বিক্রম ব্যানার্জী, কলকাতা: শ্রীলঙ্কায় অপদস্ত হয়ে ঘরের মাঠে লজ্জার পরাজয়। সবেতেই মূল কালপ্রিট হিসেবে চোখ রাঙানি দেখেছেন ভারতের প্রধান কোচ গৌতম গম্ভীর (Gautam Gambhir)। রাহুল দ্রাবিড়ের কাঁধ থেকে ভারতের দায়িত্ব ঝেড়ে ফেলে গম্ভীরের ওপর তা বর্তাতেই দুর্ভাগ্যের ঘেরাটোপে আটকে পড়েছে ভারত। শেষ আশা ছিল বর্ডার গাভাস্কার সিরিজ।
তবে তাতেও গম্ভীরের দেখানো পথে হাঁটতে গিয়ে মুখে চুনকালি মেখেছে ভারতীয় দল। আর সেই কারণেই দলের সাথে দূরত্ব বেড়েছে গৌতমের। পেয়েছেন কোচের পদ ছাড়ার হুঁশিয়ারিও। ফলত সাফল্য খুঁজতে মরিয়া ভারতের ভরাডুবি আটকাতে এবার হেড কোচের পদ থেকে সরানো হতে পারে গত বছরের জুলাইয়ে শ্রীলঙ্কা সফরে ভারতকে নেতৃত্ব দেওয়া গুরু গম্বীরকে। তাহলে বিকল্প? ধারণা করা হচ্ছে, 3 প্রাক্তন ভারতীয় নক্ষত্রের কাঁধে উঠতে পারে ভারতের দায়িত্ব। রইল সম্ভাব্য তালিকা।
পছন্দের তালিকায় ভিভিএস লক্ষ্মণ
গত বছর দ্রাবিড়ের কাঁধ থেকে ভারতের দায়িত্ব সরিয়ে যখন বিকল্প কাঁধের খোঁজ চলছে, ঠিক সেই সময়ে গম্ভীরের আগেই ভারতের প্রাক্তন কিংবদন্তি তারকা তথা জাতীয় ক্রিকেট অ্যাকাডেমির প্রধান ভিভিএস লক্ষ্মণ-র শরণাপন্ন হয়েছিল BCCI। পাঠানো হয়েছিল কোচিংয়ের প্রস্তাব। তবে সেই মুহূর্তে জাতীয় দলের দায়িত্ব নিতে রাজি হননি তিনি।
ফলত দায়িত্ব ঘুরে যায় গম্ভীরের কাছে। তবে এবার বর্তমান কোচের ব্যর্থতাকে আর সুযোগ দেবেন না লক্ষ্মণ। মনে করা হচ্ছে, গম্ভীরকে কোচের পদ থেকে হটিয়ে ভিভিএসকে ভারতের দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে। বলা বাহুল্য, রাহুল দ্রাবিড়ের সময়কালে বহুবার স্ট্যান্ডিং কোচের দায়িত্ব পালন করে দক্ষতার প্রমাণ দিয়েছেন লক্ষ্মণ।
সুযোগ পেতে পারেন রবি শাস্ত্রী
দলের দুঃসময়ের সঙ্গী রবি শাস্ত্রীকে কঠিন পরিস্থিতিতে বারংবার পাশে পেয়েছে ভারতের ছেলেরা। 2017 থেকে 2021 সাল পর্যন্ত হেড কোচ হিসেবে ভারতীয় দলে নিজের দক্ষতা প্রমাণ করেছেন 83-র বিশ্বকাপ জয়ী ক্রিকেটার শাস্ত্রী। বলে রাখা ভাল, 2007 সালে তিনি ভারতের অন্তবর্তীকালীন হেড কোচ ছিলেন। এর আগে 2004 থেকে 2006 পর্যন্ত টিম ইন্ডিয়ার হয়ে ডিরেক্টরের ভূমিকা পালন করেছেন রবি। ধারণা করা হচ্ছে, গম্ভীরকে ছেড়ে আবারও তাঁকেই ফিরিয়ে আনতে পারে সাফল্য পিপাসু ভারত।
গুরুত্ব পাচ্ছেন ডাব্লিউভি রমনও
গত জুলাইয়ে গম্ভীরকে ভারতীয় দলের হেড কোচ বেছে নেওয়ার পাশাপাশি মহিলা দলের প্রাক্তন কোচ ডব্লিউভি রমনকেও পছন্দের তালিকায় রেখেছিল বিসিসিআই। সূত্র বলছে, ঘরোয়া ক্রিকেটে রমনের একাধিক অসামান্য রেকর্ড ও সাফল্যকে সামনে রেখে এবার গম্ভীরের পর তাঁকেই ভারতীয় দলের দায়িত্ব সঁপে দিতে পারে বোর্ড।
বলে রাখি, রমনের কোচিংয়ে 2008-2009 মরসুমে বিজয় হাজারে ট্রফি জিতেছিল তামিলনাড়ু। 2014 সালে কলকাতা নাইট রাইডার্সের আইপিএল জয়ও তাঁর হাত ধরেই। এছাড়াও 2018 থেকে 2021 মরসুমে ভারতীয় মহিলা দলের হেড কোচ হিসেবে নিজেকে মেলে ধরেছিলেন তিনি। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, রমনের কোচিংয়ে 2020 সালের টি-টোয়েন্টি মহিলা বিশ্বকাপ ফাইনালে জায়গা করেছিল ভারতের মেয়েরা।
শেষ সুযোগ রয়েছে গম্ভীরের
প্রথমে শ্রীলঙ্কা সফর, তারপর নিউজিল্যান্ডের চুনকাম সিরিজ এবং সবশেষে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ভারতের লজ্জার পরাজয়। প্রতিটি ক্ষেত্রেই নিজের ব্যস্ততাকে ঢাকতে গিয়ে আরও আলগা হয়েছে ক্ষত। গম্ভীরের অধীনে ভারতের এমন দুঃসময় কল্পনাতেও ভাবেননি অনেকে। তাই দলকে সাফল্য দিতে না পারায় এবার ধরে রাখা কুরসি ছাড়তে হবে তাঁকে। তবে শেষ সুযোগ রয়েছে গম্ভীরের। যদিও তাঁর মেয়াদ আগামী মার্চ পর্যন্তই। অর্থাৎ 19 ফেব্রুয়ারি থেকে 9 মার্চ পর্যন্ত চলবে চ্যাম্পিয়নস ট্রফির মিনি বিশ্বকাপ। আর সেখানে দলকে জয়ের মুখ না দেখাতে পারলে কখনই ঘুরে দাঁড়ানো হবে না গৌতম গম্ভীরের। হারাতে হবে প্রধান কোচের সিংহাসন।