প্রীতি পোদ্দার, নয়া দিল্লি: সম্প্রতি আমেরিকার নয়া নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প পুনরায় মসনদে ফেরার পর সে দেশ থেকে অবৈধ অধিবাসীদের নিজেদের দেশে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু করেছেন। আর তাঁর এই গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপকে প্রশংসিত করছেন অনেকে। তবে এই সিদ্ধান্তকে অনেকেই আবার সমালোচনা করছেন। তবে এই সিদ্ধান্ত অবৈধ অভিবাসীদের নিরাপত্তা থেকে শুরু করে মানবাধিকার রক্ষা করবে বলে জানা যাচ্ছে। এই আবহে গতকাল অর্থাৎ মঙ্গলবারই আমেরিকা থেকে এমন ভারতীয়দের ফেরত পাঠানো শুরু হয়েছে। এবার এই অবৈধ অধিবাসীদের নিজেদের ঠিকানায় ফেরৎ পাঠানোর ক্ষেত্রে ভারত সরকারের প্রসঙ্গ উঠে এল।
কেন্দ্রীয় সরকারকে প্রশ্ন সুপ্রিম কোর্টের!
২০১১ সালে আটকে থাকা বাংলাদেশিদের দুর্দশা নিয়ে কলকাতা হাই কোর্টে একটি আবেদন জমা করা হয়েছিল। তারপরেই হাই কোর্টে এই ব্যাপার নিয়ে মামলা শুরু হয়। এরপর ২০১৩ সালে মামলাটি সুপ্রিম কোর্টে যায়। দীর্ঘ ১২ বছর পর ৩০ জানুয়ারিতে বিচারপতি জেবি পারদিওয়ালা এবং বিচারপতি আর মহাদেবনের বেঞ্চে ওঠে এই মামলা। শুনানিতে বিচারপতিরা প্রশ্ন তোলে, ‘একটি বিষয় নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে জানতে চাওয়া হচ্ছে যে বাংলাদেশ থেকে অবৈধ ভাবে ভারতে ঢুকে কেউ দোষী সাব্যস্ত হলে এটাও কি অনিবার্য ভাবে বোঝা যায় না যে তিনি ভারতীয় নাগরিক নন? তা হলে এমন হাজার হাজার অবৈধ অভিবাসীকে ডিটেনশন ক্যাম্প বা কারেকশনাল হোমে অনির্দিষ্ট কালের জন্য আটকে রাখার অর্থ কী? কেন্দ্রকে এই প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে।’
তথ্য গোপনের অভিযোগ অসম সরকারের বিরুদ্ধে
অন্যদিকে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের উদ্দেশে প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ প্রশ্ন করেন যে, ‘অবৈধ অভিবাসীকে ডিটেনশন ক্যাম্প বা কারেকশনাল হোমে অনির্দিষ্ট কালের জন্য আটকে রাখার ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কী ভূমিকা রয়েছে?’ আর ঠিক কয়েকদিন পরেই গতকাল অর্থাৎ মঙ্গলবার একই বিষয় নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের ভর্ৎসনার মুখে পড়ে অসম সরকার। এ দিন বিচারপতি অভয় ওকা এবং বিচারপতি উজ্জ্বল ভুঁইয়ার বেঞ্চ অসম সরকারকে বিঁধে ক্ষুব্ধ হয়ে বলেন, ‘আপনারা কি ওঁদের দেশে ফেরানোর জন্য কোনও শুভ মহরতের অপেক্ষা করছেন?’ আসলে অসমে আটক বিদেশিদের ফেরত পাঠানো নিয়ে আদালতে নির্দিষ্ট কোনো তথ্য দেয়নি অসম সরকার। যার ফলে তথ্য গোপনের অভিযোগ তোলেন বিচারপতিরা।
অসম সরকারকে তিরস্কার করল সুপ্রিম কোর্ট
এই বিষয়ে আদালত নির্দেশ দিয়েছে যে, ট্রানজিট শিবিরে আটকে থাকা ৬৩ জন বেআইনি অভিবাসীকে কোন দেশের নাগরিক জানলেই দুই সপ্তাহের মধ্যে তাঁদের সেখানকার রাজধানীতে পাঠিয়ে দিতে হবে। এই বিষয়ে বিচারপতিদের পর্যবেক্ষণ, সংবিধানের ২১ নম্বর ধারা অনুযায়ী অনির্দিষ্ট কাল কাউকে এভাবে আটকে রাখা মৌলিক অধিকার বিরোধী। তাই তাঁদের জন্য এ ভাবে বছরের পর বছর সরকারি অর্থের অপচয় একদমই মানা যায় না। এদিকে বিদেশিদের নিজেদের ঠিকানায় ফেরৎ পাঠানো নিয়ে রাজ্য ও কেন্দ্রের আইনজীবীরা যুক্তি দিয়েছিলেন যে সঠিক ঠিকানা না থাকায় আটক বিদেশিদের ফেরত পাঠানো যাচ্ছে না। তবে পাল্টা যুক্তি দেয় আটকদের তরফের আইনজীবীরা।
আরও পড়ুনঃ বাংলাদেশকে টাইট করাই লক্ষ্য, BSF-কে আরও জমি দিচ্ছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার
আটকদের তরফের আইনজীবীদের দাবি, আটক ব্যক্তিদের বিদেশি বলে দাগিয়ে দিলেও তাঁরা আদতে কোন দেশের, সেটাই নির্ধারণ করতে পারেনি সরকার। এদিকে যাঁদের ‘বাংলাদেশি’ বলা হয়েছে, বাংলাদেশ তাঁদের নিজের নাগরিক বলে মানতে বা ফেরাতে নারাজ। কিন্তু সেক্ষেত্রে আদালত স্পষ্ট জানিয়ে দেয়, কাউকে ‘বিদেশি’ বলে চিহ্নিত করলে অবিলম্বে তাঁকে নিজের দেশে ফেরানোর দায়িত্ব সরকারের। ঠিকানা না জানাটা কোনও অজুহাত হতে পারে না কখনও। তাই অসম সরকারকে নির্দেশ দেওয়া হয় যে বিশেষ কমিটি গড়ে সব ট্রানজিট শিবিরের সুবিধা-অসুবিধা ১৫ দিন অন্তর যাচাই করতে হবে।