প্রীতি পোদ্দার, কলকাতা: কলকাতা সহ রাজ্যের একাধিক জেলার মেডিকেল কলেজগুলিতে অধ্যাপক চিকিৎসকদের ‘ফাঁকিবাজি’ নিয়ে বহু অভিযোগ উঠে এসেছে। কিন্তু স্বাস্থ্য দপ্তর কোনও পদক্ষেপ করেনি। তবে স্বাস্থ্য দপ্তর এই নিয়ে বিভিন্ন সময়ে বৈঠকে স্বাস্থ্য দপ্তরের সচিব-সহ প্রশাসনের শীর্ষ কর্তারা বার বার জানিয়েছেন, রাজ্যে কোনওভাবেই সরকারি হাসপাতাল বা মেডিক্যাল কলেজে রোগী পরিষেবাকে অবহেলা করা বরদাস্ত করা হবে না। আর এই আবহেই সেই সিদ্ধান্তের পথই এবার বাস্তবে রূপান্তরিত হতে চলেছে। ৩১ জন সিনিয়র ডাক্তারদের বিরুদ্ধে নেওয়া হল বড় পদক্ষেপ।
২০ লক্ষ টাকা অবিলম্বে মিটিয়ে দেওয়ার নির্দেশ
জানা গিয়েছে বন্ডের নিয়ম না মানায় শাস্তির মুখে পড়েছেন ৩১ জন সিনিয়র রেসিডেন্ট ডাক্তার। অভিযোগ তাঁরা নাকি বন্ড পোস্টিং নিয়ম মেনে গ্রামের হাসপতালে যেতে অস্বীকার করেছেন। আর এবার তাই এই ৩১ জন সিনিয়র ডাক্তারদের বন্ড পোস্টিংয়ের জন্য ২০ লক্ষ টাকা অবিলম্বে মিটিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করল স্বাস্থ্য ভবন। সেই বিজ্ঞপ্তিতে ওই সিনিয়র রেসিডেন্ট ডাক্তারদের নাম, কোন কলেজে বন্ড পোস্টিংয়ে আছেন এবং যে সব মেডিক্যাল কলেজে তাঁরা যুক্ত বিজ্ঞপ্তিতে সেসব জানানোর পাশাপাশি বিষয়টি জানানো হয়েছে সংশ্লিষ্ট মেডিক্যাল সুপারিটেন্ডেন্ট কাম ভাইস প্রিন্সিপাল অর্থাৎ এমএসভিপিদেরও। এবং এই ব্যাপারে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়েছে যে, ওই ২০ লক্ষ টাকা একবারে ফেরত দিতে হবে।
উঠে এসেছে একাধিক সিনিয়র রেসিডেন্ট ডাক্তারদের নাম
সূত্রের খবর, যে সিনিয়র রেসিডেন্টদের নাম তালিকায় রয়েছে তাঁদের মধ্যে বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজ, বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ, উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ, পুরুলিয়া মেডিক্যাল কলেজের পাশাপাশি কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ, এন আর এস, আর জি করের সিনিয়র রেসিডেন্ট ডাক্তাররাও রয়েছেন। আর সরকারি বিজ্ঞাপ্তিতে পরিষ্কার জানিয়ে দেওয়া হয়েছে যে এঁরা কোন কোন সময়ে কী কী কারণে রোগী পরিষেবায় অবহেলা করেছেন। এবং সিনিয়র রেসিডেন্ট হিসেবে যাঁরা বন্ড পোস্টিংয়ে রয়েছেন তাঁরা কী কাজ করছেন, বাইরে কোথায় কতক্ষণ কাজ করছেন।
যদিও এই চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে এমন শাস্তির বিজ্ঞপ্তি জারির আগে তাঁদের নাকি দু’বার সতর্ক করা হয়েছিল। ২০২২ সাল থেকেই তাঁদের জানিয়ে দেওয়া হয়, মাথার উপরে ঝুলছে শাস্তির খাঁড়া। এবার যেন তাঁরা সতর্ক হন। এমনকি তাঁদের অন্য বিভাগে কাজ করার নির্দেশও দেওয়া হয়। কিন্তু সেই সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলির তরফে তাঁদের জানিয়ে দেওয়া হয় তাঁদের প্রয়োজন নেই। এই বিষয়টি কিন্তু ওই চিকিৎসকরা কর্তৃপক্ষকে জানাননি। ফলত রাজ্যের স্বাস্থ্য দপ্তর পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রায় আড়াই হাজার সিনিয়র রেসিডেন্ট ডাক্তারদের মধ্যে থেকে ৩১ জনকে বেছে নেয় যাঁদের বিরুদ্ধে কাজে চরম গাফিলতির অভিযোগ রয়েছে।
প্রসঙ্গত, এই ঘটনার মাধ্যমে রাজ্য সরকার ওই উল্লেখিত ৩১ জন চিকিৎসকের বিরুদ্ধে যে শাস্তির ব্যবস্থা করেছে, তার পিছনে এক মূল উদ্দেশ্য অন্তর্ভুক্ত করেছে। আর সেটি হল ভবিষ্যৎ এ যেন এমন ধরনের ঘটনা আর না ঘটে। যে সকল চিকিৎসক সরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত থেকে রোগী পরিষেবায় অবহেলা করবে সেই সকল চিকিৎসকদের আর রেয়াত করা হবে না।