প্রীতি পোদ্দার, কলকাতা: প্রতিদিন খবরের কাগজ খুললেই একটা না একটা পথ দুর্ঘটনার খবর ঠিক পাতায় ভেসে ওঠে। আর বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এই পথ দুর্ঘটনার অন্যতম একটি কারণ হয়ে থাকে যানবাহনের অধিক গতিবেগ। অনেকসময় একে অপরকে গতির নিরিখে টেক্কা দিতে রেষারেষি করে গাড়ি চালানো হয়। যার ফলাফল গিয়ে দাঁড়ায় ভয়ংকর মৃত্যু। ট্র্যাফিক গার্ডের শত নিয়ম জারি করা হলেও কিছুতেই এই দুর্ঘটনাগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি। তাই এবার পথ নিরাপত্তার স্বার্থে কলকাতা-সহ রাজ্য জুড়ে নতুন করে যানবাহনের গতি নির্ধারণ অভিযানে নামল পশ্চিমবঙ্গ সরকার। জারি করা হল নয়া বিজ্ঞপ্তি।
পথে গাড়ির গতি নিয়ে নয়া বিজ্ঞপ্তি পশ্চিমবঙ্গ সরকারের!
সূত্রের খবর, রাজ্যের পথ দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে আনতে সম্প্রতি রাজ্যের মুখ্যসচিবের দফতর থেকে বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে। সেখানে শহরের যানবাহনের গতি তিনটি মাপে বেধে দেওয়া হয়েছে। নতুন নিয়ম অনুযায়ী জানা গিয়েছে বাইপাস, ভিআইপি রোডের মতো রাস্তায়, যেখানে সহজে লোকজনের পারাপার করতে পারে। এবং যেখানে বিভিন্ন কারণে গাড়ির গতি বাধাপ্রাপ্ত হবে না, সেখানে যানবাহনের গতি বেধে দেওয়া হবে ঘণ্টায় ৫০ কিলোমিটার। পাশাপাশি যে সকল ঘিঞ্জি রাস্তায় লোকজনের পারাপার বেশি থাকবে অর্থাৎ যেখানে প্রচুর সংখ্যায় টোটো, অটোরিকশা, মিনি ট্রাক, রিকশা চলাচল করে সেখানে গাড়ি ঘণ্টায় ৩০ থেকে ৪০ কিলোমিটার গতি রাখা যাবে।
আরও পড়ুনঃ ফের ‘নবান্ন চলো’ ডাক! নেপথ্যে কে? হাইকোর্টে জানতে জনস্বার্থ মামলা দায়ের
লেন অনুযায়ী গাড়ির গতি নিয়ন্ত্রণ
অন্যদিকে যে সব জায়গায় স্কুল–কলেজ, বাজার, শপিং মল, হাসপাতাল কিংবা বড় কোনও আবাসন রয়েছে, সেখানে গাড়ির গতিবেগ ঘণ্টায় ২৫–৩০ কিলোমিটারের বেশি হওয়া চলবে না। এছাড়াও যদি ২–৩ লেনের রাস্তা হয় এবং মোটরবাইক, অটোরিকশা, মিনি ট্রাক ও টোটোর মতো গাড়ি ওই রাস্তায় চলাচল করে অর্থাৎ মোট যানবাহনের ১০ শতাংশের নীচে হয়, সে ক্ষেত্রে বাস ও ট্রাকের গতিবেগ হবে ঘণ্টায় ৬০–৭০ কিলোমিটার। এবং যদি রাস্তার দু’দিকে তিনটি করে লেন থাকে এবং অটোরিকশা, রিকশা কিংবা টোটোর জন্য আলাদা লেন থাকে, তা হলে বাস ও ট্রাক প্রতি ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটার গতিতে ছুটতে পারবে। কিন্তু সেই রাস্তায় দু’টি ভারী গাড়ির মধ্যে রেষারেষি হতে থাকলে গাড়ির গতিবেগ ঘণ্টায় ২০ কিলোমিটার কমিয়ে দেওয়া হবে।
গ্রামীণ রাস্তাতেও গতি নিয়ন্ত্রণের বিজ্ঞপ্তি
তবে শুধু শহর নয়, গ্রামের রাস্তাতেও গাড়ির গতি নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষেত্রে নজর রেখেছে পরিবহন দফতর। গ্রাম বাংলার কোন ধরনের রাস্তায় কোন ধরনের গাড়ির গতিবেগ কী রকম হবে, তার সুনির্দিষ্ট মাপকাঠি তৈরি করেছে স্টেট রোড সেফটি কাউন্সিল। আর সেই মানদণ্ড অনুযায়ী নতুন নির্দেশিকা জারি করেছে পরিবহণ দপ্তর। কারণ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় কলকাতার হাসপাতালগুলোয় পথ দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে মাথায় আঘাত নিয়ে যত রোগী ভর্তি হন, তাঁদের মধ্যে একটা বড় অংশই গ্রাম বাংলার বাসিন্দা। তাই এই ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হয়েছে মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ। কিন্তু সেক্ষেত্রে আরও একটি প্রশ্ন উঠছে। বলা হচ্ছে দুর্ঘটনার একটি অন্যতম কারণ যদি যানবাহনের গতি হয়, সেক্ষেত্রে অন্য কারণ হল ফুটপাতে উঠতে না পেরে পথচারীদের রাস্তা দিয়ে হাঁটা। যা নিয়ে এখনও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।