শ্বেতা মিত্র, কলকাতাঃ কলকাতায় ট্রাম (Trams in Kolkata) পরিষেবা নিয়ে বিতর্ক যেন থামতেই চাইছে না। সাম্প্রতিক সময় কলকাতার বুক থেকে ট্রাম তুলে নেওয়ার সরকারি সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে পথে নেমেছিলেন অনেকেই। তা নিয়ে বারবার কলকাতা হাইকোর্টে মামলাও দায়ের হয়েছে। কিন্তু এসবের মাঝেই নতুন করে ট্রাম চলাচল শুরু হওয়ায় খুশি হয়ে গিয়েছিলেন ট্রাম যাত্রীরা। এদিকে নানা প্রতিবাদ হওয়া সত্বেও সকলকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম এক বড়সড় কথা বললেন যা অনেকের মধ্যেই ক্ষোভের সঞ্চার করেছে।
বড় মন্তব্য ফিরহাদ হাকিমের
কলকাতার রাস্তায় ট্রাম চলাচল ওই ট্রাম লাইন নিয়ে মন্তব্য করেছেন ফিরহাদ হাকিম। তিনি জানান, কলকাতার রাস্তা থেকে তুলে নেওয়া হতে পারে ট্রাম লাইন। তারপর সেই রাস্তা সংস্কার করা হবে। তবে সবটাই নির্ভর করছে আদালতের নির্দেশের উপর। তারপর পদক্ষেপ নেবে সরকার। আসলে শনিবার পুরসভায় ৪৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর বিশ্বরূপ প্রশ্ন তোলেন যে সমস্ত রুটে ট্রাম চলাচল করছে না সেখান থেকে কতদিনের মধ্যে ট্রাম ট্র্যাক তোলার কাজ করা হবে? ট্র্যাক তোলা ও রাস্তা মেরামতির কাজ কতদিনের মধ্যে শেষ করা হবে? এই প্রশ্নের জবাবেই পাল্টা জবাব দেন ফিরহাদ হাকিম।
সেইসঙ্গে তিনি আরও জানান, এসপ্ল্যানেড ও ময়দান হয়ে খিদিরপুরের মধ্যে সংযোগকারী ট্রাম লাইন ছাড়া বাকি সব ট্রাম ট্র্যাক সরিয়ে ফেলা হবে। রাজ্য সরকার শহর থেকে নিয়মিত ট্রাম পরিষেবা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়ে এগিয়ে যাবে। ঐতিহ্যের নিদর্শন হিসেবে ময়দান এলাকা দিয়ে এসপ্ল্যানেড ও খিদিরপুরের মধ্যে ট্রাম চলাচল করবে। কলকাতা পুরসভা ভবনে তৃণমূল কাউন্সিলর বিশ্বরূপ দে-র প্রশ্নের উত্তরে ফিরহাদ হাকিম বলেন, ধীরগতির ট্রাম গাড়ি শহরের রাস্তার জায়গা খেয়ে ফেলছে এবং যানজট তৈরি করছে। তিনি বলেন, যেসব এলাকা দিয়ে ট্রাম চলাচল করে সেগুলো অপরিকল্পিতভাবে করা হয়েছে। মোমিনপুর থেকে লালবাতি মোড়ের মধ্যবর্তী রেললাইন অত্যন্ত দুর্ঘটনাপ্রবণ জানিয়ে তিনি বলেন, অব্যবহৃত ট্র্যাক যা বাইক আরোহীদের জন্য হুমকি স্বরূপ।
ক্ষুব্ধ ট্রামপ্রেমীরা
এদিকে মেয়রের এই মন্তব্যের তীব্র সমালোচনা করেছে NGO PUBLIC৷ বিটুমিন দিয়ে ট্রামের ট্র্যাক ঢাকতে বাধা দেওয়ার জন্য কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন পাবলিক৷ এনজিওটি জমা জানিয়েছে যে ট্রাম ট্র্যাকের কারণে দুর্ঘটনার কোনও প্রমাণ নেই। ট্রাম প্রেমীরা আরও জানিয়েছেন যে ট্রামগুলি ট্র্যাফিককে ধীর করে দেয় তা দেখানোর জন্য কোনও প্রমাণিত দেওয়া হয়নি। অন্যদিকে ক্যালকাটা ট্রাম ইউজার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠাতা দেবাশিস ভট্টাচার্য বলেন, “ট্রামগুলিকে যেখানে সবুজ পরিবহণ হিসাবে বিশ্বব্যাপী পুনরুজ্জীবিত করা হচ্ছে, তখন সেখানে কলকাতায় ট্রামগুলিকে বন্ধ করার চেষ্টা করছে।”
উল্লেখ্য, গত সপ্তাহেই গড়িয়াহাট-শ্যামবাজার রুটে ট্রাম চলাচল শুরু হয়। পরিবহন দপ্তর সূত্রে জানা যায়, গড়িয়াহাট, বালিগঞ্জ ফাঁড়ি, গুরুসদয় রোড, বিড়লা স্কুল বেকবাগান, পার্ক সার্কাস, মল্লিক বাজার, ধর্মতলা কলেজ স্ট্রিট হয়ে ট্রামটি শ্যামবাজার যাবে।