প্রীতি পোদ্দার: ঝামেলার সূত্রপাত ছিল ছাত্র ছাত্রীদের কোটা বাতিলের দাবি নিয়ে বিক্ষোভ। কিন্তু সেই বিক্ষোভ যে এইরকম ভয়ংকর আকার ধারণ করতে পারবে, প্রথমদিকে তার আঁচও পায়নি হাসিনা সরকার। কিন্তু যখনই দেশের সকল কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, ছাত্র ছাত্রীরা এবং সাধারণ মানুষ একত্রিত হয়ে জোটবদ্ধ হয়ে দাবি তুলে ধরে তখনই প্রাণের ভয় নিয়ে গত ৫ আগস্ট বাংলাদেশে গণ অভ্যুত্থানে পতন হয় আওয়ামী লিগ সরকারের। প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে ভারতে পালিয়ে আসতে বাধ্য হন শেখ হাসিনা।
এরপরই বাংলাদেশে নতুন অন্তর্বর্তী সরকার গঠন হয় নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ মহম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে। পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসলেও নতুন সরকারের আমলে সংখ্যালঘু হিন্দুদের উপরে অত্যাচারের ঘটনা যেন আরও বেড়ে গেল। মন্দির ভাঙ্গা থেকে শুরু করে নানা উৎসবে বিশৃঙ্খলা ইত্যাদি নানা ঘটনা ঘটতে দেখা যায়।যার ফলে খোদ উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। যার ফলে রাজনীতিবিদের ধারণা এই কারণে ক্রমেই সম্পর্কের দূরত্ব বাড়ছে বাংলাদেশ এবং ভারতের। তাই হয়ত রাষ্ট্রপুঞ্জের সভায় ভারত ও বাংলাদেশের প্রতিনিধিরা যোগ দিলেও, মুখোমুখি বৈঠক হয়নি প্রধানমন্ত্রী মোদী ও মহম্মদ ইউনূসের। কিন্তু সেই আশঙ্কাই যে সত্যি হতে চলেছে তা বেশ বোঝা যাচ্ছে ইউনূস সরকারের দেওয়া পদক্ষেপ বা সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে।
হাইকমিশনার সহ পাঁচ রাষ্ট্রদূতকে বাংলাদেশে ফিরে আসার নির্দেশ সরকার!
বেশ কয়েকদিন আগেই জানা গিয়েছে যে, ভারতে বাংলাদেশের হাই কমিশনার মুস্তাফিজ়ুর রহমানের আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই অবসর নিতে চলেছেন। ২০২২ সালে তাঁকে ভারতের রাষ্ট্রদূত হিসাবে নিয়োগ করা হয়। তার আগে রাষ্ট্রপুঞ্জের সদর দফতরে বাংলাদেশের প্রতিনিধি এবং সুইৎজারল্যান্ড ও সিঙ্গাপুরের প্রতিনিধি হিসাবেও কাজ করেছেন। কিন্তু এবার সময়সীমা শেষ হওয়ার আগেই তাঁকে দায়িত্ব ছেড়ে দেশে ফিরে নোটিশ দিয়ে দিল বাংলাদেশের নয়া অন্তর্বর্তী সরকার। চলতি সপ্তাহেই বাংলাদেশের হাই কমিশনার সহ পাঁচ রাষ্ট্রদূতকে অবিলম্বে বাংলাদেশে ফিরে আসার কথা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে নোটিশের মাধ্যমে।
তবে কি আরও দুরত্ব বাড়ল বাংলাদেশ এবং ভারতের সম্পর্কে?
তবে শুধু যে ভারত থেকেই বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতদের ফিরে আসার কথা বলা হচ্ছে তা কিন্তু নয়। বেলজিয়াম, অস্ট্রেলিয়া, পোর্তুগাল, ব্রাসেলস, ক্যানবেরা, লিসবনের রাষ্ট্রদূতদেরকেও বাংলাদেশে ফিরে আসতে বলা হয়েছে। এমনকী, রাষ্ট্রপুঞ্জে বাংলাদেশের স্থায়ী সদস্যকেও অবিলম্বে ফিরে আসতে বলা হয়েছে। এর আগে ব্রিটেনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সাইদা মুনা তাসনিমকেও ফিরে আসার নির্দেশ দিয়েছিল। ফলে স্বভাবতই মনে প্রশ্ন জাগছে শেখ হাসিনা সরকারের নিয়োগ করা সমস্ত কর্তাদের সরিয়ে দেওয়ার জন্যই উঠে পরে লেগেছে ইউনূস সরকার। তাই এই নোটিশ। তবে কি এবার রাষ্ট্রদূত নির্বাচনে রাজনৈতিক রং লাগতে চলেছে।