প্রীতি পোদ্দার, কলকাতা: গরিব মানুষের জন্য আবাস যোজনার (Pradhan Mantri Awas Yojana) বাড়ির অর্থ বরাদ্দে কেন্দ্র সরকার এবং পশ্চিমবঙ্গ সরকারের মধ্যে সংঘাত অনেক দিন ধরেই হয়ে আসছে। অভিযোগ, প্রায় দুই বছর ধরে আবাস যোজনার জন্য বাংলাকে টাকা দিচ্ছে না কেন্দ্র। এই জন্য বঞ্চনা করছে বলে অভিযোগও তুলেছিল রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল সরকার। তাই আর কেন্দ্রের প্রতি ভরসা না রেখেই এবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আশ্বাস দিয়েছিলেন বাংলায় গরিব মানুষের বাড়ি তৈরির জন্য রাজ্য সরকার একাই আবাস যোজনায় তালিকাভুক্তদের জন্য টাকা দেবে।
আবাস যোজনায় বাড়ি তৈরির জন্য উপভোক্তাদের টাকা দেওয়ার কথা ঘোষণার পরেই সমীক্ষার উপর জোর দিয়েছে প্রশাসন। আর এদিকে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার টাকা নয়ছয়ের অভিযোগ এর পাশাপাশি উপভোক্তাদের তালিকা তৈরি নিয়েও বিতর্ক শুরু হয়েছে রাজ্যে। তাই শেষ পর্বে আরও একবার আবাস নিয়ে সমীক্ষা করতে চলেছে সরকার। রাজ্যের অন্য জেলাতে সমীক্ষার কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। সেই সমীক্ষাকে কেন্দ্র করে অনেক জায়গায় গোলমাল হচ্ছে। বচসা বাঁধছে নানা অভিযোগের ভিত্তিতে। আর এই আবহেই এবার আবাস যোজনায় কেন্দ্রের টাকা নিয়ে উঠে এল এক বিস্ফোরক তথ্য।
আবাস যোজনায় কেন্দ্রের টাকা নিয়ে উঠে এল বিস্ফোরক তথ্য
কেন্দ্রের বিরুদ্ধে বঞ্চনার অভিযোগ তুলে আবাস-খরচের ভার নিজের কাঁধে নিয়েছিল বটে রাজ্য সরকার। অথচ আবাস প্রকল্পের ‘স্টেট নোডাল অ্যাকাউন্টে’ এখনও নাকি পড়ে রয়েছে এই প্রকল্পের বিপুল পরিমাণ অর্থ। প্রশাসনিক কর্তাদের একাংশ জানাচ্ছেন, প্রকল্পের আসন্ন ব্যয়ভার মেটাতে এই টাকা কোনও ভাবেই ব্যবহার করতে পারবে না রাজ্য। কারণ, পড়ে থাকা ওই অর্থ আগের আবাস-পর্বের উপভোক্তাদের জন্য বরাদ্দ ছিল। যা খরচ হয়নি এত দিনেও। জানা গিয়েছে চলতি আর্থিক বছরে ওপেনিং ব্যালান্স ব্যাঙ্ক স্টেটমেন্টে রয়েছে প্রায় ২১৬৪ কোটি টাকা। তাতে প্রায় ১৯ কোটি টাকা সুদ জমা হওয়ায় এখন সেই টাকার পরিমাণ রয়েছে ২১৮৪ কোটির কিছু বেশি অর্থ। নিয়মমাফিক অল্প খরচের পরেও রাজ্যের ‘নোডাল অ্যাকাউন্টে’ রয়েছে প্রায় ২১৬০ কোটি টাকা।
কী বলছেন আধিকারিকরা?
আধিকারিকদের একাংশের তরফে জানা গিয়েছে, আবাস উপভোক্তাদের প্রতি জন মোট ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা করে পেয়ে থাকেন। একবারে সেই টাকা না দিয়ে কিস্তির মাধ্যমে দেওয়া হয় সেই টাকা। প্রথম কিস্তিতে ৬০, দ্বিতীয়তে ৪০ এবং তৃতীয় কিস্তিতে ২০ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়। তবে একটি কিস্তির টাকা ব্যবহারের প্রমাণ দেখাতে পারলে তবে পরের কিস্তির টাকা পাওয়া যায়। শেষ কিস্তির টাকা পাওয়ার প্রশ্নে বাড়ি সম্পূর্ণ হওয়ার প্রমাণ দাখিল করতে হয় সরকারের কাছে। তাই রাজ্যের প্রকল্পের খাতায় বিপুল অর্থ থেকে যাওয়ার অর্থ, এই কিস্তিগুলির অর্থ ব্যবহারই হয়নি।
এই বিষয়ে জেলা প্রশাসনের এক কর্তা জানিয়েছেন, “বেশির ভাগ ক্ষেত্রে প্রথম কিস্তির ৬০ হাজার টাকা পাওয়ার পরে অনেকে তা খরচ করে ফেলেছেন। ফলে দ্বিতীয় কিস্তির টাকা তাঁরা পাননি। সেটা জমে গিয়েছে। আবার যাঁরা দ্বিতীয় কিস্তি পর্যন্ত টাকা পেয়েছিলেন, তাঁরা প্রমাণ দাখিল করতে না পারায় তৃতীয় কিস্তির টাকা পাননি। তা-ও জমে রয়েছে সরকারের ঘরে।”