শ্বেতা মিত্র, কলকাতাঃ বাংলায় একটা কথা আছে, আদা জল খেয়ে পেছনে পড়া। বেশ কিছুটা সময় ভারতের অন্যতম ধনকুবের ব্যবসায়ী গৌতম আদানির (Gautam Adani) পেছনে কার্যত আদা জল খেয়ে পড়েছিল হিন্ডেনবার্গ। তবে এবার ভারতীয় ব্যবসায়ী গোষ্ঠী আদানি ও SEBI-র বিরুদ্ধে একের পর এক রিপোর্ট দিয়ে আলোড়ন সৃষ্টি করা হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। হ্যাঁ ঠিকই শুনেছেন। বুধবার এমনটাই ঘোষণা করে সকলকে চমকে দিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা নাথান অ্যান্ডারসন। আচমকা কেন এরকম সিদ্ধান্ত নিল সংস্থা সেই নিয়ে স্বাভাবিকভাবেই সকলের মনে কৌতূহলের জন্ম দিয়েছে।
বন্ধ হচ্ছে ‘হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ’
আপনাদের জানিয়ে রাখি, ২০১৭ সালে যাত্রা শুরু করেছিল বিতর্কিত সংস্থা ‘হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ’। একই সঙ্গে এটি বন্ধের পেছনে সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ জানাননি নাথান অ্যান্ডারসন। তিনি শুধুমাত্র বলেন, ‘অনেক চিন্তাভাবনা ও চিন্তাভাবনার পর প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’
এক বিবৃতিতে অ্যান্ডারসন বলেন, ‘গত বছরের শেষ দিক থেকে আমি আমার পরিবার, বন্ধুবান্ধব ও টিমের সঙ্গে কথা বলে আসছি, আমি হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। পরিকল্পনা ছিল যে আমরা যে ধারণাগুলি নিয়ে কাজ করছিলাম তা শেষ করার পরে এটি বন্ধ হয়ে যাবে। এবং অতীতের পঞ্জি মামলাগুলির জন্য যা আমরা সবেমাত্র সম্পন্ন করেছি এবং নিয়ন্ত্রকদের সঙ্গে ভাগ করে নিচ্ছি।’
“হিন্ডেনবার্গ আমার জীবনের একটি অধ্যায়” – নাথান অ্যান্ডারসন
অ্যান্ডারসন বলেন, ‘এখানে কোনো নির্দিষ্ট ঝুঁকি নেই, এবং বড় কোনো ব্যক্তিগত সমস্যা নেই। কেউ একবার আমাকে বলেছিলেন যে একটি নির্দিষ্ট সময়ে একটি সফল কেরিয়ার একটি স্বার্থপর কাজ হয়ে যায়। এখন আমি নিজের মধ্যে কিছুটা স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছি, সম্ভবত আমার জীবনে প্রথমবারের মতো। হয়তো আমি চিরকাল এটি করতে পারতাম, তবে আমাকে প্রথমে কিছুটা নরকের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছিল। আমি এখন হিন্ডেনবার্গকে আমার জীবনের একটি অধ্যায় হিসাবে বিবেচনা করি, এটি একটি মূল জিনিস নয় যা আমাকে সংজ্ঞায়িত করে।’
২০১৭ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ শিল্পে জালিয়াতি, দুর্নীতি এবং অব্যবস্থাপনা উন্মোচনের জন্য একটি নাম অর্জন করে। ফার্মের সাফল্য সম্পর্কে অ্যান্ডারসন শেয়ার করেন, “আমরা এমন কিছু সাম্রাজ্যকে কাঁপিয়ে দিয়েছি যা আমরা অনুভব করেছি যে কাঁপানো দরকার ছিল। আদানি গ্রুপ তাদের মধ্যে অন্যতম।” তিনি হিন্ডেনবার্গকে আর্থিক তদন্তের পাওয়ার হাউসে পরিণত করার জন্য তার পরিবার, বন্ধুবান্ধব এবং ১১ জনের একটি নিবেদিত দলের সমর্থনকে কৃতিত্ব দেন।
আদানি-সহ এই ধনকুবেররাও নড়ে গিয়েছিলেন
৪০ বছর বয়সী অ্যান্ডারসন ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে গৌতম আদানির আদানি গ্রুপের বিরুদ্ধে কারসাজি, জালিয়াতি ইত্যাদির অভিযোগ এনে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিলেন। ব্লুমবার্গ বিলিয়নেয়ার্স ইনডেক্স অনুযায়ী, গৌতম আদানি সেই সময় বিশ্বের চতুর্থ ধনী ব্যক্তি ছিলেন।
আরও পড়ুনঃ ৬০০০ কোটি টাকার প্রতারণা! একযোগে বেহালা ও হাওড়ায় হানা ED-র, নজরে প্রভাবশালী
অ্যান্ডারসন ডরসির ব্লক ইনকর্পোরেটেড এবং আইকনের আইকান এন্টারপ্রাইজেস সম্পর্কেও প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিলেন। সেই সময় গৌতম আদানি বলেছিলেন যে আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ রিপোর্ট কেবল গোষ্ঠীটিকে অস্থিতিশীল করার জন্য নয়, রাজনৈতিকভাবে ভারতকে বদনাম করাও ছিল।