প্রীতি পোদ্দার, নয়া দিল্লি: সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পাল্লা দিতে নানা সরকারি এবং বেসরকারি নিয়মের আমূল পরিবর্তন করা হচ্ছে। যেমন বর্তমান সময়ের পরিস্থিতির সঙ্গে সঙ্গে লেনদেন এর প্রসেস বা পদ্ধতি আরও উন্নত এবং সহজলভ্য করে তুলতে একের পর এক নানা উপায় বের করা হচ্ছে। যার মধ্যে অন্যতম হল এই ডিজিটাল লেনদেন প্রসেস। কিন্তু ডিজিটাল লেনদেন যত প্রসারিত হচ্ছে, ততই বাড়ছে ব্যাঙ্ক জালিয়াতি সংক্রান্ত নানা ঘটনা। গত অর্থবর্ষে দেশের বিভিন্ন ব্যাঙ্কে জালিয়াতির সংখ্যা বেড়েছে। চলতি বছরে সেই সংখ্যা আর বেড়েছে বলে স্পষ্ট জানিয়ে দিল রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া (Reserve Bank of India)।
বাড়ছে ব্যাঙ্ক জালিয়াতির প্রকোপ
সম্প্রতি রিজার্ভ ব্যাঙ্ক দেশে ব্যাঙ্ক জালিয়াতির রিপোর্ট প্রকাশ্যে এনেছে। যেখানে স্পষ্ট উল্লেখ করা হয়েছে, চলতি অর্থবর্ষের প্রথম ছ’মাসে অর্থাৎ এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর মাসে উঠে এসেছে ১৮,৪৬১টি প্রতারণামূলক ঘটনা। এবং ব্যাঙ্ক থেকে চুরি গিয়েছে আমজনতার ২১,৩৬৭ কোটি টাকা। এদিকে ‘ট্রেন্ড অ্যান্ড প্রগ্রেস অব ব্যাঙ্কিং ইন ইন্ডিয়া রিপোর্টে গত অর্থবর্ষের এপ্রিল-সেপ্টেম্বরে ব্যাঙ্ক জালিয়াতির সংখ্যা ছিল ১৪,৪৮০টি ঘটনা। এবং খোয়া গিয়েছিল ২৬২৩ কোটি টাকা। অর্থাৎ গতবারের তুলনায় এবার সেই সংখ্যা গিয়ে দাঁড়িয়েছে আট গুণ। এছাড়াও এই রিপোর্টে উঠে এসেছে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। সেটি হল ৬৭.১% প্রতারণাই দেখা গিয়েছে বেসরকারি ব্যাঙ্কে।
জালিয়াতির পিছনে ঋণ প্রদানকারী অ্যাপগুলি মূল কারণ
এই জালিয়াতি কাণ্ডের সমীক্ষা করে RBI জানিয়েছে যে ঋণ প্রদানকারী অ্যাপগুলি এই জালিয়াতির মূল কারণ। দেখা গিয়েছে ভুয়ো কল করে গ্রাহকদের কাছ থেকে এইভাবে নানা টাকা হাতানো হয়েছে। তার উপরে শুধু জালিয়াতির উদ্দেশ্যে অ্যাকাউন্ট (মিউল) তৈরির সংখ্যাও বাড়ছে। এই পরিস্থিতিতে পুরো ব্যাঙ্কিং শিল্পকে আরও সতর্ক হতে বলেছে RBI। বাড়াতে বলেছে নজরদারি। তাই এগুলি নিয়ন্ত্রণে ডিপোজিটরি তৈরির জন্য আদেশ দেওয়া দেওয়া হয়েছে RBI এর তরফ থেকে। সে জন্য প্রয়োজনে তদন্তকারী সংস্থাগুলির সঙ্গে মিলে কাজ করার বার্তা দিয়েছে তারা। এছাড়াও রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে জালিয়াতি বেশি হয় কার্ড বা নেট ব্যাঙ্কিং এর ক্ষেত্রে। সেখানেও নজরদারি বজায় রাখার কথা জানানো হয়েছে।
প্রসঙ্গত, অনলাইন লেনদেন যত বেড়েছে, ততই পাল্লা দিয়ে নিত্যনতুন পদ্ধতিতে প্রতারণা বাড়ার ঘটনা ঘটতে দেখা যাচ্ছে। তাই বহু দিন ধরেই সতর্ক করছে শীর্ষ ব্যাঙ্ক। যদিও তাদের মতে, যত টাকার জালিয়াতির ঘটনা ধরা পড়ে, ততটা লোকসান হয় না। কারণ সেই টাকার কিছুটা উদ্ধার করা যায়। তবে দেশের অর্থনীতির স্বার্থে এবং গ্রাহকদের সুবিধার্থে অবশ্যই কড়া নজরদারি জরুরি।