৭ বছর নিয়োগ না হওয়ায় ৫ হাজার কোটি বাঁচল সরকারের, ৩৭ লক্ষ করে লস এক একজন শিক্ষকের

Published on:

upper primary recruitment

কলকাতাঃ  দুর্গাপুজোর আবহে কপাল খুলে গিয়েছে বহু চাকরি প্রার্থীর। অবশেষে টানা ৭ বছরের দীর্ঘ লড়াইয়ের পর ১৪,০০০-রও বেশি শিক্ষক নিয়োগের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে কলকাতা হাইকোর্টের তরফে। বুধবার উচ্চ প্রাথমিকে শূন্যপদে নিয়োগের ছাড়পত্র দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। তবে এই রায় পেয়েও যেন খুব একটা খুশি নন চাকরি প্রার্থীরা। কারণ বিগত কয়েক বছরের নিয়োগ না হলেও কোটি কোটি টাকা লাভ হয়েছে সরকারের। তো আবার লক্ষ লক্ষ টাকার ক্ষতি হয়েছে চাকরি প্রার্থীদের। এখন নিশ্চয়ই ভাবছেন কীভাবে? তাহলে বিষদে জানতে চোখ রাখুন আজকের এই লেখাটির ওপর।

লক্ষাধিক টাকার ক্ষতি চাকরি প্রার্থীদের

কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে উচ্চ প্রাথমিকে নিয়োগের ক্ষেত্রে বড়সড় একটা জট কেটেছে। এবার নতুন করে মেধা তালিকা প্রকাশের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে স্কুল সার্ভিস কমিশনকে। আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে তালিকা প্রকাশের নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। হাইকোর্টের নির্দেশে এবার এক ধাক্কায় ১৪ হাজার ৫২টি শূন্যপদে নিয়োগে ছাড়পত্র দেওয়া হল। করতে হবে কাউন্সিলিং। যদিও দীর্ঘ ৭ বছর ধরে আন্দোলন, মামলা-মোকদ্দমা করে অনেক টাকা খরচ হয়ে গিয়েছে চাকরি প্রার্থীদের।

এক হিসেব অনুযায়ী, বিগত কয়েক বছরে চাকরি না মেলায় এক-একজন যোগ্য প্রার্থী বেতন হারিয়েছেন ন্যূনতম ৩৭ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা মতো। সেক্ষেত্রে সরকারের প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকার বেশি বেঁচেছে। যোগ্য হয়েও চাকরি না মেলার কষ্টটা ঠিক কী তা শুধুমাত্র হবু শিক্ষকরাই বুঝতে পারছেন।

কী বলছেন চাকরি প্রার্থীরা?

চাকরি না পাওয়া নিয়ে বড় মন্তব্য করেছেন চাকরি প্রার্থীরা। চাকরিপ্রার্থী ওসমান মণ্ডল বলেন, “জীবনের এতগুলো বছর চলে গেল। রাস্তাতেই কাটিয়ে ফেললাম কতগুলো দিন। এখন বিচার পেয়েছি। কিন্তু আমরা যোগ্য ছিলাম। যে সময় চলে গিয়েছে, তা কী আর ফেরত পাব?” যাইহোক, ২০১৫ সালে আপার প্রাইমারির এই পরীক্ষা হয়েছিল। সেইসময়ে পরীক্ষা দিয়েছিলেন ৫ লক্ষ পরীক্ষার্থী। পাশ করেছিলেন ২ লক্ষ ২৮ হাজার ৬৬০ পরীক্ষার্থী। এমনি তাঁদের মধ্যে প্রশিক্ষিত ছিলেন ১ লক্ষ ৮ হাজার ৩৮০ জন। এরপর মেধাতালিকা প্রকাশিত হয় ২০১৯ সালের ৪ অক্টোবর। তবে সকলের কপাল এতটাই খারাপ যে দীর্ঘ প্রতীক্ষিত সেই তালিকা প্রকাশ পাওয়ার পরেও ২০২০ সালে ১১ ডিসেম্বর সেই তালিকা বাতিল হয়ে যায়। এরপর মামলা চায় হাইকোর্টে। এরপর থেকে সেই যে চাকরির দাবিতে বিক্ষোভ শুরু হল তা এখনও চলছে।

WhatsApp Community Join Now

২০২০-র পর ২০২১ সালে ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে নিয়োগ SSC-কে নিয়োগ করতে বলে কলকাতা হাইকোর্ট। ৪ জানুয়ারি-২০ জানুয়ারি পর্যন্ত অনলাইন ভেরিফিকেশন চলে। ওই বছরেই ২১ জুন ইন্টারভিউ তালিকা প্রকাশ পায়। তাতে নাম ছিল ১৪ হাজার ৫২ জনের। কিন্তু পরীক্ষার্থী অভিযোগ করেন, তাঁদের নামই নাকি তালিকায় নেই। ফলে ফের কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন। সেইসময় তৎকালীন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের সিঙ্গল বেঞ্চ স্কুল সার্ভিস কমিশনকে নির্দেশ দেয়, ‘যাঁরা অভিযোগ করেছেন, তাঁদের গ্রিভেন্স নাও’। পরবর্তী কালে বিচারপতি সৌমেন সেনের ডিভিশন নিয়োগে স্থগিতাদেশ দেয়, কিন্তু গ্রিভেন্স নেওয়ার নির্দেশ বহাল রাখে। এরপর নানা টালবনাহানার পর ২০২৩ সালের ১৬ অগস্ট আবার মেধাতালিকা প্রকাশ করে স্কুল সার্ভিস কমিশন। তাতে ১৩ হাজার ৩৩৩ জনের নাম থাকে। ১৭ সেপ্টেম্বর আবার কাউন্সিলিং হয়। সেই কাউন্সিলিংয়ের পর ডাক পান ৮ হাজার ৯৪৫ জন পরীক্ষার্থী।

বড় রায় আদালতের

গত ২৮ আগস্ট বড় দায় দেয় আদালত। ২০২৩ সালে যে ১৪ হাজার ৫২ জনের নাম বাতিল হয় তা নিয়ে মামলা দায়ের হয় আদালতে। এর পর ২০২১ সালে এসএসসি জানায় ১৪৬৩ জনকে মেধা তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। মামলা অবধি করা হয় আদালতে। বুধবার সেই মামলার শুনানিতে কলকাতা হাইকোর্ট জানিয়েছে, ওই ১৪৬৩ জনকে যে প্রক্রিয়ায় বাদ দেওয়া হয়েছিল, তা ঠিক ছিল না। যে কারণে এবার তপৌব্রত চক্রবর্তীর ডিভিশন বেঞ্চ ১৪ হাজারেরও বেশি পদে নতুন করে মেধা তালিকা প্রকাশ করতে বলা হয়েছে।

সঙ্গে থাকুন ➥
X