কলকাতা: রেশন দুর্নীতি মামলায় আজ মঙ্গলবার সকাল থেকেই নানা জায়গায় তল্লাশি অভিযান চালাচ্ছে ইডি। রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের একাধিক ঘনিষ্ঠের ঠিকানায় গিয়ে ম্যারাথন তল্লাশি চালান এড-র আধিকারিকরা। আজ মঙ্গলবার সকাল সকাল পুলিশ, সিআরপিএফকে সঙ্গে করে কলকাতা, বসিরহাট সহ প্রায় ১০ জায়গায় তল্লাশি চালাচ্ছেন ইডির আধিকারিকরা। মূলত বসিরহাট এবং দেগঙ্গায় শুরু হয়েছে তল্লাশি অভিযান। এই তদন্ত চলাকালীন একজনের নাম বারবার উঠে এসেছে, আর সেটা হল আব্দুল বারিক বিশ্বাস। এখন আপনার মনেও নিশ্চয়ই প্রশ্ন জাগছে যে কে এই বারিক বিশ্বাস? দেখে নিন।
কে এই বারিক বিশ্বাস?
আজ সকাল থেকেই বাংলার একাধিক চালকলে তল্লাশি চলছে ইডির। মূলত রেশন দুর্নীতির তদন্তেই এই তল্লাশি। এই তল্লাশি চলছে জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী আব্দুল বারিক বিশ্বাসের বাড়ি চালকলে। তাঁর কারখানা এবং নিউটাউনের বাড়িতে আজ সিআরপিএফ এবং বিএসএফ জওয়ানদের নিয়ে তল্লাশি চালান ইডির আধিকারিকরা। রেশন দুর্নীতির সঙ্গে এই আব্দুলের বড় যোগ থাকতে পারে বলে অনুমান কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার। এখন নিশ্চয়ই ভাবছেন এই বারিক বিশ্বাস কে?
জানলে অবাক হবেন, এই বারিক বিশ্বাসের নাম বেশ কয়েকবার গরু থেকে শুরু করে কয়লা পাচারকাণ্ডের সঙ্গে জড়িয়েছে। তাঁর নাম নিয়েছেন গরু পাচারকাণ্ডের অন্যতম অভিযুক্ত এনামুল হক। জেরায় তিনি স্বীকার করেছেন যে সে বারিকের হাত ধরে গরু পাচারের ব্যবসা শুরু করে।
সোনা পাচারও করেছে বারিক!
এনামুল হক এও দাবি করেছে যে নাকি সোনা পাচারও করেছে এই আব্দুল বারিক বিশ্বাস। এমনকি সে গ্রেফতারও হয়েছিল। তাঁর মূল কারবার নাকি সীমান্তকে কেন্দ্র করেই। প্রথম থেকে সীমান্তে যত রকম বেআইনি কাজকর্ম হয় সবের সঙ্গেই নাকি বারিইকের নাম জড়িত। নাকি ২০১৪ সালে বসিরহাট থেকে কলকাতাগামী গাড়ি একটি গাড়ি পাকড়াও করে ডিরেক্টরেট অব রেভিনিউ ইন্টেলিজেন্স। সেই গাড়ি থেকে ৪২ কিলো ওজনের প্রায় ১৫ কোটির পাচারের সোনা উদ্ধার করা হয়। আর সেই গাড়িতেই ছিলেন বারিক। এক সময়ে সোনা পাচার মামলায় ২০১৫ বারিককে গ্রেফতার করে ইডি। ২০১৫ সালে ২০ কোটি টাকার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে ইডি।
যাইহোক, এদিকে বারিকের ভাই নাকি রাজনীতিতে সক্রিয়। কিন্তু দুই ভাইতে নাকি মিল নেই। সম্প্রতি ‘বালু’ জ্যোতিপ্রিয় দাবি করেছিলেন যে বারিক মাফিয়া, গোলামকে খুনের চেষ্টাও করেছেন। এই অভিযোগকে ঘিরে সরগরম হয়ে ওঠে সর্বত্র।
সারদা মামলাতেও নাম জড়িয়েছে বারিকের
বারিক বিশ্বাসের নাম একসময় রাজ্য রাজনীতিতে আলোড়ন ফেলে দেওয়া সারদা চিটফান্ড মামলাতেও নাম জড়িয়েছে এই বারিক বিশ্বাসের। মাধ্যমে চিটফান্ডের টাকা পাচার হয়েছে বলে ইঙ্গিত মেলে। পড়ে বেশ কিছুটা সময়ে তিনি নাকি গা ঢাকা দিয়ে থাকেন। এরপর আসা যাক ২০২১ সালে। ২০২১ সালে সিবিআইয়ের সৌজন্যে ফের বারিকের নাম উঠে আসে। এরপর ২০২২ সালে রাজ্য পুলিশের সিআইডি আচমকাই কয়লা পাচার মামলায় বারিককে গ্রেফতার করে। সেইসময় সিআইডি জানায়, আসানসোল শিল্পাঞ্চলে বারিকের স্পঞ্জ কারখানা আছে। সেই কারখানার আড়ালে ইসিএলের বন্ধ এবং পরিত্যক্ত কয়লা খনি থেকে বেআইনিভাবে কয়লা উত্তোলনের অভিযোগ ওঠে। এরপর সেই মামলায় জামিন পাওয়ার পর কলকাতার নারায়ণপুর এলাকার ফ্ল্যাটেই বেশি থাকতেন বারিক। তাঁর দাবি, রাইস মিলের ব্যবসা ছাড়া এখন তাঁর কোনও ব্যবসা নেই।
বারিক বিশ্বাসের দাদা গোলাম ২০১৩ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পরিষদের সদস্য ছিলেন। এরপর ২০১৮ সালে গোলামের স্ত্রী নির্বাচনে জেলা পরিষদের টিকিট পান। গোলামের স্ত্রী সাফিজা বেগম এখনও তৃণমূলের জেলা পরিষদ সদস্য।