শ্বেতা মিত্র, কলকাতাঃ রাজ্য সরকারের সিদ্ধান্তে নতুন করে ক্ষোভে ফুঁসতে শুরু করেছেন বহু শিক্ষক, শিক্ষিকা। এমনিতে আরজি কর সহ নানা ইস্যুকে ঘিরে উত্তপ্ত হয়ে রয়েছে সমগ্র বাংলা। যার মধ্যে অন্যতম হল চাকরি ইস্যু। বহু হবু শিক্ষক শিক্ষিকা আজও চাকরির দাবিতে বিক্ষোভ দেখিয়েই চলেছেন। তবে এসবের মাঝেই এবার রাজ্য সরকারকে সটান চিঠি লিখল বেশ কিছু শিক্ষক সংগঠন। এমনিতে যারা সরকারি চাকরিজীবী তাঁরা সরকারের ঘর থেকে নানা রকম সুযোগ-সুবিধা পেয়ে থাকেন। মহার্ঘভাতা, মহার্ঘ্য ত্রাণ থেকে শুরু করে নানা রকম হেলথ স্কিম থেকে সুযোগ-সুবিধা পেয়ে থাকেন। যদিও এবার কিছু শিক্ষক শিক্ষিকা রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে বিমাতৃসুলভ আচরণ করার অভিযোগ আনলেন। একই যাত্রায় পৃথক ফল করার অভিযোগ তোলা হয়েছে এই সরকারের বিরুদ্ধে।
ক্ষোভে ফুঁসছেন সরকার পোষিত শিক্ষকরা
আসলে সরকারের কর্মকাণ্ডে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সরকার পোষিত শিক্ষকরা। মূলত হেলথ স্কিম নিয়ে উঠেছে যত অভিযোগ। সরকারি স্কুলের শিক্ষকেরা যেখানে রাজ্যের হেল্থ স্কিমের আওতায় আছেন, সেখানে সরকার পোষিত এবং সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলের শিক্ষকেরা এখনও ওই স্কিমের আওতায় নেই। তাঁরা স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের সুবিধা পান। সরকার পোষিত বা সরকারের সাহায্যপ্রাপ্ত শিক্ষকেরা কেন সরকারি কর্মী বা সরকারি স্কুলের শিক্ষকদের মতো হেল্থ স্কিমের আওতাভুক্ত হবেন না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে সোজা এবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি লিখল একটি শিক্ষক সংগঠন। আর এহেন ঘটনাকে ঘিরে তীব্র শোরগোল পড়ে গিয়েছে বাংলায়।
কী বলছেন শিক্ষকরা?
এই বিষয়ে পশ্চিমবঙ্গ প্রধান শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কৃষ্ণাংশু মিশ্র বলেন, ‘সরকার পোষিত বা সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলের শিক্ষকেরা মাসে ৫০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা পান। ওই ৫০০ টাকা কোনও শিক্ষক না নিলে, তিনি স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের আওয়াত যেতে পারবেন। অথচ যাঁরা সরকারি স্কুলের শিক্ষক, ওই ৫০০ টাকার মেডিক্যাল অ্যালাউন্স ছেড়ে দিলে ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত সরকারি হেল্থ স্কিমের সুবিধা পান। অথচ একই ভাবে ৫০০ টাকা না নিলে শুধুমাত্র সর্বোচ্চ ৫ লক্ষ টাকার স্বাস্থ্যসাথী পাবেন সরকার পোষিত ও সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলের শিক্ষকেরা। কেন এই বৈষম্য? এই বৈষম্য দূর করে সরকার পোষিত ও সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত শিক্ষকদেরও হেল্থ স্কিমের আওতাভুক্ত করতে আমরা অর্থ দফতরকে এবং শিক্ষা দফতরকে অনেক বার চিঠি দিয়েছি। কোনও সুরাহা হয়নি।’
অন্যদিকে অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক তথা শিক্ষক সংগঠন এআইএফই-এর সাধারণ সম্পাদক নবকুমার কর্মকার জানান, ‘স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্প মূলত রাজ্যের অসংগঠিত ক্ষেত্রে নিযুক্ত যে সব কর্মচারী আছেন, যেমন আইসিডিএস কর্মী, আশা কর্মী, প্যারাটিচার, এমএসকে, এসএসকে, রাজ্যের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী, সাধারণ মানুষের জন্য চালু করা হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে রাজ্যের সরকার পোষিত (প্রাথমিক ও মাধ্যমিক) শিক্ষকদের এই সুযোগ সম্প্রসারিত করা হয়। অথচ সরকারি স্কুলের শিক্ষক, সরকারি কর্মচারী, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের জন্য হেল্থ স্কিম ২০০৮ সালে চালু করা হয়। রাজ্যের প্রায় সব শিক্ষক সংগঠন তখন স্কুল শিক্ষকদের জন্য স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্প নয়, হেল্থ স্কিম ২০০৮ চালু করা হোক এই আবেদন জানায়। আমরা সরকারি হেল্থ স্কিমের আওতায় সরকার পোষিত স্কুলের শিক্ষকদের আনার আর্জি জানিয়ে ফের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি দিয়েছি।’