প্রীতি পোদ্দার, কলকাতা: এর আগে আদালতে বিচারাধীন অবস্থায় ফৌজদারি মামলা চলাকালীন অনেকেই আদালতের অনুমতি নিয়েই বিশেষ যাত্রা করেছিলেন। তাঁদের মধ্যে যেমন রাজনৈতিক নেতা রয়েছেন তেমনই বিনোদন জগৎ এর বিশিষ্ট ব্যক্তিরাও ছিলেন। নির্দিষ্ট এবং সঠিক কারণ আদালতে দেখিয়ে কোনদিন কোনও ব্যক্তির বিদেশযাত্রায় বাধা দেওয়া যেতে পারে না বলে আগেই জানানও হয়েছিল হাইকোর্টের তরফে। কিন্তু এবার সেই নির্দেশে খানিক গাফিলতি দেখাল আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস।
ঘটনাটি কী?
সূত্রের খবর, আমেরিকায় থাকা এক যুবকের জন্য যে পাত্রী পছন্দ করেছিল তার পরিবার, সেই যুবতীর বাড়ি বিহারে। গত বছর ১৭ জানুয়ারি ওই পাত্রী বিহার থেকে এসে যুবকের প্রেমিকা এবং তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে চুরি ও মারধরের মামলা করেন বেনিয়াপুকুর থানায়৷ সেই মামলাটি শিয়ালদহ কোর্টেও ওঠে। কিন্তু গত বছরের অক্টোবরে তরুণী এবং তাঁর পরিবারকে বিনা শর্তে জামিন মঞ্জুর করে আদালত। তার পরই আমেরিকার ভিসার জন্য আবেদন করেছিলেন তরুণী। কিন্তু আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস ভিসার অনুমতি দেয়নি। তাই এবার ভিসার অনুমতি চেয়ে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হলেন ওই তরুণী।
অভিযোগে জানানো হয়ে যে তিনি প্রেমিকের কাছে আমেরিকায় যাবেন বলে ভিসার আবেদন করেছিলেন। কিন্তু আমেরিকার দূতাবাস থেকে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয় যে নিয়ম অনুযায়ী ভিসা পেতে একটি পুলিশি ছাড়পত্র বা পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট থাকা প্রয়োজন। যেটি ভারতীয় পাসপোর্ট অফিস থেকে দেওয়া হবে। তাই তরুণী পাসপোর্ট অফিসে যোগাযোগ করেন। কিন্তু ওই ছাড়পত্র তাঁকে দেওয়া যাবে না বলে জানিয়ে দেয় আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস। কারণ হিসেবে বলা হয়, ওই তরুণীর বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা রয়েছে। সেটি বিচারাধীন। ফলে ছাড়পত্র দেওয়া যাবে না। তাই সেই কারণে এবার শিয়ালদহ আদালতের দ্বারস্থ হন তরুণী।
বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দেয় মন্ত্রক
এই মামলায় হাই কোর্টের নির্দেশে বিচারক প্রথম দিকে একটি নির্দেশনামায় জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল যে, ওই তরুণীর বিদেশে যেতে কোনও বাধা নেই। কিন্তু তরুণীর অভিযোগ, এর পরেও পুলিশ বা পাসপোর্ট অফিসের সঙ্গে যোগাযোগ করে কোনও লাভ হয়নি। তরুণীর আইনজীবী শারওয়ার জাহান এবং বিনয় সাউ জানান, তাঁদের মক্কেলের বিদেশযাত্রায় হাইকোর্ট সদর্থক পদক্ষেপ করেছে। কিন্তু তার পরেও অনুমতি মিলছে না। গতকাল অর্থাৎ বুধবার এই মামলাটি আদালতে উঠল সংশ্লিষ্ট মামলার শুনানিতে বিচারপতি জয় সেনগুপ্তের পর্যবেক্ষণ, গুরুতর মামলায় জড়িত এমন অনেককেই বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দেয় মন্ত্রক। সেখানে একটি মামলাকে কেন ব্যতিক্রম হিসাবে দেখা হল, সেটাই বিস্মিত করেছে আদালতকে।
রিপোর্ট পেশ করার নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্টে
বিচারপতির আরও পর্যবেক্ষণ, “প্রেমিকার বিরুদ্ধে থাকা অভিযোগের চেয়ে অনেক বেশি গুরুতর ধারায় অভিযুক্তরা বিদেশযাত্রা করেছে।” প্রসঙ্গত আদালতের এই পর্যবেক্ষণের পর কেউ কেউ মনে করিয়ে দিচ্ছেন, তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বা রাজ্য তৃণমূলের অন্যতম সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষের মতো রাজনৈতিক এবং প্রভাবশালী ব্যক্তির মামলাও বিচারাধীন। তাঁরাও বিদেশে গিয়েছেন। কেউ চিকিৎসার কারণে, কেউ বা ব্যক্তিগত প্রয়োজনে। তবে সকলেই আদালত এবং তদন্তকারী সংস্থার অনুমতি নিয়েই বিদেশে গিয়েছেন। তাই, এবার গত এক বছরে ফৌজদারি মামলায় বিচারাধীন কতজন ব্যাক্তি বিদেশে গিয়েছে, পাসপোর্ট কতৃপক্ষের কাছে তার স্পষ্ট রিপোর্ট জানতে চাইল হাইকোর্ট ৷ আগামী ১৫ দিনের মধ্যে ওই রিপোর্ট পেশ করার নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট ৷