কৌশিক দত্ত, তারাপীঠঃ কার কখন ভাগ্যের চাকা ঘুরে যায়, বলা দায়! কখনও নুন আনতে পান্তা ফুরিয়ে যাওয়া মানুষ লটারি কেটে রাতারাতি কোটিপতি হয়ে যান। আবার কখনও সাফল্যের চূড়ায় থাকা মানুষ সর্বস্ব খুইয়ে ভিখারি হয়ে যান। তেমনই এক জলজ্যান্ত দৃষ্টান্ত দেখা গিয়েছে এবার। একসময় দাপটের সঙ্গে বিজেপি করা নেতা ইন্দ্রজিৎ সিনহা আজ পথের ভিখারি। কেন এমন হল তাঁর?
একসময় মুকুল রায়, দিলীপ ঘোষ, কৈলাস বিজয়বর্গীয়দের সঙ্গে ওঠাবসা ছিল ইন্দ্রজিৎ সিনহা ওরফে বুলেটের। আর এখন তারাপীঠে সাধু, সন্ন্যাসী ও ভিখারিদের সঙ্গে বসে পূর্ণার্থীদের কাছ থেকে ভিক্ষা চাইছেন। জানা গিয়েছে যে, বুলেটের শারীরিক ও মানসিক পরিস্থিতি আর আগের মতন নেই। এমনকি তাঁর গলায় এক টিউমার হয়েছে। যার চিকিৎসা করার জন্য লাগবে অনেক খরচ। এরপর থেকেই নাকি সে ধীরে ধীরে আরও ভেঙে পড়েছেন।
তারাপীঠেরই এক ব্যবসায়ী ইন্দ্রজিৎ সিনহার এই করুন দুর্দশার কথা ফেসবুকে তুলে ধরেছেন। সাগর মণ্ডল নামে ওই ব্যবসায়ী নিজের ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ‘ দয়া করে পুরোটা পড়ুন। ইন্দ্রজিৎ সিনহা : বুলেট দা – পঃবঃ রাজ্য বিজেপি আমন্ত্রিত সদস্য, রাজ্য স্বাস্থ্য পরিসেবা সেল ইনচার্জ, শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জী স্বাস্থ্য মিশন’র সভাপতি – একসময় এইসব পদে থাকা একজন নেতা আজ তারাপীঠ মহাশ্মশানে ভিক্ষা করছেন , রাতে গাছ তলায় শুয়ে থাকছেন বিগত বেশ কয়েকদিন ধরে।’
সাগর মণ্ডল আরও লেখেন, ‘নিজ দোষে বা কপাল দোষ যে কারণেই হোক না কেন, একজন রাজ্যের প্রাক্তন পদাধিকারী ভিক্ষা করছেন : এটা দেখে শুনে একদমই ভালো লাগলো না। গলায় একটি টিউমার ও হয়েছে, সেটার চিকিৎসার জন্যও টাকার দরকার। আমাদের সামান্য ক্ষমতায় তাৎক্ষণিকভাবে নামমাত্র সাহায্য করতে পেরেছি। আশাকরি তাঁকে যে যার মত করে সাহায্য অতি অবশ্যই করবেন। জানি ওনার এই অবস্থার জন্য উনি নিজেই দায়ী, তবুও রাজ্য বিজেপি নেতৃত্বের কাছে অনুরোধ বিষয়টি একটু গুরুত্ব সহকারে দেখুন।। ফোন নাম্বার = 9874935877 ( বুলেট দা )।’
এছাড়াও অনেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ইন্দ্রজিৎ সিনহাকে নিয়ে পোস্ট করেছেন। আর যারা ‘বুলেট দা’র এই দুর্দশার কথা তুলে ধরছেন, তাঁরা বেশীরভাগই রাজ্য বিজেপি নেতৃত্বকে এতদিনের একনিষ্ঠ কর্মীকে অবহেলা করার জন্য দোষারোপ করছেন। শেষ পাওয়া খবর অবধি, বিজপির রাজ্য নেতৃত্ব ইন্দ্রজিৎ সিনহা ওরফে ‘বুলেট দা’র খবর শুনে তাঁর চিকিৎসার ব্যবস্থা ও তাঁর পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন।
এছাড়াও বীরভূম বিজেপির সভাপতি ধ্রুব সাহা ইন্দ্রজিৎ সিনহার বিষয়টি দেখছেন বলে জানা গিয়েছে। তাঁকে আপাতত আশ্রয়স্থল দেওয়ার কথা বললেও বুলেট দা শ্মশান ছেড়ে যেতে চাননি। ওদিকে কলকাতার বিজেপির যুব মোর্চার নেতৃত্ব জানিয়েছেন যে, ইন্দ্রজিতকে দু’দিনের মধ্যেই কলকাতায় নিয়ে গিয়ে তাঁর চিকিৎসা করানো হবে।