প্রীতি পোদ্দার, কলকাতা: রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিলের রেজিস্ট্রারের বৈধতা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন তুলছিলেন চিকিৎসকদের একাংশ। অবসরের সময় পার হয়ে যাওয়ার পরেও পদ আঁকড়ে থাকা নিয়ে ঘোর আপত্তি তোলা হয়েছিল। কিন্তু কোনো কিছুর তোয়াক্কা না করেই সেই পদ আগলে রাখা হয়। এবার সেই নিয়ে হাইকোর্টে মামলা করা হয়। এবং হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি এই মামলার রায় প্রসঙ্গে বিস্ফোরক মন্তব্য করেন।
ঘটনাটি কী?
কলকাতা হাইকোর্টে ওয়েস্ট বেঙ্গল মেডিক্যাল কাউন্সিলের রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা করেছিল জয়েন্ট প্ল্যাটফর্ম অব ডক্টর্স নামক সংগঠনটি। অভিযোগ হিসেবে মামলাকারীরা জানিয়েছেন যে পশ্চিমবঙ্গ মেডিক্যাল কাউন্সিলের রেজিস্ট্রার পদে রয়েছেন মানস চক্রবর্তী। এবং এই পদে তাঁর মেয়াদ শেষ হয়েছে গত ২০১৯ সালের ১ নভেম্বর। কিন্তু তারপরেও তিনি পদত্যাগ করেননি। এদিকে মাঝে পাঁচ বছরের বেশি সময় পেরিয়ে গিয়েছে। কিন্তু, নিয়ম অনুযায়ী, মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পরও পদে থাকতে গেলে রাজ্য সরকারের আগাম অনুমোদন দরকার হয়। এ ক্ষেত্রে সেই অনুমোদনও নেওয়া হয়নি।
এছাড়াও মামলাকারীদের অভিযোগ আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি মেডিক্যাল কাউন্সিল নিয়োগের পরীক্ষা রয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে তার আগে কী ভাবে মেডিক্যাল কাউন্সিলের রেজিস্ট্রার পদে মানস চক্রবর্তী? পাশাপাশি তাঁরা আরও অভিযোগ করেন যে, হাই কোর্টের একাধিক নির্দেশ সত্ত্বেও কাউন্সিলে স্বচ্ছ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি। বেআইনি ভাবে পদ ধরে রেখেছেন রেজিস্ট্রার। আর এবার মামলার সমস্ত অভিযোগ খতিয়ে দেখে হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি পক্ষ নেন মামলাকারীদের।
সময়সীমা বেঁধে দিল হাইকোর্ট
বৃহস্পতিবার কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম ও বিচারপতি হিরন্ময় ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়েছে যে, সরকারের থেকে মেডিক্যাল কাউন্সিল কখনই বড় নয়। কাউন্সিলের সদস্যেরা মহান পেশায় রয়েছেন। তাই তাঁদের সমস্ত কাজ গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হবে। ছয় হাজার টাকায় পশ্চিমবঙ্গে কর্মীদের কাজ করানো হচ্ছে। সুতরাং ফেব্রুয়ারি মাসে পরীক্ষার মাধ্যমে নতুন রেজিস্ট্রারকে নিয়োগ করা হবে। এছাড়াও মানস চক্রবর্তীর বিরুদ্ধেও কড়া পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে আদালত।
এদিন হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম জানিয়েছেন, আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মানস চক্রবর্তী রেজিস্ট্রারকে পদ ছাড়তে হবে। অর্থাৎ আজ, ৩১ জানুয়ারি, শুক্রবার বিকেল ৫টার মধ্যে তিনি পদত্যাগ না-করলে পদ থেকে তাঁকে অপসারণ করা হবে। ২০১৯ সালে অবসর নেওয়ার কথা ছিল মানসবাবুর। কিন্তু তিনি পদত্যাগ করেননি। এক্সটেনশন নিয়ে পদ আঁকড়ে পড়েছিলেন তিনি। ২০২২ সালে মেডিক্যাল কাউন্সিলের যে নির্বাচন হয় তার রিটার্নিং অফিসার ছিলেন তিনি। সেই নির্বাচনও অবৈধ বলে দাবি করেছেন প্রতিবাদী চিকিৎসকরা।
এর আগে ২০ নভেম্বর মানস চক্রবর্তীকে রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিলের রেজিস্ট্রার পদ থেকে অবিলম্বে সরানোর নির্দেশ দেয় স্বাস্থ্যভবন। কাউন্সিলকে দেওয়া চিঠিতে, স্বাস্থ্য দফতরের সিনিয়র প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছিলেন যে, রাজ্য সরকারের নজরে এসেছে সরকারের অনুমতি না নিয়ে মানস চক্রবর্তীকে রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিলের রেজিস্ট্রার পদে পুনর্নিয়োগ করা হয়েছে। যা আইনের পরিপন্থী। তাই রাজ্য সরকারের নির্দেশ, অবিলম্বে নিয়োগ বিধি মেনে নতুন রেজিস্ট্রার নিয়োগ করতে হবে। কিন্তু তারপরও নিজের পদে রয়েছেন রেজিস্ট্রার। এবার সেই নিয়ে বড় পদক্ষেপ নিল হাইকোর্ট।