নয়া দিল্লিঃ চন্দ্রযান-৩ ছিল ভারতের তৃতীয় চন্দ্র অভিযান। ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ISRO-র চূড়ান্ত সাফল্যের নিদর্শন এটি। এটি চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে একটি ল্যান্ডার এবং রোভার পাঠানোর লক্ষ্য নিয়ে ২০২৩ সালের ১৪ জুলাই এর উৎক্ষেপণ করা হয়। চন্দ্রযান-৩ এর মূল উদ্দেশ্য ছিল চাঁদের পৃষ্ঠের বৈশিষ্ট্যগুলি অধ্যয়ন করা এবং সেখানে জলের অস্তিত্বের সম্ভাব্যতা পরীক্ষা করা। এই মিশনটি চন্দ্রযান-২ এর ব্যর্থতার পর পুনরায় সাফল্যের পথে ফিরে আসার একটি প্রচেষ্টা ছিল। আর তাতে সফল হয়েছিলেন ভারতের বিজ্ঞানীরা। চন্দ্রযান-৩ সফলভাবে অবতরণ করার সঙ্গে সঙ্গে ভারত চাঁদের মাটিতে অবতরণকারী চতুর্থ দেশ হিসেবে ইতিহাসে নাম লিখিয়েছে।
আর এবার চন্দ্রযান-৩ থেকে এমন এক তথ্য উঠে এসেছে যা জানলে আপনিও অবাক হয়ে যাবেন। চাঁদের বুকে এবার খোঁজ মিললো এক সাগরের। বিজ্ঞানীদের মতে, চাঁদের দক্ষিণ মেরু, অর্থাৎ যেখানে চন্দ্রযান-৩ ল্যান্ড করেছিল, সেখানে একসময় গলিত পাথরের সাগরে ঢাকা ছিল। এর অর্থ হল, চাঁদের ভিতরে এবং বাইরে লাভা ছিল। একে ম্যাগমা মহাসাগরও বলা হয়। সম্প্রতি নেচার জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্র থেকে এই তথ্য উঠে এসেছে।
প্রাচীনকালে চাঁদে ছিল ম্যাগমা মহাসাগর
এই আবিষ্কার চাঁদের গঠন সম্পর্কে একটি ধারণাকে সমর্থন করে যাকে চন্দ্র-ম্যাগমা মহাসাগর তত্ত্ব বলা হয়। বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করেন যে চাঁদ যখন ৪.৫ বিলিয়ন বছর আগে গঠিত হয়েছিল, তখন এটি গঠিত হতে শুরু করেছিল এবং ফেরোয়ান অ্যানর্থোসাইট নামক একটি হালকা খনিজ চন্দ্রপৃষ্ঠের উপরিভাগে ভাসতে শুরু করেছিল। এই ফেরোয়ান অ্যানর্থোসাইট – বা গলিত শিলা চাঁদের পৃষ্ঠ তৈরি করেছে। কারণ ইতিমধ্যে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে ফেরোয়ান অ্যানোর্থোসাইটের প্রমাণ খুঁজে পাওয়া গেছে।
আদতে কি এই ম্যাগমা মহাসাগর?
বিজ্ঞানীদের গবেষণা বলছে, দুটি প্রোটোপ্ল্যানেটের মধ্যে সংঘর্ষের ফলে চাঁদ তৈরি হয়েছিল। তাঁদের মতে, এই সময় বৃহত্তর গ্রহটি পৃথিবীর রূপ নেয় এবং ছোট গ্রহটি চাঁদে পরিণত হয়। ফলস্বরূপ, চাঁদ খুব গরম হয়ে ওঠে, যার ফলে এর পুরো আবরণ গলে যায় এবং একটি ‘ম্যাগমা মহাসাগরে’ পরিণত হয়। আহমেদাবাদের ফিজিক্যাল রিসার্চ ল্যাবরেটরির ভূতত্ত্ববিদ সন্তোষ ভি ভাদাভালে বলেন, ‘আমাদের যন্ত্র প্রমাণ করেছে যে চাঁদে লুনার ম্যাগমা মহাসাগর ছিল।’
বিজ্ঞানীরা এই সম্পর্কে অকাট্য যুক্তি দিয়েছেন
ফিজিক্যাল রিসার্চ ল্যাবরেটরির ডাঃ সন্তোষ ভাদাভালে, যিনি নেচার পত্রিকায় প্রকাশিত গবেষণাপত্রটি লিখেছেন, তিনি বলেছেন, “চাঁদের প্রাথমিক বিবর্তনের তত্ত্ব আমাদের পর্যবেক্ষণের আলোকে আরও শক্তিশালী হয়ে ওঠে।” ভারতের মিশনের আগে, অ্যাপোলো প্রোগ্রামের অংশ হিসাবে চাঁদের মধ্য-অক্ষাংশে ম্যাগমা মহাসাগরের প্রধান প্রমাণ পাওয়া গিয়েছিল। এবার সেই প্রমাণ আরো বেশি উজ্জ্বল হয়ে গেল বলে তাঁর ধারণা।