শ্বেতা মিত্র, কলকাতাঃ আমাদের দেশে বহু মানুষের লাইফলাইন হল রেলপথ। এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যাওয়ার দ্রুত মাধ্যম ট্রেন। বিমানে ওঠা সবার পক্ষে সম্ভব না। ট্রেনেই ভরসার উপায়। কম খরচের মধ্যে চলে যাওয়া যায় দেশের যে কোনও প্রান্তে। সময়ের সঙ্গে ভারতীয় রেল আগের থেকে অনেক উন্নত হয়েছে। রেল স্টেশন থেকে শুরু করে যাত্রীদের বসার আসন পর্যন্ত সব কিছুই এখন আধুনিক। তবে এই ট্রেন ব্যবস্থা একদিকে যেমন সকলের ভরসার জিনিস হয়ে উঠেছে। আবার অনেক ক্ষেত্রে এই রেলকে নিয়ে মানুষের বিরক্তি শেষ নেই।
এমনও অনেক সময় দেখা গিয়েছে বহু ট্রেন এমন আছে যেগুলি ঘন্টার পর ঘন্টা লেট চলেছে। এমনকি কিছু ট্রেনও আছে ২৪ ঘন্টা অবধি দেরিতে চলেছে। তবে আজকের এই প্রতিবেদনে এমন একটি ট্রেনকে নিয়ে আলোচনা করা হবে যেটি কিনা সাড়ে তিন বছর প্লেট ছিল।
সাড়ে তিন বছর লেট ছিল এই ট্রেন
এখন আপনিও ভাবছেন যে সাড়ে তিন বছর একটা ট্রেন কিভাবে লেট থাকতে পারে? শুনতে অবাক লাগলেও এটাই দিনের আলোর মতো সত্যি। ভারতীয় রেলের ইতিহাসে এমনই একটি কালো সময় রয়েছে যেখানে একটি ট্রেন সাড়ে তিন বছর দেরিতে নিজের গন্তব্যস্থলে পৌঁছেছিল। নিশ্চয়ই ভাবছেন সেই ট্রেনটির নাম কী? তাহলে বিশদে জানতে চোখ রাখুন আজকের এই আর্টিকেলটির ওপর।
লেট লতিফ কাকে বলে সেটি একটি ট্রেন বুঝিয়ে দিয়েছে সকলকে। এমনিতে ভারতীয় রেলে ট্রেন ৯ থেকে ১০ ঘন্টা লেট হওয়া কোন বড় কিছু ব্যাপার থাকে না। কিন্তু আজকে আমরা যে ট্রেনের কথা বলতে চলেছি তা কয়েক ঘণ্টা বা কয়েক দিনের জন্য নয়, কয়েক বছরের জন্য দেরি করেছিল। এই ট্রেনটি ২০১৪ সালে চলা শুরু করেছিল এরপর সেটি ২০১৮ সালে এটি গন্তব্যে পৌঁছেছিল।
একটি ‘নিখোঁজ’ ট্রেনের গল্প
ট্রেনটির যে দূরত্ব অতিক্রম করতে সাধারণত ৪২ ঘণ্টা ১৩ মিনিট সময় লাগে, তা এই ট্রেন ৩.৫ বছরে সম্পন্ন হয়েছে। ২০১৪ সালের নভেম্বরে বিশাখাপত্তনম থেকে চলা মালগাড়িটি এতটাই দেরি হয়েছিল যে উত্তরপ্রদেশের গন্তব্য বস্তি স্টেশনে পৌঁছাতে সাড়ে তিন বছর সময় লাগিয়েছিল। আশ্চর্যের বিষয় হলো, এই দেরি হওয়ার কারণ কী তার রহস্য আজও অজানা। ট্রেন নম্বর ১৩৬১ মালবাহী ট্রেনটি ২০১৪ সালের নভেম্বরে বিশাখাপত্তনম থেকে ১৪০০ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে উত্তরপ্রদেশের বস্তি রেলওয়ে স্টেশনে পৌঁছায়। বস্তির ব্যবসায়ী রামচন্দ্র গুপ্তা তাঁর সার সরবরাহের জন্য রেলের এই মালগাড়ি বুক করেছিলেন। নির্ধারিত সময়ে মালগাড়িটি বিশাখাপত্তনম ছেড়ে যায়। সাধারণত এই বিশাখাপত্তনম বন্দরে বস্তির ১৪০০ কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রম করতে এই ট্রেনের প্রায় ৪২ ঘণ্টা সময় লাগত, কিন্তু ট্রেনটি নির্ধারিত সময়ে বস্তি পৌঁছায়নি।
মাথায় হাত ব্যবসায়ীর
২০১৪ সালের নভেম্বরে ট্রেনটি বস্তি স্টেশনে থেকে ট্রেন না পৌঁছলে ব্যবসায়ী রামচন্দ্র গুপ্তা রেলের দ্বারস্থ হন। ব্যবসায়ী জানান, তাঁর কয়েক লক্ষ টাকার সার সেই ট্রেনে ছিল। রেলের কাছে লিখিতভাবে একাধিক অভিযোগ জানানো হয়। যদিও রেলের গাফিলতির কারণে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। পথেই ট্রেনটি উধাও হয়ে যায়। বিশাখাপত্তনম থেকে পণ্যবাহী ট্রেনটি কোথায় গিয়ে অদৃশ্য হয়ে যায় তা কেউ জানতেও পারেনি। যদিও উত্তর-পূর্ব রেল জোনের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক সঞ্জয় যাদবের যুক্তি, ট্রেনের কামরা অসুস্থ হলে (পুরনো) হলে ইয়ার্ডে পাঠানো হয়, সম্ভবত এই ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটেছে। তবে এই রহস্য আজও সকলের অজানা।