প্রীতি পোদ্দার, কোলাঘাট: আবাস যোজনায় (Pradhan Mantri Awas Yojana) বাড়ি-বঞ্চনা নিয়ে রাজ্য জুড়ে ক্ষোভ-বিক্ষোভ দেখা যাচ্ছে। অনেক অযোগ্য ব্যক্তি আবাস যোজনার টাকা পেলেও যোগ্য ব্যক্তিরা বঞ্চিত হচ্ছে। আর এই আবহে যখন রাজ্যের তরফে চূড়ান্ত প্রাপক তালিকা তৈরির কাজ চলছে, তখনই একের পর এক ঘটনা ঘটতে দেখা যাচ্ছে। অনেকেই আবাস যোজনায় বাড়ি পেতে ‘ছলচাতুরি’-র অভিযোগ করছে। সম্প্রতি আরও একটি ঘটনা উঠে এল খবরের শিরোনামে।
ঘটনাটি কী?
জানা গিয়েছে গত রবিবার, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশানুসারে আবাস যোজনার তালিকা পুনরায় সমীক্ষা করার জন্য পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাশাসক কোলাঘাটের BDO কে নিয়ে ওই ব্লকের পুলশিটা গ্রাম পঞ্চায়েতের কুমারহাট গ্রামে গিয়েছিলেন। আর সেখানে যেতেই তাঁদের চোখে পড়েছে নানা বিচিত্র কাজকর্ম। অনেকের পাকা বাড়ি থেকে সত্ত্বেও মাটির ঘরে থেকে আবাসের টাকা পাওয়ার পরিকল্পনা করছে। সূত্রের খবর দেউলিয়া বাজার থেকে খন্যাডিহি যাওয়ার পিচরাস্তার ধারে কুমারহাট গ্রামে আবাস যোজনার অন্যতম উপভোক্তা জলধর মান্নার বাড়ি। পেশায় তিনি ক্ষৌরকার। তাঁর পিচ রাস্তার ধারে মার্বেল লাগানো একতলার মস্ত পাকা বাড়ি রয়েছে। আর সামনে রয়েছে একটি ছোট মাটির ঘর। যেটি কিনা সব সময় বন্ধ থাকে। কিন্তু অবাক করা বিষয় হল জলধর বাবুর পাকা বাড়ি থাকা সত্ত্বেও তিনি আবাসের টাকা পেতে ছোট মাটির ঘরে থাকা শুরু করেন। এবং নিজেকে কুঁড়েঘরের মালিক বলে জাহির করেন।
যোজনার টাকা পেতে পাকা বাড়ি ছেড়ে কাঁচা বাড়িতে!
আর এই গোটা ঘটনায় সার্ভের জন্য জেলাশাসক পূর্ণেন্দু মাজি এবং বিডিও অর্থ ঘোষ সুপার চেকিংয়ে জলধরবাবুর বাড়িতে হাজির হলেজলধরবাবু জেলাশাসকের সামনে জানান, কুঁড়েঘরের মালিক তিনিই। মস্ত পাকাবাড়ির সঙ্গে তাঁর নাকি কোনো সম্পর্ক নেই। তাঁর দুই ছেলে ভবতোষ ও শঙ্কর ওই পাকাবাড়ি বানিয়েছে। এবং বাবা ও মা- কে নাকি দুই ছেলে এবং ছেলে বৌ থাকতে দেয় না, তাই তাঁরা মাটির ঘরে থাকে। ওই কথা শোনার পরই জেলাশাসক জলধর ও তাঁর স্ত্রীকে আইনস্টেপ নেওয়ার কথার ও বলেন। পাশাপাশি জলধর বাবু কতটা সত্যিই কথা বলছে তা যাচাই করার জন্য আশেপাশের স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলেন। তাঁরা জেলাশাসকের কাছে আসল ঘটনা খুলে বলেন। তাঁরা জানান, পাকা বাড়িতেই গোটা পরিবার বসবাস করে। সামনের ওই বাড়ি বন্ধই থাকে। আবাস প্লাসের ভিজিটের জন্য সেই কুঁড়েঘরে তক্তপোশ পাতা হয়েছে।
যা শুনে মাথায় বাজ পড়ে জেলা শাসক এবং BDO এর। এরপরই ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে জলধরের নাম আবাস তালিকা থেকে কাটার জন্য BDO- কে নির্দেশ দেন DM। এদিকে নাম বাতিলের নির্দেশে জলধর বাবুর দুই ছেলে এলাকার শাসকদলের প্রতি অভিযোগ করে। তাঁরা জানান, ২০১৮ সালে সার্ভিস সময় আমাদের মাটির বাড়ি ছিল, বাড়িতে থাকা অসুবিধার কারণে আমরা ছোট বাড়ি বানিয়েছি। তখন স্থানীয় তৃণমূল উপপ্রধান আবাস যোজনা পাইয়ে দেওয়ার নাম করে টাকা চেয়েছিল কিন্তু সেটা দিতে পারিনি বলে এমন চক্রান্তের শিকার করা হয়েছে। যদিও সমস্ত অভিযোগ বৃত্তিহীন বলে দাবি করেন উপপ্রধান রবীন্দ্রনাথ মান্না।