৬৯ হাজার কোটি টাকার রেশন নষ্ট, তবে নজির গড়ল বাংলা, প্রকাশ্যে ভয়াবহ পরিসংখ্যান

Published on:

fci report

প্রীতি পোদ্দার, কলকাতা: রেশন ব্যবস্থা নিয়ে একের পর এক বিতর্ক বেঁধেই চলেছে রাজ্য রাজনীতিতে। ইতিমধ্যেই রেশন দুর্নীতি মামলায় জেলবন্দী প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। আর এই আবহে রেশন সামগ্রী নিয়ে একটি সমীক্ষা রিপোর্ট তৈরিতে জোর দিল কেন্দ্রীয় সরকার। উঠে এল এক চাঞ্চল্যকর তথ্য। তা নিয়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক।

মাঝপথেই নষ্ট হচ্ছে ২৮ শতাংশ শস্য

WhatsApp Community Join Now

সম্প্রতি কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে হাউসহোল্ড কনজাম্পশন এক্সপেনডিচার সার্ভে বা সমীক্ষা করা হয়েছে। আসলে এই সমীক্ষার মাধ্যমে জানা যায় ২০২২ এর আগস্ট থেকে ২০২৩ এর জুলাই পর্যন্ত FCI অর্থাৎ ফুড কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়া গোডাউন থেকে কতটা চাল–গম বেরিয়েছে এবং তার কত শতাংশ সাধারণ মানুষের কাছে ঠিকঠাক পৌঁছেছে তার একটি পরিসংখ্যান করা হয়। আর ওই রিপোর্ট সূত্রেই এক বিস্ফোরক তথ্য উঠে এসেছে। জানা গিয়েছে, রেশনে বিলি করার জন্যে FCI থেকে যে খাদ্যশস্য সরবরাহ করা হয় তার অন্তত ২৮ শতাংশ মাঝপথে নষ্ট হয়। এবং এর আর্থিকমূল্য প্রায় ৬৯ হাজার কোটি টাকা।

শুধু তাই নয় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে রেশনের খাদ্য সামগ্রী এইভাবেই নষ্ট হচ্ছে। এমনকি খাদ্য সামগ্রী সংরক্ষণের অভাবও দেখা গিয়েছে। তবে সেই রিপোর্টে এক উল্লেখযোগ্য বিষয় উঠে এসেছে। জানা গিয়েছে দেশের বাকি রাজ্যের তুলনায় পশ্চিমবঙ্গে অনেক কম খাদ্যশস্য নষ্ট হয়েছে। শুধু তাই নয় খাদ্য সংরক্ষণে এগিয়ে বাংলা। জানা গিয়েছে সংরক্ষণের অভাবে এক বছরে সারা দেশে প্রায় ২০০ লক্ষ টন খাদ্যশস্য নষ্ট হয়। যার মধ্যে বিজেপি শাসিত উত্তরপ্রদেশে এক বছরে প্রায় ৩৩.৪ শতাংশ খাদ্যশস্য নষ্ট হয়েছে। এবং বিহারে নষ্ট হয়েছে ১৯.২ শতাংশ। কিন্তু এদিক থেকে বাংলায় মাত্র ৯ শতাংশ নষ্ট হয়েছে ফসল। তাই এদিক থেকে বাংলার সাফল্য হিসাবেই দেখছেন শাসকদলের একাংশ।

কী বলছেন খাদ্যমন্ত্রী?

রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী রথীন ঘোষ এই বিষয়ে জানান, “মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে রাজ্যের খাদ্য সরবরাহ ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন ঘটেছে। চালু হয়েছে ডোর স্টেপ ডেলিভারি। সমস্ত রেশন দোকানে ই–পস মেশিন, ইলেকট্রনিক ওজন যন্ত্র এবং আই স্ক্যানার বসানো হয়েছে। স্টেট ওয়্যারহাউসিং কর্পোরেশনের মাধ্যমে গোডাউনগুলিকে আধুনিক করা হয়েছে। গোডাউনে কতটা মাল ঢুকছে আর কতটা বেরোচ্ছে তার উপরে সর্বক্ষণ নজরদারি চলছে।” এছাড়াও তিনি আরও বলেন, “ই–পস মেশিন বসানোর পর থেকে রেশন ডিলারদের কাছে কতটা মাল পড়ে থাকছে, সেটাও সহজেই জানা যাচ্ছে। তার পরেই মাল পাঠানো হচ্ছে। সে জন্যে আগের মতো আর খাদ্যশস্য নষ্ট হচ্ছে না।’

আর এই আবহে সিপিএম কে বিঁধতে ছাড়লেন না তৃণমূলের মুখপাত্র অরূপ চক্রবর্তী। তিনি এই রেশন শর্টেজ নিয়ে কটাক্ষ করে বলেন, ‘বাম আমলে বলা হতো ইঁদুর খেয়ে নিয়েছে। তাই মাল শর্টেজ হচ্ছে। আসলে কারা খেত সবাই জানে!’ তবে রেশন ব্যবস্থায় রাজ্যের বিরুদ্ধে বড় অভিযোগ তুলল অল ইন্ডিয়া ফেয়ারপ্রাইস শপ ডিলার্স ফেডারেশনের সম্পাদক বিশ্বম্ভর বসু। তিনি দাবি করেন, ‘হ্যান্ডলিং লস কমাতে গিয়ে পকেট থেকে মোটা অংকের টাকা খসছে রেশন ডিলারদের। যেখানে চাল গমের ক্ষেত্রে কুইন্টাল প্রতি ৬২৫ গ্রাম এবং চিনির ক্ষেত্রে ৭৮০ গ্রাম হ্যান্ডলিং লস পেতেন ডিলাররা। সেখানে ২০২২ সালে কুইন্টাল প্রতি ২০০ গ্রাম করে হ্যান্ডলিং লস ঘোষণা করা হয়। এইভাবেই স্টক ঠিক রাখা হচ্ছে।’

সঙ্গে থাকুন ➥
X