প্রীতি পোদ্দার: বিরোধী দলগুলির পাশাপাশি এখন শাসকদলের মধ্যেও গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব খুব একটা নতুন নয়। দীর্ঘদিন ধরেই এই ধরনের খবর উঠে আসছে শিরোনামে। যার জেরে বেশ কয়েকটি এলাকায় শাসকদলের অন্দরে দেখা গিয়েছে তীব্র ভাঙন। যার মধ্যে অন্যতম হল হাড়োয়া এলাকা। তৃণমূল বিধায়ককে নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই নানা শোরগোল দেখা দিয়েছিল দলে। এবার কালীপুজোর রাতে বিধায়ককে মারধরের অভিযোগ উঠল নিজের দলের লোকেদের বিরুদ্ধে।
কয়েক মাস আগে মিনাখাঁর তৃণমূল বিধায়ক ঊষারানি মণ্ডলের বিজেপি ঘনিষ্ঠতা নিয়ে দলের মধ্যে বেশ জল্পনা তৈরি হয়েছিল। এমনকী তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভায় তাঁর অনুপস্থিতিও চোখে পড়েছিল অনেকেরই। যার জন্য তাঁর বিরুদ্ধে প্রচণ্ড ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন শাসকদলের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ঊষারানীর নাম নিয়ে কড়া বার্তা দিয়ে সভা থেকে বলেছিলেন, “তৃণমূলের বিধায়ক থাকবেন কিন্তু মিটিংয়ে আসবেন না, এটা চলবে না। যতক্ষণ না ক্ষমা চেয়ে পায়ে ধরবে, ততক্ষণ ঊষারানি মণ্ডলের সঙ্গে আমার কোনও সম্পর্ক নেই। আপনাদের মতো লোক আমরা চাই না।” আর সেই ক্ষোভের আগুন মিটতে না মিটতেই ভয়ংকর ঘটনা ঘটল গতকাল।
ক্ষোভের মাঝেই বিধায়কের উপর হামলা!
জানা গিয়েছে, গতকাল রাতে হাড়োয়া থানায় কালীপুজো হয়েছিল। সেখানে বিধায়ক এবং বিধায়ক স্বামীর নিমন্ত্রণ থাকায় গিয়েছিলেন তাঁরা। কিন্তু ফেরার সময়ই ঘটে বিপদ। বিধায়কের গাড়ি লক্ষ্য করে ইঁট ছোড়া হয়। শুধু তাই নয় বিধায়ককে গাড়ি থেকে টেনে নামিয়ে ব্যাটন দিয়ে মারা হয়। আক্রান্ত হয় তাঁর স্বামী মৃত্যুঞ্জয় মণ্ডলও। এই ঘটনায় সরাসরি আঙুল উঠছে তৃণমূল নেতৃত্বের দিকেই অভিযোগ তুললেন বিধায়কের স্বামী মৃত্যুঞ্জয় মণ্ডল।
বিধায়ককে ব্যাটন দিয়ে মার!
পঞ্চায়েত সমিতির সহ সভাপতি তথা তৃণমূল নেতা আব্দুল খালেক মোল্লার বিরুদ্ধে সরাসরি অভিযোগ তুলেছেন ঊষারানির স্বামী মৃত্যুঞ্জয় মণ্ডল। তিনি বলেন, “থানায় কালীপুজো হয়েছিল। সেখানে নিমন্ত্রণ ছিল আমাদের। সেখান থেকে বাড়ি ফিরছিলাম। হঠাৎ আব্দুল খালেক মোল্লার নেতৃত্বে ১০০-২০০ জন লোক আক্রমণ করে। বিধায়কের গাড়িতে ইঁট মারে ওরা। বিধায়ককে টেনে নামিয়ে ব্যাটন দিয়ে পায়ে মারা হয়। রক্তাক্ত হয়।” তবে শুধু বিধায়ক নন, তাঁর পাঁচ অনুগামীও আক্রান্ত হয়েছেন। হাসপাতালে ভর্তি সকলে। জানা গিয়েছে পুলিশের উপস্থিতিতেই এই আক্রমণের ঘটনাটি ঘটেছে।
সন্দেশখালিতে হামলা!
তবে শুধু হাড়োয়া নয়, কালীপুজোর রাতে সন্দেশখালির বিধায়ক সুকুমার মাহাতোকে লক্ষ্য করে দলের একাংশ হামলা চালিয়েছে বলে বড় অভিযোগ উঠে এল। এই ঘটনায় আঙুল উঠেছে হাটগাছি পঞ্চায়েতের উপপ্রধান তথা শাহজাহান ঘনিষ্ঠ আব্দুল কাদের মোল্লা বিরুদ্ধে। তাঁর দলবল নাকি হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ। অবশ্য এই ঘটনায় সম্পূর্ণ নাকচ করেন আব্দুল কাদের মোল্লা। তিনি বলেন, “বিধায়ক আইসিডিএস-এর হেল্পারের ইন্টারভিউতে প্রোমোশন দেওয়ার নাম করে টাকা চেয়েছেন। তারপর কাজ না হওয়ায় অনেকেই বিধায়কের অফিসে যান, তাঁদের ঢুকতে দেওয়া হয় না। এই সব ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে।”