দেবপ্রসাদ মুখার্জী: পৃথিবীর অন্যতম শক্তিধর দেশের মধ্যে চিন এখন উল্লেখযোগ্য। সেই সঙ্গে চিন অন্যান্য সব দেশের কাছে একপ্রকার মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে চিনের ব্যবসায়িক নীতি, কূটনৈতিক নীতি এবং সামরিক নীতির কারণে অনেক রাষ্ট্র অসন্তুষ্ট। কিন্তু এবার যদি বলি যে চিনের কারণে পৃথিবীর ঘূর্ণন গতিতেও প্রভাব পড়ছে! হ্যাঁ, এমনটাই হচ্ছে সাম্প্রতিক সময়ে। কিন্তু কেন হচ্ছে? সেটা এবার জেনে নিন।
পৃথিবীর গতি কমিয়ে দিয়েছে চিন!
চিনের ইয়াংজি নদীর উপর নির্মিত থ্রি গর্জেস বাঁধকে পৃথিবীর বৃহত্তম সক্রিয় জলবিদ্যুৎ প্রকল্প হিসেবে বিবেচনা করা হয়। NASA-র আর্থ অবজারভেটরি স্যাটেলাইটের তথ্য অনুযায়ী, এই বাঁধটি আকারে এতটাই বিশাল যে, এর প্রভাব সরাসরি পৃথিবীর ঘূর্ণনে পড়েছে। IFL সায়েন্সের মতে, থ্রি গর্জেস বাঁধের জলাধারের কারণে পৃথিবীর ভরের বণ্টন প্রভাবিত হয়েছে। এর ফলে পৃথিবীর ঘূর্ণনের গতি সামান্য কমে গিয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে গবেষণায়।
জলবিদ্যুৎ উৎপাদনে সবার আগে চিন!
থ্রি গর্জেস বাঁধটির উচ্চতা প্রায় ৫৯৪ ফুট এবং বাঁধটির দৈর্ঘ্য ৭,৭৭০ ফুট। এই বিশাল জলাধার প্রায় ১,০৪৫ বর্গ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত। এই বাঁধের জল ধারণ ক্ষমতা প্রায় ৪০ কিউবিক কিলোমিটার। ২০১২ সালে এই বাঁধটি সম্পূর্ণভাবে জলবিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করে। এই কেন্দ্রের বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ২২,৫০০ মেগাওয়াট। এর ফলে এটি ব্রাজিল এবং প্যারাগুয়ের ইতাইপু বাঁধকে ছাড়িয়ে যায়, যেটি আগে বিশ্বের সর্ববৃহৎ জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র ছিল।
বাঁধের কারণে কমে যাচ্ছে দিনের দৈর্ঘ্য
থ্রি গর্জেস বাঁধের কারণে পৃথিবীর ভরের বণ্টন পরিবর্তিত হয়েছে। এটি পৃথিবীর ঘূর্ণনের গতিকে প্রভাবিত করেছে। নাসার গদার্দ স্পেস ফ্লাইট সেন্টারের বিজ্ঞানী ডা. বেঞ্জামিন ফং চাও এই পরিবর্তনটি বিশ্লেষণ করে বলেছিলেন যে, চিনের এই জলাধারটি পৃথিবীর ভরের স্থানান্তরের মাধ্যমে দিনের দৈর্ঘ্যকে প্রায় ০.০৬ মাইক্রোসেকেন্ড বাড়িয়ে দিতে পারে। যদিও এটি অত্যন্ত ক্ষুদ্র পরিবর্তন, তবে এই ঘটনাটি পৃথিবীর দীর্ঘমেয়াদি ঘূর্ণনের গতির উপর একটি উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলে।
প্রকৃতির উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলবে এই বাঁধ?
বিশেষজ্ঞরা আরও জানিয়েছেন, এই ধরনের ভর স্থানান্তর পৃথিবীর আকৃতিতেও পরিবর্তন এনেছে। থ্রি গর্জেস বাঁধের কারণে পৃথিবীর মাঝখানের অংশ কিছুটা ফুলে গিয়েছে এবং মেরুর দিকে চ্যাপ্টা হয়ে গিয়েছে। এর ফলে পৃথিবীর দুই মেরু অবস্থান প্রায় দুই সেন্টিমিটার বা ০.৮ ইঞ্চি সরে গেছে। বিজ্ঞানীরা যদিও এই পরিবর্তনগুলি নিয়ে খুব বেশি উদ্বিগ্ন নন, তবে ভবিষ্যতে এগুলি বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে।