প্রীতি পোদ্দার, মুম্বই: গত শনিবার নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী জানা গিয়েছে ১৩২টি আসনে জিতেছে বিজেপি। ৫৭টি আসনে জিতেছে একনাথ শিন্ডের শিবসেনা। ৪১টি আসনে জিতেছে অজিত পাওয়ারের এনসিপি। ২০টি আসনে জিতেছে উদ্ধব ঠাকরের শিবসেনা। ১৬টি আসনে জিতেছে কংগ্রেস। ১০টি আসনে জিতেছে শরদ পাওয়ারের এনসিপি। যার ফলে স্বভাবতই প্রশ্ন উঠছে যে কে হবে মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী। এরই মধ্যে আরও একটি নতুন রাজনৈতিক জল্পনা সামনে উঠে এসেছে। আর সেটি হয়, মহারাষ্ট্রে বিধানসভা ভোটের ফলাফল বেরোনোর পরে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করা হতে পারে।
কারণ গত ২৩ নভেম্বর বিধানসভা ভোটের ফলাফল প্রকাশের পরে ২৫ নভেম্বরের মধ্যে ২৮৮টি আসন বিশিষ্ট মহারাষ্ট্রে নতুন সরকার গঠনের কাজ শেষ করতে হবে৷ কারণ ওই দিনই শেষ হচ্ছে বর্তমান ‘মহায়ুতি’ সরকারের কার্যকালের মেয়াদ৷ ফলে ২৬ নভেম্বরের মধ্যে নতুন সরকার গড়ার কাজ শেষ না হলে সাংবিধানিক সঙ্কট তৈরি হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
রাষ্ট্রপতি শাসনের সম্ভাবনা
দেশের সংবিধানে রাজ্যগুলিতে বিধানসভা নির্বাচন করানো ও সরকার গঠনের ক্ষেত্রে কোনও ভাবেই ৫ বছরের মেয়াদ পেরোবে না। অর্থাৎ সাধারণ পরিস্থিতিতে কোনও নির্বাচিত সরকারের মেয়াদ ৫ বছর ১ দিন হবে না। সে জন্যই মহারাষ্ট্রে সরকার গঠন সেরে ফেলতে হবে ফল প্রকাশের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে। তবে ওই ৪৮ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি হলেও নির্বাচনের ফলাফল বৈধই থাকবে। তখন রাষ্ট্রপতির নির্দেশে রাজ্যপাল নতুন সরকার গঠন না হওয়া পর্যন্ত মেয়াদ–উত্তীর্ণ সরকারকে ‘কেয়ারটেকার’ সরকার চালিয়ে যেতে বলতে পারেন ও নয়া সরকার গঠনের নির্দিষ্ট সময়সীমা দিতে পারেন বলে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
তবে এই ধরনের ঘটনা ঘটলেও অবাক হওয়ার কিছুই নেই। কারণ গত এক দশকে মহারাষ্ট্রে রাষ্ট্রপতি শাসনের দুটি ঘটনা ঘটেছিল। এক ২০১৪ সালে, ২৮ সেপ্টেম্বর থেকে ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত মোট ৩২ দিনের জন্য রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করা হয়েছিল। অপরদিকে ২০১৯ সালে, ১২ নভেম্বর থেকে ২৩ নভেম্বর পর্যন্ত মোট ১১ দিনের জন্য আরোপ করা হয়েছিল। মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দেবেন্দ্র ফড়নবিশ এবং উপ-মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে অজিত পাওয়ারের গোপন শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানের কয়েক মিনিট আগে রাষ্ট্রপতি শাসন প্রত্যাহার করা হয়েছিল। তবে এবার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পরেও একনাথ শিন্ডে মহারাষ্ট্রের তত্ত্বাবধায়ক মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে থাকবেন।
সূত্রের খবর, আজই মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিতে চলেছেন একনাথ শিন্ডে। গতকাল গভীর রাতে এক্স হ্যান্ডেলে ইঙ্গিতপূর্ণ পোস্ট করেছিলেন শিন্ডে। সেখানে শিন্ডে লেখেন, “আমি আপনাদের ভালোবাসা পেয়ে আপ্লুত। কিন্তু অনুগামীদের কাছে আমার আবেদন, বর্ষা নিবাস হোক বা অন্যত্র, কোথাও যেন শিবসেনা সমর্থকরা আমার হয়ে সমর্থনে প্রচার বা জমায়েত না করেন। মহারাষ্ট্রের উন্নতির জন্য দাপটের সঙ্গে কাজ চালিয়ে যাবে মহাজোট।”
তত্ত্বাবধায়ক মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে শিন্ডে!
রাজভবন পরিদর্শন করে রাজ্যপাল রমেশ বাইসের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেবেন এবং বাইস, কনভেনশন অনুসারে, পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রীর শপথ না নেওয়া পর্যন্ত তাকে “তত্ত্বাবধায়ক মুখ্যমন্ত্রী” হিসাবে চালিয়ে যেতে বলা হবে। তবে তত্ত্বাবধায়ক মুখ্যমন্ত্রীর ভূমিকায় থাকাকালীন, একনাথ শিন্ডে কোনো বড় সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন না। এদিকে মহারাষ্ট্রের পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে নাম উঠে আসছে বিজেপি নেতা দেবেন্দ্র ফড়নবীশ এর নাম। তবে এই সমস্যা নির্মূল করতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ আজই মুম্বই সফর করবেন এবং সেখানে নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। তখনই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন তিনি। এরপর আগামী তিন-চার দিনের মধ্যে ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান হতে পারে।