প্রীতি পোদ্দার, নয়া দিল্লি: ভারতবর্ষ এক ঐতিহ্যপূর্ণ এবং সংস্কৃতি সম্পন্ন দেশ। প্রাচীন সভ্যতাগুলির নিরিখে ভারত হল এমন একটি দেশ যেখানে প্রচুর ইতিহাস, ঐতিহ্য এবং সনাতনী নিদর্শন রয়েছে। আর হিন্দুদের উপাসনাস্থল অর্থাৎ মন্দিরগুলি হল সেই সনাতনী নিদর্শনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। প্রায় ২০ লক্ষেরও বেশি বৃহৎ আকারের মন্দির রয়েছে এদেশে। পুরীর শ্রী জগন্নাথ মন্দির থেকে শুরু করে ভুবনেশ্বরের লিঙ্গরাজ মন্দির, তিরুমালার ভেঙ্কটেশ্বর মন্দির, বিষ্ণুপদ মন্দিরের নাম সকলেই জানেন। কিন্তু এবার সেই মন্দিরে ভিআইপি দর্শন করা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে উঠল মামলা।
ভিআইপি কালচার নিয়ে একাধিক প্রশ্ন
কয়েক মাস আগে তিরুপতি মন্দিরে পদপিষ্টের ঘটনায় শোকাহত হয়েছিল দেশ। তবে শুধু তিরুপতি নয়, কিছুদিন আগে মৌনী অমাবস্যায় মহাকুম্ভ মেলায় স্নান করতে গিয়ে পদপিষ্ট হয়ে মারা গিয়েছেন অসংখ্য ভক্ত। যা নিয়ে রীতিমত তোলপাড় হয়ে উঠেছে দেশ। তবে এই ঘটনা যে ইদানিং ঘটছে তা কিন্তু নয়, কয়েক বছর ধরে এই রীতি হতে আসছে। রাজ্যের কোনও না কোনও মন্দির বা ধর্মীয় স্থানে এমন ঘটনা ঘটার খবর আসে। আর এর অন্যতম কারণ হিসেবে বিবেচনা করা হয় ভিআইপি কালচারকে।
ভিআইপি দর্শন বন্ধ করার জন্য মামলা
তাই এই ভিআইপি কালচারকে সম্পূর্ণ নির্মূল করতে এবং ভক্তদের সকলকে মন্দির দর্শনে সমান অধিকার দিতে মন্দিরগুলিতে ভিআইপি দর্শন বন্ধ করতে আর্জি জানানো হয়েছিল সুপ্রিম কোর্টে। আসলে এই বিষয়টি নিয়ে একটি রিট পিটিশন দাখিল করা হয়েছিল আদালতে। আর সেই মামলাটি রুজু করা হয়েছিল প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্না এবং বিচারপতি সঞ্জয় কুমারের বেঞ্চে। এক্ষেত্রে মামলাকারীর অভিযোগ ছিল, ভিআইপি দর্শনের মাধ্যমে মোটা টাকা ফি আদায় করে দেশের নানা প্রান্তে অবস্থিত মন্দিরগুলির কর্তৃপক্ষ। যা বন্ধ হওয়া দরকার বলে দাবি করেন মামলাকারী।
কী বলছে সুপ্রিম কোর্ট?
কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত, গত বুধবার সেই মামলা সম্পূর্ণ খারিজ করে দিল শীর্ষ আদালত। প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্না এবং বিচারপতি সঞ্জয় কুমারের বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ যে, এই ধরনের কোনও ব্যবস্থা থাকা উচিত নয় তবে বিষয়টি নিয়ে সিদ্ধান্ত নির্দিষ্ট সরকার ও প্রশাসনের নেওয়া উচিত। এছাড়াও বিচারপতিরা জানিয়েছেন যে, “মন্দিরে ঢোকার ক্ষেত্রে কাউকেই বিশেষ সুবিধা পাইয়ে দেওয়া উচিত নয়। কিন্তু, তা সত্ত্বেও আমরা মনে করি যে ৩২ নম্বর ধারা অনুসারে, এই মামলা শোনাটা যথাযথ নয়। তবে, আমরা এই মামলা খারিজ করে দিচ্ছি মানে এটা নয় যে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এই বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করতে পারবে না।” অর্থাৎ শীর্ষ আদালত এই গোটা ব্যবস্থার দায়ভার সম্পূর্ণরূপে প্রশাসনের ওপর ছেড়ে দিয়েছে।
আরও পড়ুনঃ স্বাস্থ্যবীমা কোম্পানির দাদাগিরি শেষ, আর ইচ্ছেমত বাড়ানো যাবে না দাম! নির্দেশ IRDAI-র
আসলে ভিআইপি দর্শন-এর মতো ব্যবস্থা আদতে সমাজের মুষ্টিমেয় কিছু প্রভাবশালী ও ধনী মানুষকে বিশেষ সুবিধা পাইয়ে দেয়। যার বদলে বাকি সকলে সমস্যায় পড়ে যায়। এদিকে এই মামলার মাঝেই কুম্ভ মেলায় ভক্তদের পদপিষ্ট হওয়ার ঘটনায় কড়া পদক্ষেপ নিয়েছে যোগী আদিত্যনাথ সরকার। মন্দিরে ঢোকার জন্য যত ভিআইপি পাস ছিল, সব বাতিল করে দিয়েছে উত্তরপ্রদেশ সরকার।