পার্থ সারথি মান্না, কলকাতাঃ বিশ্বের সবচেয়ে বড় মেলা বা জনসমাগম হয় কুম্ভ মেলাতে। প্রতি ১২ বছর অন্তর কুম্ভ মেলার আয়োজন করা হয়। এই সময় বিগত ১৩ই জানুয়ারি থেকে শুরু হয়েছে মহাকুম্ভ ২০২৫ (Mahakumbh 2025)। আগামী ৪৫ দিন ধরে এই মেলা চলবে। আনুমানিক ৪০ কোটি মানুষ এবছর মহাকুম্ভ মেলায় আসবেন। পুণ্যার্থীরদের থাকা থেকে যাতায়াতের জন্য রেল কর্তৃপক্ষ থেকে স্থানীয় প্রশাসনের তরফ থেকেই সমস্ত ধরণের ব্যবস্থাপনা করার চেষ্টা করা হয়েছে। আজকের প্রতিবেদনে কিভাবে নামমাত্র খরচে মহাকুম্ভ ঘুরে আসতে পারেন সেটা জানাবো আপনাদের।
মহাকুম্ভ ২০২৫ | Mahakumbh 2025
১৪৪ বছর পর আসে মহাকুম্ভ। তাই ২০২৫ সালের কুম্ভমেলার গুরুত্ব অনেকটাই। একজন মানুষ তাঁর গোটা জীবদ্দশায় একটির বেশি মহাকুম্ভ দেখতেই পারবেন না। কারণটা ওই যে ১৪৪ বছরে একবার আসে। তবে ১২ বছর অন্তর যে কুম্ভ মেলার আয়োজন হয় সেটাও একবার নিজের চোখে দেখাটা ভাগ্যের ব্যাপার বলে মনে করা হয়। আপনিও কি এবছর মহাকুম্ভে যেতে চাইছেন? কিন্তু খরচের চিন্তায় সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না? আজকের প্রতিবেদনে আপনাদের একেবারে কম খরচে মহাকুম্ভে যাওয়া ও আসার সম্পূর্ণ প্ল্যান সম্পর্কে জানাবো।
মহাকুম্ভে যাওয়ার ট্যুর প্ল্যান । Mahakumbh 2025 Tour Plan Under Rs 1000
মহাকুম্ভে যাওয়ার জন্য প্রথমেই আপনাকে পৌঁছাতে হবে হাওড়া স্টেশনে। এরপর প্রয়াগরাজগামী কোনো একটি এক্সপ্রেস ট্রেনের জেনারেলের টিকিট কেটে নিতে হবে যেটা ২০০-৩০০ টাকার মধ্যেই হয়ে যাবে। কারণ এই মুহূর্তে প্রয়াগরাজ যাওয়ার সমস্ত ট্রেন বুকড হয়ে গিয়েছে। তাই ততকাল ছাড়া টিকি পাওয়াটা বেশ মুশকিল। তাই জেনারেলের টিকিট কেটেই প্রয়াগরাজ পৌঁছাতে হবে।
প্রয়াগরাজ স্টেশনে নেমে ত্রিবেণীসঙ্গম যাওয়ার জন্য টোটো চাপতে পারেন। তবে যে পরিমাণ ভিড় এই মুহূর্তে রয়েছে তাতে টোটোতে যাওয়ার তুলনায় হেঁটে চলে যাওয়া ভালো। এক্ষেত্রে আপনাকে ৩ কিমি মত হাটতে হবে। ত্রিবেণী সঙ্গম পৌঁছানোর পর পুণ্যস্নান করতে হবে। যদিও স্নান ও মেলায় ঘোরার জন্য কোন চার্জ লাগে না। তবে কিছু জায়গায় প্রবেশের পূর্বে এন্ট্রি পাস নিতে হবে।
পুণ্যস্নান করার পর জামাকাপড় পাল্টে নিকটবর্তী কোনো লঙ্গরখানাতেই খাবারের ব্যবস্থাও হয়ে যাবে। অর্থাৎ মহাকুম্ভে খাওয়ার জন্য এক টাকাও আলাদা করে খরচ লাগবে না। এরপর সেই দিনটা যদি প্রয়াগরাজে থাকতে ও রেস্ট নিতে চান তাহলে একটি সেবা আশ্রম খুঁজতে হবে। এক্ষেত্রে ইতিমধ্যেই বেশিরভাগ আশ্রমে পুণ্যার্থীরা আগে থেকেই ভিড় জমিয়েছেন তাই কষ্ট করে ঘুরে ঘুরে খুজতে হবে। তাহলেই বিনামূল্যে কিংবা ৫০০ টাকার বিনিময়ে থাকার জায়গাও হয়ে যাবে।
এরপর সন্ধ্যের সময় ফের একবার পায়ে হেঁটেই কুম্ভ মেলা প্রাঙ্গণে পৌঁছে যেতে পারেন। তারপর সেখানে মেলায় ঘুরে নিন। তারপর রাতের খাবারের জন্য পুনরায় লঙ্গরখানায় চলে যেতে হবে। খাওয়া দাওয়া করে আশ্রমে এসে বিশ্রাম নিন। পরদিন সকাল হল পুনরায় প্রয়াগরাজ স্টেশনে পৌঁছে এক্সপ্রেস ট্রেনের জেনারেল বগির টিকিট কেটে ফিরে আসুন হাওড়া।
এভাবে আপনি যদি যাতায়াত করেন তাহলে ২৫০ করে টিকিট ধরলে মোট ৫০০ টাকা, আশ্রমের ভাড়া ১০০ টাকা (যদি ৫ জন মিলে যান)। আর বাকি ৪০০ টাকা কিছু কেনাকাটি বা অন্যান্য খরচের জন্য ধরলে মাত্র ১০০০ টাকাতেই দিব্যি মহাকুম্ভে ঘুরে আসা সম্ভব।
মহাকুম্ভে স্নান করার সঠিক সময় | Right time to take Holy Bath in Mahakumbh 2025
কথায় বলে মহাকুম্ভে স্নান করলে সমস্ত পাপ ধুয়ে যায়। তবে গোটা মেলা চলাকালীন যখন খুশি স্নান করলে কিন্তু সেটা পুণ্যস্নান হয় না। এবছর মোট ৬ দিন স্নান করার মুহূর্ত রয়েছে। সেগুলি হলঃ
- ১৩ই জানুয়ারি – পৌষ পূর্ণিমা
- ১৪ই জানুয়ারি – মকর সংক্রান্তি
- ২৯শে জানুয়ারি – মৌনী অমাবস্যা
- ৩রা ফেব্রুয়ারি – বসন্ত পঞ্চমী
- ১২ই ফেব্রুয়ারি – মাঘী পূর্ণিমা
- ২৬শে ফেব্রুয়ারি – মহা শিবরাত্রি
এই দিনগুলিতে স্নান করলে তবেই আত্মার শুদ্ধিকরণ হবে ও সমস্ত পাপ ধুয়ে যাবে বলে মনে করা হয়। তাই আপনি যদি পুণ্য স্নান করতে চান তাহলে এই দিনগুলির মধ্যে কোন একদিনে নিজের যাত্রা স্থির করুন।
আরও পড়ুনঃ আগেও দিয়েছেন মৃত্যুদণ্ড, ছিলেন হাইকোর্টেও! চিনে নিন শিয়ালদা আদালতের বিচারক অনির্বাণ দাসকে
মহাকুম্ভে যাওয়ার জন্য ট্রেনের তালিকা | Trains to Reach Mahakumbh 2025
আপনি যদি কলকাতা থেকে প্রয়াগরাজে মহাকুম্ভে যেতে চান সেক্ষেত্রে ট্রেনে করে যাওয়াটা সবচেয়ে সস্তা ও আরামদায়ক হতে পারে। এক্ষেত্রে কোন কোন ট্রেনগুলি প্রয়াগরাজ পর্যন্ত যাবে সেটা অনেকেরই মনেই প্রশ্ন জগতে পারে। নিচে সেই সমস্ত ট্রেনের তালিকা দেওয়া হলঃ
- ১২৩১১ নেতাজি এক্সপ্রেস – রাত্রি ৯ টা ৫ ৫ মিনিটে ছাড়ে ও প্রয়াগরাজ পৌঁছায় পরদিন সকাল ১০টা বেজে ৩৫ মিনিটে।
- ১২৩০১ রাজধানী এক্সপ্রেস – বিকেল ৪টে বেজে ৫ ০ মিনিটে হাওড়া থেকে ছাড়ে ও রাত্রি ২টো ৪৩ নাগাদ প্রয়াগরাজ পৌঁছাবে।
- ১২৩১৯ কলকাতা গোয়ালিয়ার সুপারফাস্ট এক্সপ্রেস – দুপুর ১ টা বেজে ১ ০ মিনিটে কলকাতা স্টেশন থেকে ছাড়বে ও রাত্রি ১২ টা বেজে ৪ ৫ মিনিটে প্রয়াগরাজ পৌঁছাবে।
- ১২৯৮৭ শিয়ালদাহ আজমের সুপারফাস্ট এক্সপ্রেস – রাত্রি ১ ০ টা ৫ ৫ মিনিটে শিয়ালদহ থেকে ছাড়বে ও পরদিন সকাল ১ ১ টা ৫ ০ মিনিটে প্রয়াগরাজ পৌঁছাবে।
- ১২৩৮১ পূর্ব এক্সপ্রেস – সকাল ৮ টা বেজে ১৫ মিনিটে হাওড়া থেকে ছেড়ে রাত্রি ৯ টা ৩ ৫ মিনিটে প্রয়াগরাজ পৌঁছায়।
- ১২৩০৭ হাওড়া যোধপুর সুপারফাস্ট এক্সপ্রেস – রাত্রি ১১ টা ৩০ মিনিটে হাওড়া থেকে ছাড়বে ও পরদিন বেলা ১২ টা ১৫ নাগাদ প্রয়াগরাজ পৌঁছাবে।
- ১২৩২১ মুম্বাই মেল – রাত্রি ১ ১ টা ৪ ০ মিনিটে হাওড়া স্টেশন থেকে ছেড়ে পরদিন দুপুর ১ টা ১ ৫ নাগাদ প্রয়াগরাজ চৌকি জংশন পৌঁছাবে।
- ১২৩৩৩ বিভূতি এক্সপ্রেস – সন্ধ্যে ৭ টা ৫ ৫ মিনিটে হাওড়া থেকে যাত্রা শুরু করে ও পরদিন দুপুর ১২ টায় প্রয়াগরাজ রামবাগ পৌঁছাবে।
আরও পড়ুনঃ মান সম্মান ডোবালেন নারিন, রাসেল! দুই KKR তারকার ব্যর্থতায় হারল নাইট শিবির
এগুলি ছাড়াও ভিড় সামাল দেওয়ার জন্য রেলের তরফ থেকে স্পেশাল ট্রেন চালু করা হতে পারে। তাই রেলের অফিসিয়াল পেজে বা টিকিট বুক করার সময় ভালো করে আইআরসিটিসি এর ওয়েবসাইট দেখে নিতে হবে।