প্রীতি পোদ্দার, সম্ভল: উত্তরপ্রদেশের সম্ভলের শাহি জামা মসজিদের জায়গাতেই নাকি আগে ছিল মন্দির! এমনই দাবি করেছিল কেলা দেবীর মন্দির কমিটি। সেই কারণে গত ১৯ নভেম্বর সেই মন্দির কমিটির তরফে চনদৌসির একটি আদালতে মামলা রুজু করা হয়। মামলাকারীদের দাবি ছিল, সম্ভলের শাহি জামা মসদিজ আসলে শ্রী হরিনাথ মন্দির। যা সম্রাট বাবরের শাসনকালে, ১৫২৯ সালে মসজিদে রূপান্তরিত করা হয়। গোটা ঘটনার ভিত্তিতেই সেই সময় মসজিদের ভিডিওগ্রাফি সমীক্ষার নির্দেশ দেন বিচারক। সেদিন থেকেই ধীরে ধীরে উত্তেজনা বাড়ছিল গোটা এলাকাজুড়ে।
মসজিদ সমীক্ষা করতে গিয়ে বড় বিপত্তি
বিচারকের নির্দেশ মত গত মঙ্গলবার একটি দল মসজিদে সমীক্ষাটি করতে গিয়েছিল। কিন্তু সেখানে বাধার মুখে পড়েন তাঁরা। এরপর গতকাল অর্থাৎ রবিবার ফের নতুন করে সমীক্ষা শুরু করতে যায় তাঁরা। তাই সকাল ৭টা ৩০ নাগাদ এলাকায় উপস্থিত হয় সমীক্ষার দায়িত্বে থাকা দল। সেখানে ছিলেন জেলাশাসক রাজেন্দ্র পানসিয়া, পুলিশ সুপার কৃষ্ণ বিষ্ণোই, মহকুমাশাসক বন্দনা মিশ্রা, সার্কেল অফিসার অনুজ চৌধুরি এবং তহসিলদার রবি সোনকার-সহ অন্যান্যরা। গতদিনের মত যাতে এই দিনেও সমীক্ষা কাজে কোনো বাধা না আসে তা নিশ্চিত করতে পুলিশের বিরাট বাহিনী এবং ব়্যাপিড অ্যাকশন ফোর্সের সদস্যদের আগে থেকেই এলাকায় মোতায়েন করা হয়েছিল। কিন্তু তা সত্ত্বেও সমীক্ষা শুরু হতেই এলাকা অশান্ত হয়ে ওঠে।
ঘটনায় ৩ জনের মৃত্যু
পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাথর ছুড়তে থাকে সেখানকার জনতার একাংশ। হামলাকারীদের কেউ কেউ গুলিও চালায় বলে অভিযোগ উঠছে। আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয় পুলিশের গাড়িতে। বারংবার মসজিদের প্রধান জনতাকে শান্ত হতে বললেও কেউ শোনেনি। শেষ পর্যন্ত কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে পুলিশ। পরে জানা যায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। জখম কমপক্ষে ৩০ জন পুলিশ কর্মী। পরিস্থিতি সামাল দিতে এরপর এলাকায় আসে অতিরিক্ত পুলিশ বাহিনী। আটক করা হয় ২১ জনকে। ঘটনাস্থলে পৌঁছন মোরাদাবাদের ডিআইজি।
জেলা ম্যাজিস্ট্রেট রাজেন্দর পেনসিয়া জানিয়েছেন, দেশীয় পিস্তল থেকে গুলি লেগে মৃত্যু হয়েছে দুজনের। তৃতীয় ব্যক্তির মৃত্যুর কারণ এখনও জানা যায়নি। তবে ইতিমধ্যেই অশান্তির ঘটনায় আটক করা হয়েছে ২১ জনকে। তাদের মধ্যে রয়েছেন দুই মহিলাও। জাতীয় সুরক্ষা আইনের আওতায় তাদের আটক করা হয়েছে। অন্যদিকে, মোট ৩০ জন পুলিশকর্মী আহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে একজনের মাথায় গুরুতর চোট লেগেছে। আর তাই গোটা ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণে আনতে বড় পদক্ষেপ নিল প্রশাসন। বন্ধ হল ইন্টারনেট পরিষেবা এবং স্কুলও।