প্রীতি পোদ্দার: চলতি বছর দুর্গাপূজা উপলক্ষে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার ক্লাবগুলিতে ৮৫ হাজার টাকা অনুদানের ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু আরজি কর কাণ্ডের প্রতিবাদে কলকাতার বেশিরভাগ বড় বড় ক্লাবগুলি সেই অনুদান ফেরৎ দিয়ে দিয়েছে। প্রতিবাদের ঝড়ে মুখরিত হয়ে উঠেছে গোটা রাজ্য। আর এই আবহেই এবার ক্লাবগুলিতে অনুদান দেওয়ার সময় বিতর্কের মুখে পড়লেন তৃণমূল বিধায়ক। মুখ্যমন্ত্রীর ছবি টাঙানোর নিদান ঘিরে বিতর্ক।
ঘটনাটি কী?
গতকাল অর্থাৎ সোমবার, বিকেলে পূর্ব বর্ধমানের ভাতার থানার অন্তর্গত ক্লাবগুলিতে পুজো অনুদানের চেক দেওয়ার কর্মসূচি ছিল। সেই কর্মসূচিতে পুলিশ কর্তাদের পাশাপাশি উপস্থিত ছিলেন ভাতারের তৃণমূল বিধায়ক মানগোবিন্দ অধিকারী, জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অর্ক বন্দ্যোপাধ্যায়, ভাতারের বিডিও দেবজিৎ দত্ত, ডিএসপি (ক্রাইম) সুরজিৎ মণ্ডল, সার্কেল ইনস্পেক্টর (এ) শৈলেন উপাধ্যায় ও ভাতার থানার ওসি প্রসেনজিৎ দত্ত। জানা যায় কমপক্ষে প্রায় ৬০টি পুজো কমিটিকে চেক দেওয়া হয়েছিল। আর সেই চেক ক্লাবগুলিকে দেওয়ার সময় বিস্ফোরক মন্তব্য করে বসলেন বিধায়ক মানগোবিন্দ অধিকারী।
কী বললেন বিধায়ক?
কমিটিগুলির উদ্দেশ্যে কার্যত হুঁশিয়ারি দিয়ে বিধায়ক মানগোবিন্দ অধিকারী পুলিশ কর্তাদের পাশে দাঁড়িয়ে বলেন, “আপনারা যদি মনে করেন পুজো মণ্ডপে মুখ্যমন্ত্রীর ছবি টাঙানো যাবে না, তাহলে টাকাটা না নেওয়াই ভাল। মুখ্যমন্ত্রীর কাছ থেকে টাকাটা নিচ্ছেন। মুখ্যমন্ত্রী সরকারের লোক। যিনি টাকাটা দিচ্ছেন, তাঁর ছবি যেন প্রত্যেক মণ্ডপে টাঙানো থাকে। ছবি টাঙাতে অসুবিধা হলে তাদের টাকাটা না নেওয়াটাই ভাল। এটা আমার অনুরোধ আপনাদের কাছে। অনেক ক্লাব তো টাকা নিচ্ছে না। আপনারাও নেবেন না।” বিধায়ক যখন এরকম হুঁশিয়ার দিচ্ছেন তখন আশেপাশের পুলিশকর্তা থেকে শুরু করে বিডিও অফিসার সবাই স্পিকটি নট।
নিন্দার ঝড় বিধায়কের বিরুদ্ধে
বিধায়কের বক্তব্যের এই ভিডিও কয়েক মুহূর্তেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে গিয়েছে। যার দরুন উঠেছে প্রবল নিন্দার ঝড়। এমনকি এই ভিডিয়োটি এক্স হ্যান্ডেলে শেয়ার করেছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। ভাতারের বিজেপি নেতা স্নেহময় কুণ্ডুর দাবি, “অনুদান নেওয়া মানে যদি ছবি লাগানো হয় তাহলে উজ্জ্বলা গ্যাস যোজনা ব্যবহারকারীদের প্রধানমন্ত্রীর ছবি লাগানো উচিত।” অন্যদিকে ভাতারের প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক সুভাষ মণ্ডল বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী রাজতন্ত্র কায়েম করেছেন। অনুদানের টাকা আসলে মানুষের করের টাকা। শারদ উৎসবের ঐতিহ্যকে শেষ করে রাজনৈতিক উদ্দেশে ক্লাবগুলোকে হাতিয়ার করে পুজো মণ্ডপ দখলের চেষ্টা করছে তৃণমূল।’’
যদিও এই প্রসঙ্গে তৃণমূলের মুখপাত্র প্রসেনজিৎ দাসের দাবি, “পেট্রল পাম্প, সমবায়-সহ নানা সরকারি জায়গায় প্রধানমন্ত্রীর বড় বড় ছবি লাগানো থাকে। সিপিএম তো রাজ্যের জন্য কিছুই করেনি। বিরোধীদের মুখে সমালোচনা সাজে না।” পরে অবশ্য বিধায়ক মানগোবিন্দ অধিকারী সাফাই জানিয়ে বলেন, ‘‘আমি কোনও নিদান দিইনি। সবার কাছে অনুরোধ করেছি।”