প্রীতি পোদ্দার, কলকাতা: রাজ্যের যেকোনো আপত্তিকর এবং বেআইনি কর্মকাণ্ডে বরাবর রাজ্য সরকারকে কাঠগড়ায় তুলেছে আদালত। রেশন দুর্নীতি থেকে শুরু করে শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি, সমস্ত ঘটনাতেই শাসকদলের দাপুটে নেতার ঘুষ নেওয়ার মত ঘটনা আদালতে বারংবার উঠে এসেছে। যার জেরে এখনও জেল খাটতে হচ্ছে বেশ কয়েকজন। তবে সম্প্রতি থানার এএসআই অভিযোগকারীর কাছ থেকে ২ লাখ টাকার ক্ষতিপূরণ চেয়েছে বলে অভিযোগ।
ঘটনাটি কী?
জানা গিয়েছে, রাজারহাট গোপালপুরের বাসিন্দা ইমাদুল বিশ্বাস জানিয়েছেন যে জমি সংক্রান্ত বিবাদের সমাধান খুঁজতে তিনি বাগুইআটি থানায় গিয়েছিলেন। কিন্তু সেখানে তাঁকে অযথা হেনস্থা করা হয়। এমনকি বাগুইআটি থানার এএসআই এমডি রেজাউল সুরক্ষা দেওয়ার নাম করে আবেদনকারীর কাছ থেকে দু’লক্ষ টাকা ঘুষ চেয়েছেন বলে অভিযোগ করেন। যা অত্যন্ত আইন বিরুদ্ধ কাজ হওয়ায় তিনি পুলিশের বিরুদ্ধে বাধ্য হয়ে অভিযোগ নিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন। আর এই মামলায় অভিযোগকারীর হয়ে মামলা লড়ছেন আইনজীবী তরুণজ্যোতি তিওয়ারি।
কাঠগড়ায় রাজ্য পুলিশ
অভিযোগ আদালতে বিচারাধীন হলে পুলিশের ভূমিকায় ক্ষুব্ধতা প্রকাশ করে কলকাতা হাইকোর্ট (Calcutta High Court)। এমনকি পুলিশকে তীব্র ভর্ৎসনা করেছেন বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ। আদালতের পর্যবেক্ষণ, ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ধারাগুলি সঠিক জানেন না ASI মধুসূদন বাগ। তিনি আবেদনকারীকে দিয়ে ৩৫(৩) ধারায় মুচলেকা লিখিয়ে নিয়েছেন, যা তিনি আইনত করতে পারেন না। আর এই ভিত্তিতে বিচারপতি ঘোষ প্রশ্ন তোলেন, ‘‘এক জন ASI বিএনএসএস ৩৫(৩) ধারায় কীভাবে মুচলেকা লিখিয়ে নিলেন? কেন থানায় তলব করে তথ্য চাওয়া হল না? তার পরিবর্তে কেন মুচলেকার নোটিস দেওয়া হল?’’
পাশাপাশি এই ঘটনায় বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেটের অধীনে সমস্ত থানাকে পর্যাপ্ত ধারা প্রয়োগের বিষয় অবগত করার নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। সেই সঙ্গে নোটিসের গঠন নতুন করে তৈরি করতে বলা হয়েছে। এবং উভয় পক্ষের বক্তব্য শুনে বিচারপতি ঘোষ জানান, জমি বিবাদের কারণে কোনও পক্ষকে যাতে হেনস্থার শিকার হতে না হয়, তা নিশ্চিত করবেন পুলিশের উচ্চপদস্থ আধিকারিকেরা। আবেদনকারীকে অযথা থানায় তলব করা যাবে না। অন্যদিকে অপর একটি ঘটনায় পূর্ব বর্ধমানের ভাতার থানার ভূমিকার সমালোচনাও করেছেন তিনি।
জানা গিয়েছে, পূর্ব বর্ধমানের ভাতার থানা এলাকায় বাড়িওয়ালার বিরুদ্ধে বেআইনি ভাবে জোর খাটিয়ে ভাড়াটিয়াকে তুলে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। পাশাপাশি এলাকার দুষ্কৃতীদের সাহায্য নিয়ে তাঁদের দোকান থেকে তুলে দেওয়া হয়। তার পর ভেঙে ফেলা হয় বাড়ি। গোটা ঘটনায় পুলিশের মদত ছিল বলেও আদালতে দাবি করেছেন ওই তিন জনের আইনজীবী পিকে ভট্টাচার্য। আর সেখানেও পুলিশের ভূমিকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিচারপতি ঘোষ।