দেবপ্রসাদ মুখার্জী: আজকাল বাইক বা স্কুটারের দরকার কমবেশি সকলেরই পড়ে। কিন্তু চলতি বাজারে পেট্রোলের দাম দেখে বাইক বা স্কুটার কেনার কথা ভাবতেও ভয় পাচ্ছেন মধ্যবিত্তরা। এর থেকে মুক্তির উপায় হিসেবে বাজারে এসেছে ই-বাইক বা ই-স্কুটার। কিন্তু সেখানেও চার্জিংয়ের সমস্যা। ই-ভেহিকেলের চার্জিং পয়েন্ট এখনো সেভাবে উপলব্ধ নেই আমাদের দেশে। তবে এই সব সমস্যা থেকে রাইডারদের মুক্তি দিতে বাজারে এসে গেল এমন একটি স্কুটার যেটি পেট্রোল বা ইলেকট্রিক নয়, চলে জলের মাধ্যমে। শুনে অবাক হচ্ছেন নিশ্চয়ই! এই নিবন্ধটি সম্পূর্ণ পড়ে জেনে নিন ভারতের এই জল চালিত স্কুটারের সম্পর্কে।
ভারতের বাজারে আসতে চলেছে জল চালিত স্কুটার। ইতিমধ্যে, Joy e-bike নামে একটি ভারতীয় কোম্পানি এই ব্যতিক্রমী ভাবনার স্কুটারটির প্রোটোটাইপ প্রকাশ করেছে। কোম্পানির দাবি, ১ লিটার বিশুদ্ধ জল বা ডিস্টিল্ড ওয়াটার ব্যবহার করে ১৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত চলতে পারে এই স্কুটার। কিন্তু জলে কিভাবে চলে এই স্কুটার? কোম্পানি জানিয়েছে যে, স্কুটারটি মূলত হাইড্রোজেন ফুয়েল সেল প্রযুক্তি ব্যবহার করে। এই প্রযুক্তিতে ইলেক্ট্রোলাইজারের মাধ্যমে জলের অণু থেকে হাইড্রোজেন আলাদা করা হয় এবং সেটিকে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এখন এই প্রযুক্তির নেপথ্যে থাকা বৈজ্ঞানিক যুক্তিটি জেনে নিন।
কিভাবে জলকে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে?
জল চালিত এই স্কুটারটির অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো এর হাইড্রোজেন ফুয়েল সেল এবং ইলেক্ট্রোলাইজার প্রযুক্তি। এই প্রযুক্তির মাধ্যমে স্কুটারটি জলের অণু থেকে হাইড্রোজেন আলাদা করে এবং সেই হাইড্রোজেনকে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করে ইঞ্জিন চালায়। হাইড্রোজেন জ্বালানি প্রচলিত ফসিল ফুয়েলের বিকল্প হিসেবে একটি দুর্দান্ত উপায়। কারণ, এই ইঞ্জিন থেকে কোনোরূপ কার্বন নিঃসরণ হয় না। ফলে এটি পরিবেশবান্ধব ও আগামী প্রজন্মের জন্য আকর্ষণীয় হতে পারে।
যেকোনো বয়সের মানুষ এই স্কুটার চালাতে পারবেন
এই স্কুটারের সর্বাধিক গতি ঘণ্টায় ২৫ কিলোমিটার হওয়ায়, এটি ভারতের রাস্তায় কম গতিসম্পন্ন যানবাহন হিসেবে বিবেচিত হয়। ফলে এটি চালানোর জন্য কোনো ড্রাইভিং লাইসেন্সের প্রয়োজন হয় না। এটি যেকোনো বয়সের মানুষের জন্য ব্যবহারযোগ্য এই স্কুটার। বিশেষত যারা প্রতিদিনের ছোট দূরত্বে যাতায়াত করেন, তাঁদের জন্য এটি একটি সাশ্রয়ী এবং নিরাপদ বিকল্প হতে পারে।
পরিবেশ রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ হবে এই স্কুটার
স্কুটারটির সবচেয়ে বড় সুবিধা হল এর পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি। হাইড্রোজেন ফুয়েল সেল ব্যবহার করার ফলে এটি কার্বন নিঃসরণ থেকে মুক্ত। সেই কারণে একই স্কুটার বিশ্ব উষ্ণায়ন এবং বায়ু দূষণ কমাতে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারে। এছাড়া বৈদ্যুতিক স্কুটারের মতো বড় ব্যাটারি ব্যবহার না করায়, এর ব্যাটারির পাল্টানোর সমস্যাও নেই। যা পরিবেশের ওপর আরও ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।
কখন, কোথায় কিনতে পারবেন এটি?
স্কুটারটি বর্তমানে প্রোটোটাইপ পর্যায়ে রয়েছে এবং এখনও বাণিজ্যিকভাবে উপলব্ধ নয়। কোম্পানি প্রযুক্তির আরও উন্নয়নের জন্য কাজ করছে এবং পরে এটি বাজারে আনার পরিকল্পনা করছে। Joy e-bike এর এই উদ্যোগ ভারতীয় পরিবহন শিল্পে একটি বড় পদক্ষেপ হতে পারে। বিশেষত এখন যখন জ্বালানি খরচ বৃদ্ধি এবং পরিবেশগত উদ্বেগ গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে, তখন এই নতুন প্রযুক্তি জল এবং হাইড্রোজেনকে ব্যবহার করে পরিবহন খাতে টেকসই সমাধান খুঁজে দিতে পারে।