বৈশাখী মণ্ডল, কলকাতাঃ ট্রেন নিয়ে খারাপ অভিজ্ঞতা সবার না থাকলেও কিছু মানুষের তো অবশ্যই রয়েছে। তার উপর ট্রেনের খাবার সাথে ট্রেনের বাথরুম এইসব নিয়েও অনেক খারাপ অভিজ্ঞতা আছে কিছু মানুষের। দুরপাল্লায় ট্রেনের যাতায়াতের সময় আসল যে সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় সেটা হলো অপরিষ্কার শৌচালয়। কখনও অভিযোগ করে সাথে সাথেই কাজ হয়, তো কখনো কমপ্লেন করেও লাভ বিশেষ হয়না। অনেকক্ষণ শৌচালয় না গিয়ে এতদূর যাওয়া সম্ভব না। আবার শৌচালয় এমন নোংরা অবস্থায় থাকে যে যাওয়ার উপায় নেই। এই অভিযোগের কারণেই জেলা ক্রেতা সুরক্ষা কমিশনের পক্ষ থেকে ভারতীয় রেলকে জরিমানা করা হল। মানুষকে শারীরিক ও মানসিক হেনস্থার জন্য ৩০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ করা হল রেলকে।
ট্রেনে উঠে খারাপ অভিজ্ঞতা
২০২৩ সালে পঞ্চান্ন বছরের ভি মূর্তি তার পরিবারের সদস্যের সাথে তিরুপতি থেকে দুভাসা ভ্রমণে বেড়িয়েছিলেন। প্রথমে তাদের রেল কর্তৃপক্ষ B7 কোচে বার্থ দেন। ট্রেন ছাড়ার পর তার ফোনে ম্যাসেজ আসে তাদের সিট বদলে 3E তে পরিবর্তন করা হয়েছে।
তারা তখনও ফোনের ম্যাসেজ অনুযায়ী নিজেদের সিট বদল করে নেন। তারপর ৩ এসিতে গিয়ে দেখেন শৌচালয় অবস্থা খুব খারাপ। সেখানে জল নেই। সাথে কল কাজ করছেনা। এদিকে রেলের কামরা অপরিচ্ছন্ন আবার এসিও ঠিকঠাক কাজ করছে না। এতোকিছু সমস্যা দেখার পর তিনি সাথে সাথে অনলাইনে অভিযোগ দায়ের করেন। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে রেলকর্মী এসে শৌচাগারের কল সারাই করে দিয়ে যান।
কিন্তু এমন খারাপ অভিজ্ঞতা নিয়ে তিনি অতিষ্ঠ হয়ে গন্তব্যে পৌঁছে রেল অফিসে অভিযোগ দায়ের করার চেষ্টা করেন। তার অভিযোগ রেল কর্তৃপক্ষ পুরোটা না শুনেই তাকে উল্টে হেনস্থা করে বলে যে, সে যা বলছে সবটাই মিথ্যা কথা। এবং রেল কর্তৃপক্ষের কাছে টাকা আদায় করার জন্য এই ব্যক্তি এমন মিথ্যা অপবাদ দিচ্ছেন। এই অপবাদ শুনেই ক্রেতা সুরক্ষা কমিশনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন ঐ ব্যক্তি।
রেলকে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা
বিশাখাপত্তনমের ডিস্ট্রিক্ট কনজিউমার ডিসপুটস রি অ্যাড্রেসাল কমিশনের বেঞ্চের পক্ষ থেকে ঐ মামলার শুনানি হয়। সেখানে যাত্রির অভিযোগ ও রেলের যুক্তি শোনার পর দক্ষিণ মধ্য রেলওয়েকে জরিমানা করা হয়। ট্রেনে যাত্রীর শারিরীক ও মানসিক হেনস্থার জন্য রেল কর্তৃপক্ষ যাত্রীকে ২৫ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দেবে সাথে মামলা খরচ বাবদ ৫ হাজার টাকা অতিরিক্ত।
কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয় একটা ট্রেনের টিকিটের সাথে ব্যবহার উপযুক্ত শৌচালয়, খাবার, পরিচ্ছন্ন রেল কামরা, সচল এসির মতো সাধারণ পরিষেবার মূল্য ধরা হয়ে থাকে। তাই রেল কর্তৃপক্ষ এই সকল পরিষেবা যাত্রীদের দিতে বাধ্য। অপরদিকে রেল কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে জানানো হয়েছে যে ঐ ব্যক্তির অভিযোগ তারা গ্রহণ করেছিলেন। যান্ত্রিক ত্রুটির কারণেই রেল শৌচাগারে জল আসছিলো না। এবং যাত্রীর অভিযোগের সাথে সাথেই রেলকর্মিরা গিয়ে সারাই করে দিয়েছিলেন। কিন্তু এই সাধারণ বিষয়ে গুলো কিভাবে ঠিকমতো না চেক করেই রেল চলছিলো, এই বিষয়ে নিয়েও কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হয় রেলওয়েকে।