প্রীতি পোদ্দার, কলকাতা: সরকারি স্কুলের একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের ট্যাব কেনার জন্য সরকারের তরফ থেকে তরুণের স্বপ্ন প্রকল্পের (Taruner Swapna Scheme) মাধ্যমে টাকা ছাত্রছাত্রীদের অ্যাকাউন্টে দেওয়া হয়। কিন্তু এই টাকা নিয়েই এবার শুরু হয়েছে প্রতারণা। দেখা যাচ্ছে কয়েকটি অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা অন্য অ্যাকাউন্টে চলে যাচ্ছে। আবার কারো অ্যাকাউন্টে টাকা দু’বার করে ঢুকছে। সারা রাজ্যজুড়েই ইতিপূর্বেই বিভিন্ন স্কুলের তরফে এমন অভিযোগ করা হয়েছে। শুরু হয়েছে তদন্ত। আর তদন্ত সূত্রেই জানা গিয়েছে এই কাণ্ডের পিছনে হাত রয়েছে সাইবার ক্যাফের মালিকদের।
তরুণ সাইবার বিশেষজ্ঞরাই মূল প্রতারক
সূত্রের খবর, ট্যাব দুর্নীতি কাণ্ডের পিছনে যে বা যারা এই কাজে যুক্ত রয়েছেন, তাঁদের মধ্যেই অনেকাংশই হল ‘তরুণ সাইবার বিশেষজ্ঞ’। আর সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হল এই দুর্নীতির পিছনে নাকি পাবজির মতো অনলাইন গেমের ভূমিকা অনেকখানি। একসময় এই পাবজির মত নেশাগ্রস্ত খেলা তরুণ প্রজন্মকে একেবারে অনলাইনে বুঁদ করে দিয়েছিল। এবার তাঁরাই নাকি অনলাইনের মাধ্যমে রাজ্য সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের টাকায় হাত দিতে চলেছে। আর এবার তাদের নজর ট্যাবের টাকার ওপর। তদন্তে নেমে বেশ কয়েক জনকে গ্রেফতার করার পর প্রাথমিক ভাবে এমনটাই ধারণা তদন্তকারীদের একাংশের।
জানা গিয়েছে, ট্যাব-কাণ্ডে রাজ্য জুড়ে এখনও পর্যন্ত ১১ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। আর সেই সকল অভিযুক্তদের মধ্যে বেশির ভাগই তরুণ এবং যুবক। তাঁদের মধ্যে আবার কেউ কেউ ছোট্ট একটা ‘ডেস্কটপ’ নিয়ে ঘুপচি ঘরে তৈরি করেছিলেন ‘অনলাইন সার্ভিস সেন্টার’। সেখানে বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের আবেদনপত্রের ফর্ম পূরণ, নির্দিষ্ট পোর্টালে আবেদনপত্র জমা দেওয়া, ট্রেন এবং উড়ানের টিকিট বুকিং এবং সস্তায় মোবাইলের সিম কার্ড বিক্রি ইত্যাদি কাজ করা হত। এই সমস্ত কাজ করতে গিয়ে প্রচুর মানুষের ব্যক্তিগত তথ্য হাতে পেয়েছিলেন তাঁরা। এর পর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট এবং আধার কার্ডের সেই সব তথ্যকে হাতিয়ার করে সাইবার অপরাধের দুনিয়ার প্রবেশ করেন ওই ‘অনলাইন সার্ভিস সেন্টার’-এর মালিকেরা।
লক্ষ্মীর ভান্ডারের টাকা হাতানোর পরিকল্পনা!
তদন্তে জানা গিয়েছে এই প্রতারকরা প্রায় দু’হাজার পড়ুয়ার ট্যাবের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এবং রাজ্য সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের টাকা হাতানোর কাজেও হাত দিয়েছিলেন তারা। নদিয়া এবং মুর্শিদাবাদ থেকে গতকাল রাত পর্যন্ত কারও গ্রেফতারির খবর না মিললেও ইসলামপুর এবং ফরাক্কায় মোট পাঁচটি এফআইআর দায়ের হয়েছে। অভিযুক্ত হিসাবে রয়েছে ১৭ জনের নাম। পুলিশের দাবি, তবে তাঁরা সকলেই পলাতক। ঐক্যশ্রী-প্রকল্পে উঠে এসেছিল রাজস্থান গ্যাং-এর যোগ। কিন্তু প্রশিক্ষিত ওই হ্যাকাররা প্রথম অপারেশনে ব্যর্থ হয়েছিলেন। তার পরে মহিলাদের প্রকল্প ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’-এর টাকা হাতানোর পরিকল্পনাও করে অভিযুক্তেরা। কিন্তু ‘সাইবার সিকিউরিটি’ ভাঙতে ব্যর্থ হন। শেষে ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’-এর পর ওই হ্যাকারদের কাছে ‘বড় অ্যাসাইনমেন্ট’ ছিল ‘তরুণের স্বপ্ন’ প্রকল্পে ট্যাবের টাকা।