা ও ক্রিকেট খেলা শিখেছিলেন। দশম শ্রেণির পরীক্ষাতে নম্বর না মিললেও দ্বাদশ শ্রেণিতে শ্রীকান্ত ৯৮ শতাংশ নম্বর পেয়ে সকলকে তাক লাগিয়ে দেন। অন্ধত্বের কারণে শ্রীকান্তকে ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজির কোচিং ইনস্টিটিউটে ভর্তি নেওয়া হয়নি। ছোট থেকেই তিনি ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার স্বপ্ন দেখতেন। তিনি ভারতীয় শিক্ষা ব্যবস্থার বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন। এরপর ৬ মাসের এই লড়াইয়ের পর বিজ্ঞান নিয়ে পড়ার সুযোগ পান তিনি। বিশ্বের সেরা ৪ কলেজ এমআইটিও শ্রীকান্তকে স্কলারশিপ দিয়ে পড়াশোনার আমন্ত্রণ জানিয়েছিল।
MIT থেকে স্নাতক শ্রীকান্ত বোল্লা
তবে সেখানেও তাকে বাধার সম্মুখীন হতে হয়। শ্রীকান্ত যখন কলেজে ভর্তি হতে যাচ্ছিলেন, তখন একা হওয়ায় তাঁকে বিমানে অবধি উঠতে দেওয়া হয়নি। তবে সমস্ত প্রতিকূলতা অতিক্রম করেও শ্রীকান্ত এমআইটি থেকে স্নাতক হওয়া প্রথম আন্তর্জাতিক দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী হন। এরপর আমেরিকায় পড়াশোনার সুযোগও পান তিনি। তাঁর কঠিন সময়ে পাশে দাঁড়িয়েছিলেন স্বয়ং প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রয়াত এপিজে আব্দুল কালাম।
আরও পড়ুনঃ রিকশা চালিয়েছেন, সবজিও বিক্রি করেছেন, আজ IIT-IIM ছাত্রদের চাকরি দিচ্ছেন এই যুবক
যাইহোক, এখন শ্রীকান্ত বোল্লার সংস্থার বাজার মূল্য ৫০০ কোটি টাকা। শ্রীকান্ত বোল্লার নিজস্ব সম্পত্তির কথা বললে তা প্রায় ৫০ কোটি টাকা। শ্রীকান্ত বোল্লা ২০১২ সালে তার নিজস্ব সংস্থা বোলেন্ট ইন্ডাস্ট্রিজ শুরু করেছিলেন। সেখানে ইনভেস্ট করেছিলেন শিল্পপতি রতন টাটা। শ্রীকান্ত বোল্লার সংস্থা বোলেন্ট ইন্ডাস্ট্রিজ ইতিমধ্যেই প্রতি মাসে গড়ে ২০ শতাংশ করে বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১৮ সালে এটি ১৫০ কোটি টাকার ব্যবসায় পরিণত হয়। শ্রীকান্ত ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে প্রতিষ্ঠিত সার্জ ইমপ্যাক্ট ফাউন্ডেশনেরও পরিচালক। এই সংস্থার লক্ষ্য হ’ল ২০৩০ সালের মধ্যে ভারতের ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানগুলিকে নিরন্তর উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সক্ষম করে তোলা। ফোর্বসেও তাঁর নাম অন্তর্ভুক্ত হয়।