প্রীতি পোদ্দার, কলকাতা: গত ৯ আগস্ট আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের মহিলা চিকিৎসক খুন ও ধর্ষণ হন। আর তারপর থেকেই চর্চায় বারে বারে উঠে আসছে আরজি কর কাণ্ড। সেই সময় তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুনের অভিযোগের প্রতিবাদে ফুঁসে উঠেছিল গোটা বাংলা। কিন্তু ঘটনার মোড় ঘুরে যায়। প্রায় তিনমাসের মাথায় এই ঘটনায় জামিন পেয়ে যান আরজি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ ও টালা থানার ওসি অভিজিৎ মণ্ডল। তার অন্যতম কারণ, সঠিক সময়ে চার্জশিট পেশ করতে পারেনি CBI। আর তার জেরেই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। তাইতো গত বৃহস্পতিবার নতুন করে তদন্তের দাবিতে হাই কোর্টের দ্বারস্থ হন নির্যাতিতার বাবা-মা।
তদন্তের একাধিক প্রশ্ন এখনও অধরা
এইমুহুর্তে আরজি কর হাসপাতালের মহিলা চিকিৎসক খুন এবং ধর্ষনের মামলার ট্রায়াল পর্ব চলছে। কিন্তু ট্রায়াল পর্বে কিছুতেই মিটছে না ধন্দ। একাধিক প্রশ্নের জবাব এখনও পাচ্ছে না নির্যাতিতার বাবা মা। তাদের বক্তব্য, অনেক প্রশ্নের উত্তর অধরাই রয়ে গিয়েছে ওই তদন্তকারী সংস্থার তদন্তে। ওই বিষয়গুলি আবার তদন্তের আওতায় নিয়ে আসুক CBI। আর তাই সেই কারণে কলকাতা হাই কোর্টে মামলা দায়ের করেছেন নির্যাতিতার বাবা-মা। এবং সিবিআইকে মামলায় যুক্ত করার নির্দেশ দেন বিচারপতি। নির্যাতিতার পরিবারের দাবি, গত ৯ আগস্ট আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের মহিলা চিকিৎসক খুন ও ধর্ষণ এর দিন রাতে প্রথমে ফোন আসে যে তাঁদের মেয়ে অসুস্থ। পরে পরিবারকে বলা হয়, তাদের মেয়ে আত্মহত্যা করছে। আর এদিন ফোন করেছিলেন হাসপাতালের অ্যাসিস্ট্যান্ট সুপারটেনডেন্ট। প্রশ্ন উঠছে ওই তদন্তে কেন এখনও তাঁকে জেরা করেনি সিবিআই।
NRS মেডিক্যাল কলেজের ফরেন্সিক বিভাগ নিয়ে সংশয়
শুধু তাই নয় গত ৯ আগস্ট সকাল ১০:৪৫ মিনিটে তিনি কার নির্দেশে ফোন করেছিলেন? ওই সময় তাঁর পাশে কে ছিলেন? ইচ্ছাকৃত ভাবে প্রথমে অসুস্থ এবং পরে আত্মহত্যা কেন বলেছিলেন? কে এমন বলতে বলেছিলেন? তদন্তে সেই সব প্রশ্নের উত্তরও এখনও পাওয়া যায়নি। ময়নাতদন্ত নিয়েও উঠছে একাধিক প্রশ্ন। প্রথম বারের ময়নাতদন্ত নিয়ে সন্দেহ থাকায় পরিবার দ্বিতীয়বার ময়না তদন্ত করতে বলেছিল কিন্তু সেই দাবি কেন গুরুত্ব দেওয়া হয়নি? এছাড়াও ময়নাতদন্তের জন্য চিকিৎসকদের একটি দল গঠন করা হয়। ওই দলে ছিলেন নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজের ফরেন্সিক বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মল্লি বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিকে আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের ফরেন্সিক বিভাগের প্রধান সারা রাজ্যের মধ্যে অন্যতম বিশেষজ্ঞ থাকতে কেন অন্য হাসপাতাল থেকে ফরেন্সিক ডাকা দেওয়া হয়।
এ ছাড়া পরিবারের আরও প্রশ্ন, হাসপাতালে পৌঁছনোর পরে কেন নির্যাতিতার বাবা-মাকে নিজের মেয়ের মৃতদেহ দেখতে দেওয়া হয়নি? আর এই ঘটনায় একবারও কেন সন্দীপ তাঁদের সঙ্গে দেখা করতে চাননি? তার চেয়ে বড় প্রশ্ন মৃতদেহ সরাসরি পরিবারের হাতে তুলে না দিয়ে কেন স্থানীয় বিধায়ক এবং কাউন্সিলরের নজরদারিতে তড়িঘড়ি সৎকার করা হল? এদিকে এই সকল প্রশ্নের এখনও কোনো উত্তর মেলেনি।