কন্যাদান, পিণ্ডদান বাদ! হিন্দু ধর্মের থেকে আলাদা মতুয়া রীতির ঘোষণা শান্তনু ঠাকুরের

Published on:

shantanu thakur

প্রীতি পোদ্দার, কলকাতা: নিজেদের ধর্মের পরিচয় প্রতিষ্ঠা করতে কুড়মিদের আন্দোলন চোখে পড়ার মত। তবে শুধু কুড়মি নয়, পরিচয় প্রতিষ্ঠা করতে আইনি লড়াইয়ের পথে এসে দাঁড়িয়েছে মতুয়া সমাজ। আর এবার সে লড়াইয়ের কথা ঘোষণা করে দিলেন মতুয়া সঙ্ঘাধিপতি তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর নিজেই। সরস্বতী পুজোর দিনেই সারা দেশ থেকে মতুয়া সমাজের নেতাদের ডেকে পাঠিয়ে ‘চিন্তন শিবির’ করলেন শান্তনু।

আমাদের সাথে যুক্ত হন Join Now

ঘটনাটি কী?

গতকাল অর্থাৎ রবিবার বিধাননগরে সারা দেশ থেকে মতুয়া সমাজের নেতাদের ডেকে পাঠিয়ে মতুয়া সঙ্ঘাধিপতি তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর এক ‘চিন্তন শিবির’ এর আয়োজন করেছিলেন। এবং সরস্বতী পুজোর দিন এই কর্মসূচিতে অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসঙ্ঘের তত্ত্বাবধানে নতুন ‘আচার সংহিতা’ রচনার কথা ঘোষণা করে দিলেন। যেখানে হিন্দু ধর্মে থেকেও নানা হিন্দু রীতি পালনের ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ জানিয়ে দিলেন। এমনকি মতুয়াদের নিজস্ব আচার বা রীতিতে অন্য কারও হস্তক্ষেপ রুখতে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হওয়ার কথাও জানালেন শান্তনু ঠাকুর।

বিশদে আলোচনা হয় সম্মেলনে

সূত্রের খবর, এদিন, দেশের প্রায় ১২টি রাজ্য থেকে প্রতিনিধিরা উপস্থিত হয়েছিলেন শিবিরে। বিধাননগরের পূর্বাঞ্চলীয় সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের প্রেক্ষাগৃহে এই সম্মেলনে সাত দফা প্রস্তাব পাশ হয় ধ্বনিভোটে। এই সাত দফা প্রস্তাবের অন্যতম মতুয়া সম্প্রদায়ের জন্য পৃথক ‘আচার সংহিতা’। এই সম্মেলনে মতুয়া মহাসঙ্ঘের কেন্দ্রীয় কমিটির পদাধিকারীদের পাশাপাশি ছিলেন মতুয়া সমাজের আধ্যাত্মিক গুরুরা এবং বিদ্বজ্জনেরা। সেক্ষেত্রে মতুয়া সমাজ এখন কোন কোন ক্ষেত্রে বাধার শিকার হচ্ছে এবং মতুয়া দর্শনকে পরিপূর্ণ করতে এখনও কী কী খামতি রয়েছে, সে নিয়ে প্রথমে বিশদে আলোচনা হয় সম্মেলনে।

Whatsapp Broadcast Join Now

জানা গিয়েছে এই সম্মেলনে শান্তনু ঠাকুর জানিয়েছেন যে হিন্দু ধর্মের প্রচলিত ঋতির মধ্যে যেমন কন্যাদান থেকে পিণ্ডদানের মতো অনেক আচার নীতি রয়েছে সেক্ষেত্রে মতুয়াদের ক্ষেত্রে এসব থেকে বাইরে থাকার রীতিকে সুসংবদ্ধ করা হবে। অর্থাৎ সেক্ষেত্রে মতুয়া সমাজ নিজস্ব আচার বা রীতি মেনে করবে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শান্তনুর আপ্তসহায়ক তথা মতুয়া মহাসঙ্ঘের সক্রিয় কর্মকর্তা তন্ময় বিশ্বাস সাত দফা প্রস্তাব পেশ করেন। সে সব প্রস্তাবের মধ্যে ছিল বিভাজন বিভীষিকা দিবস এবং মরিচঝাঁপি দিবস পালনের কথা। এবং সেই আচার বা রীতির লিখিত রূপ মতুয়া মহাসঙ্ঘ প্রকাশ করবে।

কন্যাদান থেকে পিণ্ডদান বাদ গেল

Whatsapp Group Join Now

এই প্রসঙ্গে শান্তনু ঠাকুর জানিয়েছেন মতুয়া সমাজে সমস্ত মন্ত্র বাংলায় হয়। বিয়েতে শাঁখা-পলা, মালাবদল, সাতপাক, সিঁদুরদান সবই আছে। শ্রদ্ধানুষ্ঠানেও তাই। হরিচাঁদ ঠাকুরের ছবি আর প্রয়াত ব্যক্তির ছবি রেখে শ্রাদ্ধানুষ্ঠান হয়। মন্ত্রপাঠ বাংলায় হয়। সব কিছুই বলা যায় বাংলা রীতি অনুযায়ী হয়। অন্যদিকে তন্ময় বিশ্বাস জানালেন, হিন্দু ধর্মে যেমন বিয়ের আসরে কন্যাদানের রীতি রয়েছে সেটি মতুয়া আচার অনুযায়ী মতুয়াদের থাকবে না। অর্থাৎ বিয়েতে তাঁদের কন্যাদানের রীতি নেই। কারণ তাঁরা মনে করেন যে কন্যা কোনো দান করার বস্তু নয়। তাই, সেখানে কন্যাদান পর্ব বাদ দেওয়া হবে। এমনকি শ্রাদ্ধে পিণ্ডদানের ব্যবস্থাও বাদ দেওয়া হবেবে স্পষ্ট জানান তিনি।

তবে মতুয়াদের এই আইনি নিয়ম কানুন এর লড়াই কুড়মিদের ধাঁচেই হবে কিনা তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন সকলে। তবে এই বিষয়ে শান্তনু ঠাকুর বলেছেন, “ আমার কুড়মিদের ধাঁচে কোনো আন্দোলন করব না। আমি সম্মেলন মঞ্চে ভাষণ দেওয়ার সময়েই সেটা স্পষ্ট করে দিয়েছি। মতুয়া সমাজ হিন্দু ধর্মেরই একটা অংশ। কিন্তু আমাদের নিজস্ব রীতিনীতি রয়েছে। দীর্ঘ দিন ধরে সমাজে যেভাবে অস্পৃশ্যতার বঞ্চনা সহ্য করে আসছি, তা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্যই পৃথক রীতিনীতি তৈরির দরকার হয়েছিল।’’

সঙ্গে থাকুন ➥
X