প্রীতি পোদ্দার, কলকাতা: গত কয়েক বছর ধরে শিক্ষার যে পরিকাঠামো রয়েছে তা গঠনগত দিক থেকে সম্পূর্ণ পরিবর্তন হয়েছে। উল্লেখযোগ্যভাবে স্কুলছুটের সংখ্যা বেড়েছে পশ্চিমবঙ্গ ৷ আর এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বিশেষত কোভিড ও তার পরবর্তী সময়ে ৷ করোনাকালে সকলের আর্থিক অবস্থা এতটাই ভেঙে গিয়েছিল যে অনেকেই পড়াশোনা ছেড়ে দিয়ে রুজি রোজগারে মনোনিবেশ করেছে। এমনকি স্থায়ী শিক্ষকের অভাবও রয়েছে ৷ আর এই দু’য়ের জেরে অনেক স্কুল বন্ধও হয়ে গিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে ৷ এবার সেই বিষয়ে বড় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে চলেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার।
স্কুলগু মার্জ করার পরিকল্পনা
সম্প্রতি স্কুলের পড়ুয়ার সংখ্যা, শিক্ষকের সংখ্যা, ছাত্র-শিক্ষকের অনুপাত জানতে রাজ্যের প্রত্যেকটি সরকারী স্কুলগুলিতে তথ্য পাঠানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে বিকাশ ভবনের তরফ থেকে। আর এই রিপোর্ট প্রকাশ্যে আসতেই উঠে এল বিস্ফোরক তথ্য। জানা গিয়েছে রাজ্যের প্রায় ২৫০ টি স্কুলে ছাত্র ভর্তির হার প্রায় শূন্য। এমনকি রাজ্যের ৩ হাজার ৩৬৩টি স্কুলে মাত্র একজন শিক্ষক রয়েছেন। ২০ জনের কম পড়ুয়া রয়েছে ৮ হাজার ২৬১টি স্কুলে। তাও আবার সেইসব স্কুলগুলিতে পাঁচ-ছয় জন, আবার কোথাও ১০ জন শিক্ষক রয়েছেন। তাই এবার সেই স্কুলগুলির মধ্যে মার্জ করার পরিকল্পনা করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য ইতিমধ্যে স্কুলশিক্ষা দপ্তর PTR তৈরি করছে।
কী বলছেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু?
গত সোমবার শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু চেতলা বয়েজ হাইস্কুলের ১১৪তম বর্ষে আনুষ্ঠানিক ভাবে ইংরেজি মাধ্যমে পড়াশোনা চালুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন। সেখানে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথোপকথনের মাঝে উঠে এসেছিল সরকারি স্কুলগুলিতে মার্জ করার প্রসঙ্গ। সেই সময় ব্রাত্য বসু বলেন, ‘শিক্ষা দফতরের বানানো সম্পূর্ণ PTR রিপোর্ট হাতে পেলেই স্কুলগুলিকে মার্জ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’ পাশাপাশি কেন্দ্রীয় সরকারের রিপোর্ট অনুযাযী রাজ্যে ‘মাধ্যমিকে ড্রপ আউট’ বেড়ে যাওয়া নিয়ে প্রশ্ন করা হলে ব্রাত্য বসু জানিয়েছেন, “রিপোর্ট আমাকে দেখতে হবে। ওদের রিপোর্ট সবসময় যে নির্ভুল, সেটা আমি বলতে পারব না।”
এছাড়াও শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু আরও বলেন যে, “এটা ঠিক যে, ক্লাস টেন পর্যন্ত মিড-ডে মিল দেওয়া হয় না। আমরা অনেকবার কেন্দ্রকে বলেছিলাম, ক্লাস টেন পর্যন্ত মিড-ডে মিল দেওয়া হোক। তাতে আর্থ-সামাজিক স্তরের পিছিয়ে পড়া পড়ুয়ারা আরও বেশি করে স্কুলে আসতে আগ্রহী হবে।” তবে কেন্দ্রের রিপোর্ট সূত্রে জানা গিয়েছে , রাজ্যে প্রাথমিক ও উচ্চ প্রাথমিক স্তরে স্কুলছুটের হার শূন্য ৷ কিন্তু, মাধ্যমিকস্তরে অর্থাৎ, নবম-দশমে স্কুলছুটের হার দাঁড়িয়েছে ১৭.৮৫ শতাংশে ৷ কিন্তু, কেন্দ্রের এই সমীক্ষাকে পুরোপুরি ভরসা করছে না রাজ্য সরকার ৷ তাই রাজ্যের শিক্ষা দফতর ইতিমধ্যে একটি সমীক্ষা শুরু করেছে ৷