প্রীতি পোদ্দার, কলকাতা: বছরের পর বছর শিক্ষক নিয়োগ (Teacher Recruitment) হলেও সরকারি মাধ্যমিকে সহকারী শিক্ষকদের চাকরি স্থায়ী হচ্ছে না। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর ও মন্ত্রণালয়ের টানাপোড়েন এবং কর্মকর্তাদের সদিচ্ছার অভাবে সব বিধি-শর্ত পূরণ করেও চাকরি স্থায়ী করতে ব্যর্থ হচ্ছেন শিক্ষকরা। এবার সেই একই ছায়া দেখা গেল প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষকদের নিয়োগে। যা এবার সরাসরি হাইকোর্টে গিয়ে পৌঁছল।
নিয়োগ হলেও স্থায়ী পদ মিলছে না শিক্ষকদের
অভিযোগ উঠছে বেশ কয়েকদিন ধরে। প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ হলেও শিক্ষকদের স্থায়ী পদ দেওয়া হচ্ছে না বা অনেক দেরিতে দেওয়া হচ্ছে বলে অনেকেই অভিযোগ জানিয়েছে। ‘প্রবেশন পিরিয়ড’- ই থেকে যাচ্ছে। এর ফলে প্রাপ্য সুযোগ-সুবিধা থেকে অনেক সময়েই বঞ্চিত হচ্ছেন তাঁরা। বদলি বা কোনও সুবিধা চাইলে অহেতুক সমস্যা তৈরি হচ্ছে। দিনের পর দিন এই সমস্যা এবার সরাসরি মোকাবিলা করতে হাইকোর্টে এর বিরুদ্ধে ওঠে মামলা। আর সেই মামলায় এবার রাজ্যের প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করল হাইকোর্ট। প্রাথমিক শিক্ষকদের স্থায়ীকরণে এই বিলম্ব নিয়ে রাজ্যের অবস্থান কোথায় তা এবার জানতে চান কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি।
এদিন বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসু রাজ্যের এজি কিশোর দত্তকে এজলাসে ডেকে পাঠান। সেখানে প্রাথমিক নিয়োগের গোটা বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন বিচারপতি বসু। এই বিষয়ে কোনও নীতি তৈরি করা যায় কি না, তা নিয়ে এজির বক্তব্য জানতে চেয়েছে হাই কোর্ট। এজি জানিয়েছেন, বিষয়টি সংশ্লিষ্ট আধিকারিকের থেকে সবটা জেনে পরের শুনানিতে জানাতে পারবেন। বিষয়টি নিয়ে কোনও নীতি তৈরি করা যায় কি না তা প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সচিবের থেকেও জানতে বলেছেন বিচারপতি।
ক্ষোভ উগরে দেওয়া হল রাজ্য সরকারের প্রতি
এদিনের মামলায় পাল্টা সওয়াল করেন আইনজীবী ফিরদৌস শামিম এবং রীতিমত রাজ্য সরকারকে কাঠগড়ায় তোলা হয়। তাঁর বক্তব্য, ‘‘জেলা প্রাথমিক স্কুল কাউন্সিল এর তরফ থেকে নির্দিষ্ট সময়ে চাকরিতে স্থায়ীকরণ করা হলেও ওই কাউন্সিল গঠনের একটি প্রক্রিয়া রয়েছে। কিন্তু এখন অনেক জেলায় প্রক্রিয়া মেনে কাউন্সিল গঠন হয়নি। এদিকে প্রাথমিকের স্কুলে চাকরিতে স্থায়ীকরণ নিয়ে সমস্যা থাকার পাশাপাশি স্থায়ী শিক্ষকদের বদলি নিয়ে দুর্নীতি হচ্ছে। সব মিলিয়ে এই পুরো দুর্নীতির পিছনে হাত রয়েছে রাজ্য সরকারের।’’
পোর্টাল খোলার উপদেশ আদালতের
একই অসন্তোষ প্রকাশ করল কলকাতা হাই কোর্ট। বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসু এই বিষয়ে পরামর্শ দেন যে, রাজ্য এই নিয়ে একটি সুস্পষ্ট নীতি তৈরি করুক। এটা দীর্ঘ দিন চলতে পারে না। আদালত চায়, আগামী দিনে যেন প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষকদের সমস্ত তথ্য জানিয়ে একটি নয়া পোর্টাল খোলা হোক। যেখানে এক জন প্রাথমিক শিক্ষক কবে চাকরিতে যোগ দিয়েছেন, তাঁর শিক্ষাগত যোগ্যতা কী, কোন বিষয়ের তিনি শিক্ষক, তাঁর ঠিকানা ইত্যাদি তথ্য সম্পূর্ণ রেকর্ড হিসেবে নথিভুক্ত হবে। আর এই গোটা প্রক্রিয়ার দায়িত্ব নেবে রাজ্য সরকার।