বিক্রম ব্যানার্জী, কলকাতা: ডার্বির আগে সময়টা ইস্টবেঙ্গলের জন্য দুঃখের হলেও আইএসএলে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে বসে থাকা মোহনবাগানে (Mohun Bagan Super Giant) এখন খুশির আমেজ। সোমবারের ম্যাচে মুম্বই জ্বরে কাবু লাল হলুদ বর্তমানে সুপার সিক্স থেকে ছিটকে যাওয়ার মুখে। এহেন আবহে খুশির খবর বয়ে এনেছে বাগানের ছেলেরা।
তবে বড়দের খেলাতে নয়, ভদ্রেশ্বর গোল্ড কাপের দৌড়ে কঠিন প্রতিপক্ষকে হারিয়ে ট্রফি ঘরে তুলেছে মোহনবাগানের জুনিয়র দল। কিন্তু খেলাটা ছোটদের হলেও এদিন বাগানের জুনিয়র দলকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন সবুজ মেরুনের হয়ে আইএসএলে নামা অভিজ্ঞ সুহেল ভাট।
হাই ভোল্টেজ সেমি ফাইনালে এগিয়ে দুই দল
চলতি আইএসএলে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে জেঁকে বসেছে মোহনবাগান। ঠিক একইভাবে ছোটদের টুর্নামেন্টেও বাগানকে ঠেকিয়ে রাখতে পারল না শত্রুপক্ষ। ভদ্রেশ্বর গোল্ড কাপ টুর্নামেন্ট পরিচালনার দায়িত্ব ছিল বর্ধমানের এক ফুটবল অ্যাকাডেমির কাঁধে। মূলত 3 দিনের এই টুর্নামেন্টের প্রথম সেমিফাইনালে সম্মুখ সমরে উপস্থিত হয় মহমেডান ও জামশেদপুর এফসির জুনিয়র দল।
এই ম্যাচে জামশেদপুরকে 2-1 ব্যবধানে নাকাল করে মাঠ ছাড়া করে কলকাতার ঐতিহ্যবাহী দল মহমেডান। টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় সেমি ফাইনালটি ছিল কালীঘাটের সাথে মোহনবাগান ক্লাবের। আর সেই ম্যাচে নিজেদের পছন্দের গুটি সাজিয়ে কালীঘাটকে 1-0 ব্যবধানে পরাস্ত করে গঙ্গা পাড়ের দল। কাজেই দুই প্রতিপক্ষকে হারিয়ে সেমিফাইনাল জয় করে ফাইনালের সিঁড়িতে পা রাখে দুই জয়ী দল মোহনবাগান ও মহমেডান।
গঙ্গা পাড়ের ছেলেদের হাতে বধ চির-প্রতিদ্বন্দ্বী মহমেডান
বহু প্রতীক্ষিত ফাইনাল ম্যাচে একে অপরের বিরুদ্ধে আক্রমন শানাতে মাঠে নামে মোহনবাগান-মহমেডানের ছেলেরা। নির্ধারিত সময়ে খেলা গড়িয়েছিল বর্ধমানে। দুই প্রতিপক্ষ দলের বল কাড়াকাড়ির দৃশ্য দেখতে বর্ধমান স্পন্দন কমপ্লেক্সে উপচে পড়েছিল ভিড়। এদিন কলকাতা লিগে পরাজয়ের যন্ত্রণা কাটিয়ে উঠতে মরিয়া চেষ্টা চালায় সাদা কালোর ছোট দল। তবে প্রথমার্ধের খেলা গড়িয়েছিল মোহনবাগানের কোলেই।
ম্যাচ শুরুর প্রথম 15 মিনিটের মাথায় জোরালো গোল করে এগিয়ে যায় বাগানের ছেলেরা। জবাবে গোল পরিশোধ করার আমরণ চেষ্টা করেছিল মহমেডান। তবে কাজের কাজ হয়নি। প্রথমার্ধের শেষ লগ্নে পৌঁছে শত্রু শিবিরের উড়ন্ত শট দক্ষ হাতে ঠেকিয়ে দেন বাগানের গোলকিপার। বল কড়াকড়ির দৃশ্যকে সাক্ষী রেখেই দ্বিতীয়ার্ধে পা রাখে দুই দলের ছেলেরা। তবে প্রথমার্ধে গঙ্গা পাড়ের ছেলেদের কাছে গোল খেয়ে তা হজম করতে মরিয়া হয়ে ওঠে মহমেডানের জুনিয়র ব্রিগেড।
চলে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই। কিন্তু বাগানের আঁটসাঁট নিরাপত্তা মহমেডানকে জালে বল জড়ানোর সুযোগ দেয়নি। যার জেরে শত্রু শিবিরের তীব্র আঘাত হেনেও ব্যর্থ হয়েছে মহমেডান। শেষ পর্যন্ত রেফারির দীর্ঘ বাঁশিতে ম্যাচের সমাপ্তি ঘোষণার সাথে সাথে 1-0 ব্যবধানে গোল্ডেন কাপ কাঁধে তোলে সবুজ মেরুনের ছেলেরা। ফলত, আবেগের বশে এদিন গ্যালারি জুড়ে ভেসে উঠেছিল বাগান সমর্থকদের গলা ফাটানো চিৎকার। পরিচিত ভঙ্গিতে এদিন বর্ধমানের মাটিতে দাঁড়িয়ে প্রিয় দলের জয় উদযাপন করেছিলেন সবুজ মেরুন ভক্তরা।
প্রসঙ্গত, বর্ধমানের মাটিতে দুই প্রতিপক্ষ দলের ছোটদের আক্রমণ প্রতি আক্রমণের লড়াই দেখতে এদিন ফাইনাল শেষে মাঠে উপস্থিত হয়েছিলেন ফুটবলার বাইচুং ভুটিয়া ও সন্দীপ নন্দী। মোহনবাগানের জয়ে বাইচুং ভুটিয়ার গলায় উঠে আসে সন্দীপ নন্দীর প্রসঙ্গ। ভুটিয়া বলেন, ভারতের এক নম্বর গোলকিপার সন্দীপ নন্দী আমার সঙ্গে খেলেছেন।
সন্দীপ আমার সাথে মোহনবাগান এবং ইস্টবেঙ্গল উভয় দলেই থেকেছেন। আমি মনে করি, বর্ধমানে ম্যাচ হচ্ছে আর সন্দীপ নন্দী থাকবে না এটা অসম্ভব। ভারতীয় ফুটবলার আরও বলেন, বর্ধমানে একাধিক ক্রীড়া সংস্থা রয়েছে। জেলার সমস্ত ছেলেমেয়েদের মাঠে আসার জন্য উৎসাহিত করতে হবে। তবেই ভাল ফুটবলার পাওয়া যাবে।