প্রীতি পোদ্দার, কলকাতা: আরজি কর কাণ্ডকে নিয়ে জনসাধারণের প্রতিবাদ মিছিলকে ঘিরে এবং জুনিয়র ডাক্তারদের প্রতিবাদ মিছিলকে ঘিরে নানা মন্তব্য করেছিলেন রাজ্যের শাসকদল তৃণমূলের সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। যেই কারণে বারংবার তিনি খবরের শিরোনামে উঠে এসেছিলেন। এমনকি মাঝেমধ্যেই তাঁর মেজাজ হারানোর অনেক ঘটনাই ঘটতে দেখা গিয়েছে এর আগে। তবে সম্প্রতি কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় এক বৈঠকে রীতিমত মেজাজ হারিয়ে ভেঙে ফেলেন কাচের জলের বোতল। কাটলেন হাত।
ঘটনাটি কী?
সূত্রের খবর, গত মঙ্গলবার ওয়াকফ বিল সংক্রান্ত একটি যৌথ কমিটির বৈঠক হয়েছিল। সেদিন বিজেপি সাংসদদের সঙ্গে, বিশেষ করে অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে তীব্র তর্কাতর্কিতে জড়িয়ে পড়েছিলেন কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। পরিস্থিতি এতটাই ভয়ংকর হয়ে পড়েছিল যে হাতাহাতির পরিস্থিতি তৈরি হয়। শেষে চরম উত্তেজনার মধ্যে, কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় একটি কাচের জলের বোতল টেবিলে মেরে ভেঙে ফেলেন। এদিকে ওই বোতলেরই ভাঙা কাঁচে তাঁর নিজেরই হাত কেটে যায়।
কেন হল এমন ঘটনা?
জানা যায় কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বুড়ো আঙুল ও তর্জনীতে আঘাত লেগেছে। আর এই প্রসঙ্গে রীতিমত ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে বিজেপি সাংসদরা। তাঁদের অভিযোগ, কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বোতলটি জেপিসির চেয়ারম্যান তথা বিজেপি সাংসদ জগদম্বিকা পালের দিকে ছুঁড়ে মারার চেষ্টা করেছিল। আসলে ওইদিন বিজেপি সাংসদ, জগদম্বিকা পালের সভাপতিত্বে এই কমিটি গঠন করা হয়েছে। ওয়াকফ বিল সম্পর্কে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এবং আইনজীবীদের একটি দলের মতামত শুনছিল সেই কমিটি। কিন্তু বিরোধীদের পক্ষ থেকে বিল বিষয়ে নানা আপত্তি জানানো হয় কল্যাণের পক্ষ থেকে। আর তারপরেই শুরু হয় বাক-বিতন্ডা। এর পর যৌথ সংসদীয় কমিটির ১টি বৈঠক থেকে কল্যাণকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেয় কমিটি।
স্পিকারকে চিঠি পাঠালো বিজেপির তিন সাংসদ!
বৈঠকে সেদিন রক্তাক্ত অবস্থায় রীতিমত চাঞ্চল্যকর পরিস্থিতির তৈরি হয়। এই ঘটনার পর, দ্রুত কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিকিৎসার করাতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে ৬টি সেলাই পড়ে তাঁর হাতে। জেপিসির সদস্য বিজেপির তিন সাংসদ— অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়, নিশিকান্ত দুবে এবং অপরাজিতা সারঙ্গি স্পিকারকে চিঠি লিখে কল্যাণের বিরুদ্ধে সংসদীয় বিধির ৩১৬বি(এ) ধারায় লোকসভার এথিক্স কমিটিকে তদন্ত এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করার নির্দেশ দেওয়ার অনুরোধ করেছেন।
সেই চিঠিতে বিজেপির অভিযোগ, “কল্যাণ যে আচরণ করেছেন তা সংসদীয় শালীনতার সঙ্গে একদমই মানানসই নয়। তিনি যে কাজ করেছেন তাতে আরও ভয়ানক কিছু ঘটতে পারত। এই ঘটনার জন্য তাই কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়কে সাসপেন্ড করা উচিত।” তবে এই ঘটনাটি নিয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া দেননি কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। শুধু একটি কথাই সাংবাদিকদের তিনি জানিয়েছেন আর সেটি হল ধর্মনিরপেক্ষতা বিরোধী শক্তির বিরুদ্ধে দলের লড়াই জারি থাকবে।