পার্থ সারথি মান্না, কলকাতাঃ পার্লামেন্টে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের ভীমরাও রামজি আম্বেদকর প্রসঙ্গে করা মন্তব্যের জেরে হুলুস্থূল কাণ্ড। আজ অৰ্থাৎ বৃহস্পতিবার সরকার ও বিরোধীপক্ষের মধ্যে ব্যাপক পরিমাণে ধস্তাধস্তি শুরু হয় যার ফলে আহত দুই বিজেপি সাংসদ প্রতাপ সারঙ্গী ও মুকেশ রাজপুত। বর্তমানে দিল্লির এক হাসপাতালে আইসিইউতে ভর্তি রয়েছেন তাঁরা।
পার্লামেন্ট ধুন্ধুমার, আহত দুই বিজেপি সাংসদ
যেমনটা জানাযাচ্ছে, সংসদ ভবনের মকর দ্বারের কাছেই ধাক্কা খেয়ে পড়ে যান প্রতাপ সারঙ্গী। অভিযোগ বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী এক সাংসদকে ধাক্কা মেরে গায়ের উপরে এসে পড়েন। এর ফলে মাথায় আঘাত পেয়েছেন তিনি। এরপর সকলে মিলে তাকে ধরে নিয়ে ফেলে দেখা যায় মাথা ফেটে রক্তক্ষরণ হচ্ছে।
হাসপাতালের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, ‘দুজনেই আপাতত আইসিইউতে ভর্তি রয়েছেন। সিটি স্ক্যান করা হয়েছে ও চিকিৎসা চলছে। প্রতাপ সারঙ্গীর মাথা ফেটে রক্তক্ষরণ হওয়ার ফলে ডাক্তারদের সেলাই করতে হয়েছে।
আম্বেদকরকে নিয়ে অমিত শাহের মন্তব্য
গত মঙ্গলবার রাজ্যসভায় সংবিধানের ৭৫ বছর নিয়ে বিতর্ক হয়। সেখানেই অমিত শাহ বলেন, এখন ফ্যাশন হয়ে গেছে আম্বেদকর, আম্বেদকর, আম্বেদকর, আম্বেদকর…। এতবার ভগবানের নাম নিলে ৭ জন্মের জন্য স্বর্গ লাভ হয়ে যেত।’ এরপরেই আম্বেদকরের প্রতি অবমাননার অভিযোগ তুলে সরব হয় কংগ্রেস সহ বাকি বিরোধী সাংসদেরা। এর জেরেই বৃহস্পতিবার চরমে ওঠে সংঘাত। এদিন নীল পোশাকে রাহুল গান্ধী, মল্লিকার্জুন খাড়গে সহ INDIA সমর্থক সাংসদেরা অমিত শাহের পদত্যাগের দাবি তুলে আন্দোলন করেন পার্লামেন্ট চত্বরে।
কে এই প্রতাপ সারঙ্গী?
বিজেপি নেতা প্রতাপ সারঙ্গী বর্তমানে ওড়িশার বালাসোরের সাংসদ। তবে শুরুতে আধ্যাত্মিকতার দিকেই বেশি ঝোঁক ছিল তাঁর, তাই একসময় রামকৃষ্ণ মঠের সন্ন্যাসীও হতে চেয়েছিলেন। পরবর্তীতে পড়াশোনা শেষে বালাসোরের নীলগিরি কলেজে হেড ক্লার্কের চাকরিও করতেন তিনি। তবে এরপর এক সময় রাজ্য স্তরের রাষ্ট্রীয় স্বয়মসেবক সংঘ (RSS) সদস্য হিসাবে রাজনীতিতে প্রবেশ করেন।
ওড়িশা বিধানসভা থেকে দুবারের জন্য সাংসদ নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি একবার ২০০৪ – ২০০৯ পর্যন্ত ও তারপর ২০০৯ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত। তবে ২০১৪ সালের লোকসভা ভোটে হেরে যান। ২০১৯ সালেই তাকে ক্ষুদ্র ও ক্ষুদ্র উদ্যোগ ও পশুপালন, দুগ্ধ ও মৎস প্রতিমন্ত্রী হিসাবে নির্বাচিত হন। একাল বিদ্যালয় বা একক শিক্ষক স্কুলের দ্বারা রাজ্যের প্রাইমারি শিক্ষা ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আনার জন্যও পরিচিত তিনি।
তবে, অতীতে একবার বিতর্কে জড়িয়েছিলেন প্রতাপ সারঙ্গী। ১৯৯৯ সালে ওড়িশায় মিশনারি গ্রাহাম স্টুয়ার্ট স্টেইনস ও তার দুই ছেলেকে পুড়িয়ে মারার অভিযোগ ওঠে বজরং দলের উপর। সেই সময় বজরং দলের রাজ্য সভাপতি থাকায় প্রতাপ সারঙ্গীর বিরুদ্ধেও খুনের মামলা দায়ের হয়েছিল। মামলায় দারা সিংহের যাবজ্জীবন জেল হয় আর মুক্তি পেয়ে যান প্রতাপ সারঙ্গী।