প্রীতি পোদ্দার, কলকাতা: এল নিনো এবং লা নিনা প্রতি বছর গোটা বিশ্বকে ধীরে ধীরে প্রভাবিত করে চলেছে। গ্লোবাল ওয়ার্মিং এর দাপটে এমনিতেই বছরের বছর তাপমাত্রা বৃদ্ধি হয়েই চলেছে। অবস্থা এতটাই শোচনীয় হয়ে উঠছে যে জলবায়ুর ভারসাম্যও ধীরে ধীরে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এমনকি শীতের প্রভাবও বেশ অনেকটাই কমে গিয়েছে। আগের সময় চলে গেলে দেখা যাবে নভেম্বর মাসের মাঝ বরাবর শীতের হালকা শিরশিরানি ভাব অনুভূত হয়। আর তারপর থেকে জাঁকিয়ে শীতের প্রাদুর্ভাব দেখা যায় ডিসেম্বর, জানুয়ারি জুড়ে। ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে ধীরে ধীরে তাপমাত্রার পারদ বাড়তে থাকে। কিন্তু চলতি বছর যেন সম্পূর্ণ বদলে গেল আবহাওয়া।
রেকর্ড তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেল জানুয়ারিতে!
জাঁকিয়ে শীত পড়া তো দূরের কথা। একের পর এক পশ্চিমী ঝঞ্ঝার দাপটে তাপমাত্রার পারদ কখনও বাড়ছে তো আবার কখনও কমে যাচ্ছে। ভরা মাঘ মাসের মধ্যেই ঘাম ঝরছে শরীর দিয়ে। আশঙ্কা করা হচ্ছে এখনই পুরোপুরি গরম পড়েনি তার আগেই এমন হাল সকলের। কিন্তু যদি গরমের দাপট এমন ভাবেই ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে তাহলে ভয়ংকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হবে গোটা বিশ্ব। সম্প্রতি তাই আবহাওয়ার পরিবর্তনের বিষয়ে সতর্কতা জারি করল বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা। বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা সূত্রে জানা গিয়েছে যে ২০২৪ সালের রেকর্ড-ব্রেকিং তাপমাত্রা ২০২৫ এও দেখা যাবে। গ্রিনহাউস গ্যাস এর মাত্রা ধীরে ধীরে আরও বৃদ্ধি পাবে, যা ভবিষ্যতে উষ্ণায়ন আরও বাড়িয়ে দেবে।
আবহাওয়াবিদরা প্রথম দিকে ভেবেছিল যে লা নিনার প্রভাবে ২০২৫ সালে তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে অনেকটাই কম হবে অর্থাৎ রেকর্ড ঠান্ডা পড়বে। কিন্তু জানুয়ারিতে পড়তে সবার ধারণা ভেঙে গেল। চলতি বছর রেকর্ড করা তাপমাত্রা সম্পূর্ণ বদলে দিল আবহাওয়াবিদদের ধারণাকে। সম্প্রতি ইউরোপের জলবায়ু পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা কোপার্নিকাস ক্লাইমেট চেঞ্জ সার্ভিসের প্রতিবেদনের তরফে আবহাওয়ার তাপমাত্রা সম্পর্কে এক বিস্ফোরক তথ্য উঠে এল। যেখানে বলা হয় যে ২০২৫ সালের জানুয়ারী মাস নাকি সবচেয়ে উষ্ণতম জানুয়ারী মাস ছিল। এবং এই মাসের গড় তাপমাত্রা প্রায় ১.৭৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি ছিল।
ভয় ধরাচ্ছে ২০২৫!
আবহাওয়ার রিপোর্ট সূত্রে জানা গিয়েছে এল নিনোর প্রভাব শেষ হওয়ার পরেও গত মাসে জানুয়ারিতে তাপমাত্রার রেকর্ড বৃদ্ধি হয়েছিল। বার্কলে আর্থ জলবায়ু বিজ্ঞানী জ্যাক হাউসফাদারের মতে, ২০২৫ সালের জানুয়ারী মাস সবচেয়ে উষ্ণতম জানুয়ারী ছিল , যা ২০২৪ সালের রেকর্ডকেও ছাড়িয়ে গিয়েছে। তবে আশা করা যাচ্ছে লা নিনা দুর্বল হয়ে পড়বে আগামী মার্চ মাসের মধ্যে। রাষ্ট্রসংঘের সেক্রেটারি-জেনারেল আন্তোনিও গুতেরেস এ প্রসঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়েছেন যে, ২০২৪ সহ গত দশ বছরে রেকর্ডের শীর্ষ উষ্ণতম বছরের সাক্ষী ছিল। এবার সেই রেকর্ড ২০২৫ সালে ভাঙবে কিনা তা চিন্তার বিষয়৷