প্রীতি পোদ্দার, কলকাতা: রাজ্যে একের পর এক দুর্নীতি যেন আঠার মত লেগেই রয়েছে। যতই ঝাড়া হোক না কেন ঠিক আবার জুড়ে যাচ্ছে। খবরের শিরোনামে বারংবার উঠে আসছে ভুয়ো পাসপোর্টে, ভুয়ো নথির মত নানা চক্র। আর এবার খবরের শিরোনামে উঠে এল ডিগ্রী ছাড়াই ডাক্তার সেজে বাবা ও ছেলে জমিয়ে চিকিৎসা ব্যবসা করছে নিজের বাড়িতে ক্লিনিক খুলে। শিহরিত স্থানীয় বাসিন্দারা।
ঘটনাটি কী?
বর্ধমানের লক্ষ্মীপুরে নীল রঙের একটি তিনতলা বাড়ির নিচে বেসমেন্টে একটি ক্লিনিক এর হদিশ পাওয়া যায়। সেখানে চিকিৎসক হিসেবে বোর্ডে দেখা যায় একে প্রসাদ ও ডিকে দীপকের নাম লেখা রয়েছে। এছাড়াও একে প্রসাদের নামের পাশে ‘জেনারেল ফিজিশিয়ান’ এবং ডিকে দীপকের নামের ‘এমবিবিএস’ লেখা রয়েছে। এছাড়াও, ভিজিটিং কার্ডে নামের পাশে লেখা থাকে এমবিবিএস চিকিৎসক। কিন্তু দু’জনের কেউই অবশ্য ডাক্তারি পাশ করেননি। জমিয়ে বাড়িতে ডাক্তারির ‘ব্যবসা’ করছেন। সম্পর্কে তাঁরা বাবা-ছেলে। গতকাল অর্থাৎ শুক্রবার এই ভুয়ো চিকিৎসাচক্র বন্ধ করতে তাই এবার হাতে নাতে পাকড়াও করা হল এই দুই চিকিৎসককে। জানা গিয়েছে আজই আদালতে তোলা হবে এই দুই ধৃতকে।
জেল থেকে ছাড়া পেলেও ফের দুর্নীতি
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বহু বছর ধরে বাবা ও ছেলে এই কাণ্ড ঘটিয়ে চলেছে। তিন তলা এই নীল বাড়িটিই ছিল ধৃতদের। আর এই ক্লিনিকের উল্টোদিকেই রয়েছে একটি ওষুধের দোকান যেটি কিনা পরিচালনা করেন ছোট ছেলে। শুক্রবার পুলিশ গিয়ে দেখতে পায় ওই ক্লিনিকে চিকিৎসার বিভিন্ন সরঞ্জাম রাখা রয়েছে। এর আগে ২০১৭ সালে একুকরণে গ্রেফতার করা হয়েছিল বাবা ছেলেকে ভুয়ো চিকিৎসা করানোর জন্য। কিন্তু পরে ছাড়া পেয়ে গেলেও আবার জমিয়ে ডাক্তারি শুরু করেন তাঁরা। জেরে ধৃত একে প্রসাদ জানান তাঁর পুরো নাম অশোককুমার প্রসাদ। তিনি আগে একটি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানে সহকারীর কাজ করতেন। এরপরই তাঁর ছেলে বাড়ির নীচে এই ক্লিনিক চালু করে।
অভিযোগ জানায় স্থানীয়রা
এছাড়া তিনি আরও বলেন যে ক্লিনিক খোলার পর থেকে ছেলের ক্লিনিকেই কাজ করেন তিনি। রোগী দেখতেন বলে দাবিও করেছেন। যদিও তাঁর নামের পাশে চিকিৎসক কেন লেখা রয়েছে এই বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে তিনি কোন সদুত্তর দিতে পারেননি। পাশাপাশি তিনি জানান যে ছোট থেকে বিহারে পড়াশোনা করেছেন। এবং সেখানেই কলেজে পড়াশোনা শেষ করে সিএমএস, সিডিপি বা কমিউনিটি মেডিকেল সার্ভিস সংক্রান্ত ডিগ্রী অর্জন করেছেন বলে দাবি করেন তিনি। কিন্তু তাঁদের চিকিৎসাক্ষেত্রে আসল ডিগ্রী কী সেটা পাড়ার কোনো সদস্যই ঠাহর করতে পারেনি।
স্থানীয়দের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে কোনো ডিগ্রী বা সঠিক কাগজ ছাড়াই বাবা ও ছেলে ক্লিনিক বানিয়ে রোগীদের ভর্তি রাখছেন এবং মোটা অর্থ উপার্জন করেছেন। রীতিমত চিকিৎসার মতো মহান পেশাকে পারিবারিক ব্যবসায় পরিণত করেছেন বাবা-ছেলে। অবশেষে এই ভুয়ো কর্মকাণ্ড নিয়ে স্থানীয়রা জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের কাছে লিখিত অভিযোগ জানায়। আর তার পরেই নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। আর সেই ভিত্তিতে গতকাল অর্থাৎ শুক্রবার পুলিশ গিয়ে তদন্ত করে।