যত সময় এগোচ্ছে মানুষ নানা জিনিসের ওপর বিনিয়োগের প্রতি ঝুঁকছেন। কেউ সোনায় বিনিয়োগ করছে তো আবার কেউ কেউ আছেন যারা বিভিন্ন স্কিমে বিনিয়োগ করছেন। কিন্তু এখন আরও একটা জিনিস আছে যেখানে বিনিয়োগকারীরা বেশি বেশি করে বিনিয়োহ করছেন। আর সেটা হল রিয়েল এস্টেট। ভারতে রিয়েল এস্টেটে বিনিয়োগের জন্য অর্থনৈতিক বৃদ্ধি, অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং বাজারের প্রবণতা সহ বিভিন্ন কারণের যত্ন সহকারে বিবেচনা করা প্রয়োজন। কোনও আবাসিক সম্পত্তি হোক বা বাণিজ্যিক, রিয়েল এস্টেটে বিনিয়োগের লক্ষ্য রাখতে শুরু করেছেন মানুষ। যে কোনও জায়গা কেনার আগে শহর বাছাই করা উচিৎ। এরপর সেখানকার অর্থনৈতিক বৃদ্ধি, অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং বাজারের প্রবণতা বুঝে নেওয়া উচিৎ।
আজ এই প্রতিবেদনে আপনারা জানতে পারবেন ভারতে রিয়েল এস্টেট বিনিয়োগের জন্য শীর্ষ ১০টি সেরা শহর সম্পর্কে।
মুম্বাই- মুম্বাইকে স্বপ্নের শহর বলা হয়। শুধু তাই নয়, এই শহরকে বসবাসের জন্য অন্যতম সেরা জায়গা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এখানে দিনদিন আবাসিক এবং বাণিজ্যিক জায়গা বেড়েই চলেছে। এই মুম্বাইতে এমন অনেক জাইয়গা রয়েছে যেখানে থাকা যথেষ্ট ব্যয়বহুল, আর যা বিনিয়োগকারীদের মূল আকর্ষণ করে।
এই শহরে অনেক বড় বড় আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে কর্পোরেট অফিস রয়েছে। এখানকার সাংস্কৃতিক, সামাজিক জীবন, নাইটলাইফ, সর্বোপরি একাধিক সৈকতের সান্নিধ্য সকলের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। যদিও এই শহরে যানজট ও যাতায়াতের সমস্যা দীর্ঘদিনের। জমির প্রাপ্যতা অপ্রতুল, যার ফলে সম্পত্তির দাম বেশি হয়।
এখানে কেউ যদি লাক্সারি আপার্টমেন্ট কিনতে চান তাহলে তাঁকে খরচ করতে হবে ২ কোটি টাকা মতো। এছাড়া বাণিজ্যিক স্পেস পেতে প্রতি বর্গফুটে ১ কোটি টাকা বা তার বেশি খরচ করতে হতে পারে।
বেঙ্গালুরু- এই শহরটিকে ভারতের সিলিকন ভ্যালি বলা হয়। এখানকার পরিবেশ, একের পর এক আইটি সেক্টর, সকলের লাইফস্টাইল ইনভেস্টার থেকে শুরু করে সকলকে আকর্ষণ করে। ক্রমবর্ধমান আইটি শিল্পের কারণে আবাসিক এবং বাণিজ্যিক সম্পত্তিগুলির উচ্চ চাহিদা রয়েছে। এখানকার মনোরম আবহাওয়া, সবুজের সমাহার সকলকে আকর্ষণ করে। তবে এখানেও মুম্বাইয়ের মতো যানজট সমস্যা অনেকটাই। এখানে অ্যাপার্টমেন্ট পেতে হলে আপনাকে খরচ করতে হবে ৫০ লাখ থেকে ২ কোটি টাকা মতো। এছাড়া অফিস স্পেস চাইলে প্রতি বর্গফুট ৬,০০০ থেকে ১২,০০০ টাকা খরচ করতে হবে।
হায়দ্রাবাদ- অনেকেই আছেন যারা এই শহরে থাকতে চান বা রিয়েল এস্টেট ব্যবসায় বিনিয়োগ করতে চান। এই হায়দ্রাবাদ শহরে আপনি সাশ্রয়ী মূল্যের আবাসন বিকল্প, শক্তিশালী অবকাঠামো এবং ক্রমবর্ধমান আইটি এবং ফার্মাসিউটিক্যাল সেক্টর সহ একাধিক জিনিসের মেলবন্ধন দেখতে পারবেন। এই শহরে ভারতের অন্যান্য প্রধান শহরগুলির তুলনায় সম্পত্তির দাম বেশ অনেকটাই কম। আবাসিক এবং বাণিজ্যিক সম্পত্তিগুলির ক্রমবর্ধমান চাহিদা অনেকটাই। রয়েছে সু-সংযুক্ত মেট্রো পরিষেবা। তবে এখানে মাঝে মধ্যে জলের অভাব, যানজটের সমস্যা অনেকটাই দেখা যায়। এখানে থাকার জন্য কোনও সম্পত্তি কিনতে হলে আপনাকে খরচ করতে হবে ৩০ লক্ষ থেকে ১ কোটি টাকা। এছাড়া বাণিজ্যিক স্পেস পেতে হলে প্রতি বর্গফুট ৪,০০০ থেকে ৮,০০০ টাকা খরচ করতে হবে।
পুনে- এখানকার পাহাড়-পর্বত, কিছু ঐতিহাসিক মেলবন্ধন, মডার্ন ডেভেলপমেন্ট, আইটি সেক্টর সকলের আকর্ষণের অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু। স্বনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উপস্থিতি শিক্ষার্থীদের আবাসনের চাহিদা বাড়িয়ে তুলছে। এছাড়া ক্রমবর্ধমান আইটি এবং উত্পাদন শিল্প অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে অবদান রাখছে। এই শহরে কমের মধ্যে আপনি বিলাসবহুল আবাসন পেয়ে যাবেন। তবে শহরতলিতে ক্রমবর্ধমান যানজট মাথা ব্যাথার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। এখানে একটি অ্যাপার্টমেন্টের মূল্য ৪০ লাখ থেকে দেড় কোটি টাকা অবধি যেতে পারে। এছাড়া কমার্শিয়াল স্পেসের জন্য প্রতি বর্গফুটে ৪,৫০০ থেকে ৯,০০০ টাকা খরচ হবে।
চেন্নাই- চেন্নাইতে সাংস্কৃতিক ও শিল্প কেন্দ্র, আবাসিক, বাণিজ্যিক এবং শিল্প এখন ভরে ভরে দেখা যাচ্ছে। এখানকার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এবং ঐতিহাসিক ল্যান্ডমার্কগুলি পর্যটক এবং বাসিন্দাদের আকর্ষণ করে। এখানকার সমুদ্র সৈকতগুলি সকলের কাছে আলাদাই একটা ভালো লাগার জায়গা হয়ে রয়েছে। কিন্তু এখানে আসা ঘন ঘন ঘূর্ণিঝড়, আবহাওয়ার পরিবর্তন সকলের মাথাব্যাথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখানে আবাসিক জায়গার জন্য ৩০ লক্ষ থেকে দেড় কোটি টাকা খরচ হতে পারে। এছাড়া বাণিজ্যিক স্পেসের জন্য প্রতি বর্গফুট ৪,০০০ থেকে ৮,০০০ টাকা খরচ করতে হবে।
আহমেদাবাদ- গুজরাটের এই বড় শহরে আপনি সাশ্রয়ী মূল্যের আবাসন বিকল্প এবং উল্লেখযোগ্য শিল্প ও বাণিজ্যিক বিকাশ সহ একটি উদীয়মান রিয়েল এস্টেট বাজার দেখতে পাবেন। এই শহরের অন্যান্য জায়গার থেকে সম্পত্তির দাম অনেকটাই কম। এখানকার প্রাণবন্ত টেক্সটাইল, ফার্মাসিউটিকাল এবং রাসায়নিক শিল্প সকলের কাছে আলাদাই আকর্ষণের জায়গা।
ঐতিহাসিক নিদর্শন এবং সাংস্কৃতিক উৎসব আপনার মন ভালো করে দেবে। তবে এখানকার জলবায়ু খুব একটা ভালো না। গ্রীষ্মের মাসগুলিতে তাপমাত্রা বিরাট থাকে। এখানকার মেট্রো সংযোগ এবং গণপরিবহন উন্নয়ন অনেকটাই সকলের জীবনযাত্রাকে সহজ করে। এখানে আবাসিক সম্পত্তির মূল্য ২০ লক্ষ থেকে ৮০ লক্ষ টাকা এবং বাণিজ্যিক সম্পত্তির মূল্য প্রতি বর্গফুট ৩,০০০ থেকে ৬,০০০ টাকা।
কলকাতা- কলকাতা এমন একটা শহর যেখানে আপনি নানা জিনিসের মেলবন্ধন দেখতে পারবেন। এই শহর বিনিয়োগের গন্তব্য হিসাবে সকলের কাছে প্রথম পছন্দ হয়ে উঠছে ধীরে ধীরে। এখানে অন্যান্য মেট্রো শহরগুলির তুলনায় কম সম্পত্তির দাম। এই শহরে রয়েছে সাহিত্য উত্সব, আর্ট গ্যালারী এবং ঔপনিবেশিক স্থাপত্য। মেট্রো সম্প্রসারণ এবং আসন্ন সড়ক প্রকল্প সকলের নজরে রয়েছে। কিন্তু বর্ষার সময়ে কিছু জায়গায় জল জমে যাওয়ায় অনেক সমস্যার সৃষ্টি হয়। এখানে আবাসিক সম্পত্তির মূল্য ২৫ লক্ষ থেকে ১ কোটি টাকা। এছাড়া
বাণিজ্যিক সম্পত্তির দাম প্রতি বর্গফুটে ৩,০০০ থেকে ৭,০০০ টাকা।
গুরগাঁও- গুড়গাঁও হল এনসিআরের অংশ। এখানে আবাসিক বিকল্প এবং শক্তিশালী কর্পোরেট চাহিদা বেশ অনেকটাই। এই গুরগাঁওকে কর্পোরেট হাব বলা হয়। এখানে রয়েছে বহুজাতিক কোম্পানি এবং কর্পোরেট অফিস। রয়েছে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সহ অনেক উঁচু উঁচু অ্যাপার্টমেন্ট এবং ভিলা। যদিও এই শহরে দূষণের মাত্রা বেশি। কিছু এলাকায় জল সরবরাহের সমস্যা। শহরে বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্টের দাম ১ কোটি টাকা বা তার বেশি। এছাড়া কমার্শিয়াল স্পেসের দাম প্রতি বর্গফুট ৮,০০০ থেকে ১৫,০০০ টাকা।
জয়পুর- জয়পুরকে গোলাপী শহর বলা হয়। এখানকার ঐতিহাসিক স্থাপত্য, সাংস্কৃতিক পর্যটন এবং উদীয়মান রিয়েল এস্টেট সুযোগ বিশাল হয়ে দেখা দিচ্ছে। সাংস্কৃতিক পর্যটন এবং ঐতিহ্য সম্পত্তি পর্যটকদের আকর্ষণ করে। সাশ্রয়ী মূল্যের দামে বিলাসবহুল সম্পত্তি পেয়ে যাবেন। গ্রীষ্ম এবং শীতের মরসুমে তাপমাত্রা বিরাট থাকে। এখানে হেরিটেজ প্রপার্টি কিনতে হলে আপনাকে ৫০ লক্ষ থেকে ২ কোটি টাকা খরচ করতে হবে। এছাড়া আবাসিক সম্পত্তি কিনতে হলে ২০ লক্ষ থেকে ১ কোটি টাকা খরচ হবে।
কোয়েম্বাটুর- কোয়েম্বাটুরকে দক্ষিণ ভারতের ম্যানচেস্টার বলা হয়। যত সময়ে এগোচ্ছে এই শহরেও রিয়েল এস্টেট বাজার হু হু করে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এখানে শক্তিশালী উত্পাদন বেস শিল্প ও আবাসিক সম্পত্তির চাহিদা বিরাট। সর্বোপরি সারা বছর ধরে এখানকার জলবায়ু মনোরম। প্রধান মেট্রো শহরগুলির সাথে সীমিত সরাসরি সংযোগ। এখানে আবাসিক সম্পত্তির মূল্য ২০ লক্ষ থেকে ৮০ লক্ষ টাকা। এছাড়া বানিজ্যিক সম্পত্তির দাম প্রতি বর্গফুটে ২,৫০০ থেকে ৫,০০০ টাকা।