বিক্রম ব্যানার্জী, কলকাতা: বিজয় হাজারের রণক্ষেত্রে রাজস্থানকে লাল চোখ দেখিয়ে পঞ্চম শতরান হাঁকালেন বিদর্ভের অধিনায়ক তথা কলকাতা নাইট রাইডার্সের (Kolkata Knight Riders) প্রাক্তন তারকা করুণ নায়ার। রবিবারের হাই ভোল্টেজ কোয়ার্টার ফাইনালে 5 নম্বর সেঞ্চুরির নজির গড়েন এই ভারতীয় তারকা। একার কাঁধে দলের দায়িত্ব চাপিয়ে 122 রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেছেন তিনি। আউট হয়েছেন মাত্র 1 বার। আর এই কীর্তিই তাঁকে শিরোনামে জায়গা করে দিল।
নায়ারের কাঁধে ভর করে সেমিফাইনালে উঠল বিদর্ভ
অধিনায়ক হিসেবে রবিবার সেঞ্চুরি হাঁকিয়েই থেকে থাকেননি নায়ার। বিগত 4 ইনিংসের পর পঞ্চম ইনিংসেও শতরান গড়ার পাশাপাশি অধিনায়ক হিসেবে দলকে সাফল্য পাইয়ে দিয়েছেন প্রাক্তন KKR তারকা। এদিন নায়ারের দুরন্ত ইনিংসের কাঁধে ভর করে 39 বল হাতে রেখেই 292 রানের লক্ষ্যভেদ করে 9 উইকেটে জিতে সেমিফাইনালে পৌঁছে যায় বিদর্ভ। নায়ারের পাশাপশি এদিন দলকে সেমিফাইনালে পৌঁছতে মদত যুগিয়েছিল বাকিরাও। রবিবার ব্যাটিং থেকে বোলিং সবেতেই রাজস্থানের ছেলেদের নাকানি চোবানি খাইয়েছে করুণের দল।
করুণদের সামনে গলদঘর্ম অবস্থায় পড়ে রাজস্থান বাহিনী
রবিবারের হাই ভোল্টেজ ম্যাচে টস ভাগ্য ফিরেছিল বিদর্ভের দিকেই। যার জেরে শক্ত হাতে রাজস্থানকে ব্যাট করতে পাঠায় বিদর্ভ। আর এর পরই বোলিং দাপট দেখিয়ে রাজস্থানের টুটি চেপে ধরে করুণের দল। গুরুর দিকে রাজস্থানকে ব্যাটে বল ছোঁয়াতেই দিচ্ছিল না বিদর্ভের বোলাররা। প্রথম 8 ওভারে 19 রান করেই 2 উইকেট খোয়াতে হয় রাজস্থানকে। তবে খেলা কিছুটা গড়াতেই ঘুরে দাঁড়িয়েছিল রাজস্থানের ব্যাটাররা। দীপক হুডা এবং মহিপাল লোমরর বোর্ডে 71 রান যোগ করতেই তৃতীয় উইকেট হারায় রাজস্থান।
এরপর থেকে একের পর এক উইকেট ভাঙতে থাকে লোমরর শিবিরের। শুভম গাড়োয়াল এবং কার্তিক যখন 79 বলে 82 রান যোগ করছেন ঠিক সেই মোক্ষম সময়ে পঞ্চম উইকেট ভাঙে রাজস্থানের। 5 উইকেট হারানোর পর থেকে ধরে খেলার চেষ্টা করেছিল রাজস্থানের ছেলেরা। সেই পথেও প্রতিমুহূর্তে কাঁটা ছড়িয়েছে বিদর্ভ বাহিনী। শেষ পর্যন্ত 50 ওভারের খেলায় ইতি টেনে 292 রানের লক্ষ্য বাঁধে রাজস্থান। হাতে ছিল মাত্র 2 উইকেট।
রাজস্থানকে ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ দেয়নি বিদর্ভ!
বিডর্ভের হয়ে বল হাতে রবিবার দাপট দেখিয়েছেন যশ ঠাকুর। এদিন একাই 10 ওভারে 39 রান দিয়ে 4 উইকেট তুলে নেন তিনি। মনে করা হচ্ছে, যশের দুর্দান্ত পারফরমেন্স থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে সেমিফাইনালে ওঠার রাস্তা খুঁজতে হতো রাজস্থানকে। তবে সেই চেষ্টা বিফলে গিয়েছে দীপক চাহারদের। তেমনভাবে জ্বলে উঠতে পারেননি খলিল আহমেদও।
তবে ব্যাঠ হাতে মাঠে নামতেই জ্বলে উঠেছিলেন বিদর্ভের সাহসী সৈনিক ধ্রুব শোরে। দলের হয়ে জায়গা করতে চেয়েছিলেন যশ রাঠোরও। তবে কুকনা অজয় সিংয়ের বলে কাজ দিয়েছিল। 49 রান করে মাঠ ছাড়তে হয় যশকে। দলের দায়িত্ব গিয়ে পড়ে অধিনায়ক করুণের ওপর। আর এর পরই জুটি বেঁধে দলকে জয়ের সিঁড়িতে পৌঁছে দেন ধ্রুব এবং করুণ। দুই তারকা ব্যাটারের কারণে আর ম্যাচে ফেরা হয়নি রাজস্থানের।
চলতি বিজয় হাজারে ট্রফিতে করুণ নায়ারের পারফরমেন্স
- জম্মু ও কাশ্মীরের বিরুদ্ধে অপরাজিত 112 রানের ইনিংস।
- ছত্তিশগড় দলের বিরুদ্ধে অপরাজিত 44 রান।
- চন্ডিগড় দলের বিরুদ্ধে অপরাজিত 163 রান।
- তামিলনাড়ুর বিরুদ্ধে অপরাজিত 111 রান।
- উত্তরপ্রদেশের বিরুদ্ধে 112 রানের ইনিংস।
- মিজোরাম দলের বিরুদ্ধে ব্যাট করার সুযোগ হয়নি।
- রাজস্থান দলের বিরুদ্ধে সদ্য শেষ হওয়া কোয়ার্টার ফাইনালে অপরাজিত 122 রানের ইনিংস।
করুণ নায়ারের রেকর্ড
বিজয় হাজারে টুর্নামেন্টের এক সংস্করণে মোট 6 ইনিংসে 5টি সেঞ্চুরির রেকর্ড রয়েছে করুণের। যা বিজয় হাজারে ট্রফিতে সর্বাধিক। এছাড়াও তৃতীয় ভারতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে লিস্ট এ ক্রিকেটে পরপর 4টি শত রানের নজির গড়েছিলেন করুণ। এর আগে এই অসাধ্য সাধন সম্ভব হয়েছিল দেবদূত পাডিক্কাল এবং নারায়ণ জগদীশনের হাত ধরে। বলে রাখা ভাল, একটানা সর্বাধিক সেঞ্চুরি রয়েছে জগদীশনের। তাই ঘরোয়া সংস্করণে এই রেকর্ড গড়ার দৌড়ে ব্যাটসম্যান হিসেবে দ্বিতীয় স্থানে করুণ।