প্রীতি পোদ্দার, নয়া দিল্লি: রাজ্যের সাধারণ নাগরিকদের পরিষেবা প্রদানের সময় অনেক টাকায় খরচ করতে হয়। সেটা সরকারি কোনো স্কিম হোক কিংবা কোনো পরিষেবা। কিন্তু সেই সুবিধা প্রদান করতে গিয়েই এবার বেজায় চাপে পড়তে চলেছে রাজ্য সরকার। সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন রাজ্যে বিনামূল্যে বিদ্যুৎ ও পরিবহণ বা কৃষি ঋণ মকুবের মতো ‘খয়রাতি প্রকল্প’ নিয়ে সতর্ক করল রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া (Reserve Bank of India)।
কী কারণে ভর্তুকি খাতে বরাদ্দ বাড়ছে?
সূত্রের খবর, আজ অর্থাৎ শুক্রবার, বাংলার খয়রাতি প্রকল্পকে কেন্দ্র করে ‘এ স্টাডি অব বাজেটস অব ২০২৪-২৫’ শীর্ষক রিপোর্টে RBI জানিয়েছে, এই অর্থবর্ষের বাজেটে পশ্চিমবঙ্গ সরকার সহ বাকি কিছু রাজ্যের সরকার বেশ কিছু কৃষি ঋণ মকুবের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পাশাপাশি রাজ্যের সাধারণ মানুষ এবং কৃষি ব্যবস্থার ক্ষেত্রে বিনামূল্যে বিদ্যুৎ, প্রদান করার পাশাপাশি প্রদান করা হয়েছে নিখরচার পরিবহণ ব্যবস্থা। সঙ্গে রাজ্য সরকার বেকার যুব সম্প্রদায় এবং মহিলাদের ভাতাও দেওয়া হচ্ছে। এর ফলে অনেক অর্থ চলে যাচ্ছে খয়রাতি খাতে। তাই সেই খাতের নিয়ন্ত্রণ আনার জন্য RBI ভর্তুকি খাতে বরাদ্দ কমানোর নির্দেশ দিয়েছে। পাশাপাশি রাজ্যের উন্নয়নের কাজে যাতে টাকার অভাব না হয় সেদিকেও খেয়াল রাখতে বলেছে প্রশাসনকে।
তবে শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয়, দেশের বিভিন্ন রাজ্যে সতর্ক করেছে RBI বা রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া। বিনামূল্যে বিদ্যুৎ ও পরিবহণ বা কৃষি ঋণ মকুবের মতো কাজ নিয়ে সতর্ক করা হয়েছে। কারণ রিপোর্টে বারংবার উঠে আসছে যে এই ধরনের কাজে অর্থ বরাদ্দের ফলে রাজ্যের জরুরি খাতে খরচের ক্ষমতা কমছে আর এই কারণে মাটিতে লুটোপুটি খাচ্ছে সামাজিক এবং আর্থিক পরিকাঠামো উন্নয়ন। তবে শুধু নেতিবাচক ফলাফল নয়, রাজ্যের প্রতিটি সরকারের জন্য বেশ কয়েকটি ইতিবাচক কথাও প্রকাশ্যে এসেছে RBI এর তরফ থেকে।
রাজকোষের ঘাটতি কমাতে সক্ষম রাজ্য সরকারগুলো
হিসেবের পরিসংখ্যান অনুযায়ী জানা গিয়েছে ২০২১-২২, ২০২২-২৩ এবং ২০২৩-২৪ সাল পর্যন্ত টানা তিন বছরে সামগ্রিক ভাবে রাজকোষ ঘাটতি ৩ শতাংশের নীচে রেখেছে প্রতিটা রাজ্য। এমনকি ২০২২-২৩ এবং ২০২৩-২৪ সালে রাজস্ব ঘাটতি ধরে রাখা গিয়েছে জিডিপি-র ০.২ শতাংশে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই বেড়েছে রাজ্যগুলির মূলধনী ব্যয়ের ক্ষমতা। এবং ২০২১ সালের মার্চের জিডিপি-র ৩১ শতাংশের তুলনায় এ বছর মার্চে ২৮.৫ শতাংশে গিয়ে নেমেছে। তবে রাজ্যগুলির খয়রাতি প্রকল্পকে ভালো করে নজরদারি করতে বলেছে প্রশাসন।
পাশাপাশি, দেশের সংস্থাগুলির তরফে অ্যাডভান্স ট্যাক্স পেমেন্ট দিনে দিনে অনেকটাই বেড়ে যাওয়ায় এবার বড় চাপের মুখে পড়েছে ব্যাঙ্কের ভাঁড়ারে। এরই পাশাপাশি দেশের বাণিজ্য ঘাটতির উত্তরোত্তর বাড়ার ফলে এবং টাকার তুলনায় ডলারের বিনিময়-দর সর্বকালীন রেকর্ডে পৌঁছে যাওয়ায়, অদূর ভবিষ্যতে দেশের ব্যাঙ্কগুলিতে ক্যাশ ডেফিসিট আরও বাড়বে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।