প্রীতি পোদ্দার, শিলিগুড়ি: বছরভর একের পর এক অভিযোগে বিদ্ধ রাজ্য সরকার। কখনও গরু, কাঠ কিংবা কয়লা পাচার তো আবার কখনও রেশন দুর্নীতি, নিয়োগ দুর্নীতিতো রয়েছেই। আর আবহেই এক ভয়ংকর তথ্য সামনে উঠে এল। এবার পরমাণু বোমা তৈরিতে ব্যবহ্ত মৌল ক্যালিফোর্নিয়ামের হদিশ মিলল তৃণমূল নেত্রীর বাড়িতে। ঘটনাটি ঘটেছে সম্প্রতি শিলিগুলি শহরের অদূরে অবস্থিত নকশাল বাড়িতে। জানা গিয়েছে দেশবিরোধী কার্যকলাপে যুক্ত সন্দেহে বেলগাছি চা বাগান থেকে ফ্রান্সিস এক্কা নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করল সেনাবাহিনী।
ঘটনাটি কী?
পুলিশ ও সেনাবাহিনী সূত্রে জানা গিয়েছে, গত মঙ্গলবার রাতে সেনাবাহিনীর ত্রিশক্তি কর্পসের গোয়েন্দাকর্তারা, কেন্দ্রীয় বিপর্যয় মোকাবিলা দল ও দার্জিলিং জেলা পুলিশের অন্তর্গত পানিঘাটা ফাঁড়ির পুলিশ যৌথ অভিযান চালিয়ে নকশালবাড়ির বেলগাছি চা বাগান থেকে ফ্রান্সিস এক্কা নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে সেনাবাহিনী। অভিযোগ, ধৃত ব্যক্তি বেশ কিছু দিন ধরেই নাকি দেশবিরোধী কার্যকলাপে যুক্ত রয়েছে। উদ্ধার করা হয়েছে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ নথি। এছাড়াও তাঁর বাড়ি থেকে ক্যালিফোর্নিয়াম নামে এক ধরণের তেজস্ক্রিয় পদার্থ মিলেছে।
পাঁচ দিনের জন্য হেফাজতে পেয়েছেন গোয়েন্দারা
সেনা সূত্রে জানা গিয়েছে, আন্তার্জাতিক বাজারে প্রতি গ্রাম ক্যালিফোর্নিয়ামের মূল্য প্রায় ১৭ কোটি টাকা। তবে এই ক্যালিফোর্নিয়াম উদ্ধার মাস তিনেক আগে বিহার থেকেও পাওয়া গিয়েছিল। যেই কারণে তিনজন ধরা পড়েছিল। ফ্রান্সিসকে রাতে জিজ্ঞাসাবাদের পরই পানিঘাটা ফাঁড়ির পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। বৃহস্পতিবার ফ্রান্সিসকে কার্শিয়াং আদালতে হাজির করানো হয়। বিচারকের নির্দেশে ধৃতকে পাঁচ দিনের জন্য নিজেদের হেফাজতে পেয়েছেন গোয়েন্দারা। এদিকে এই ঘটনায় আরেক উল্লেখযোগ্য তথ্য উঠে এসেছে। ধৃত ফ্রান্সিস আসলে নকশালবাড়ির তৃণমূলের পঞ্চায়েত সমিতির সদস্যা অমৃতা এক্কার স্বামী। আর ফ্রান্সিস নিজে কার্শিয়াং বন বিভাগের চুক্তিভিত্তিক কর্মী।
তেজস্ক্রিয় পদার্থ ক্যালিফোর্নিয়াম উদ্ধার
সেনাবাহিনী সূত্রে জানা গিয়েছে, ঘণ্টাখানেকের অভিযানে ধৃতের বাড়ি থেকে ‘ডিফেন্স রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন’-এর বেশ কিছু নথি উদ্ধার হয়েছে। এর ফলে অনুমান করা হচ্ছে ওই সব নথি পাচারের চেষ্টা করছিলেন ফ্রান্সিস। তবে বাড়ি থেকে ক্যালিফোর্নিয়াম উদ্ধার হওয়ায় ‘স্তম্ভিত’ গোয়েন্দারা। অমৃতা এবং ফ্রান্সিস বেলগাছি চা-বাগানের স্থায়ী শ্রমিক ছিলেন। এর পর গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে পঞ্চায়েত সমিতির ভোটে তৃণমূলের টিকিটে লড়েছিলেন অমৃতা। এরপর চা বাগানের কাজ ছেড়ে দিলেও চা বাগানের কোয়ার্টারেই থাকছিলেন তাঁরা। কিন্তু ধৃতের কাছে ওইসব গোপন জিনিস কীভাবে এল? খতিয়ে দেখছে পুলিশ। এনিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোর।