সৌভিক মুখার্জী, কলকাতা: বর্ষা এলেই উত্তরবঙ্গবাসীর মনে একটাই চিন্তা, সেবক হয়ে সিকিম যাওয়ার রাস্তায় ধস নামবে না তো? প্রতিবছরই টানা বৃষ্টির ফলে ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক ধসের কবলে পড়ে বন্ধ হয়ে যায়। ফলে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে সিকিমের সঙ্গে সমতল ভূমির যোগাযোগ। এবার এই দীর্ঘদিনের সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নিল কেন্দ্র সরকার।
সিকিমে যাতায়াতের বিকল্প সড়ককে এবার আরো চওড়া ও দুইলেন বিশিষ্ট করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। হ্যাঁ ঠিকই শুনেছেন। এই প্রকল্প বাস্তবায়নে ৭৭০ কোটি ২৫ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করেছে কেন্দ্র। কেন্দ্রীয় সরকার ইতিমধ্যেই এই টাকা অনুমোদন দিয়েছে বলেই জানাচ্ছে পরিবহন মন্ত্রী নিতিন গডকড়ী।
কোথায় তৈরি হচ্ছে এই বিকল্প রাস্তা?
বেশ কিছু সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা যাচ্ছে, মূলত বর্ষার সময় ১০ নম্বর জাতীয় সড়কে ধস নামলে যে বিকল্প পথে সিকিম যাওয়া যায়, সেটাকেই এবার আরো প্রশস্ত করা হচ্ছে। আর এই বিকল্প পথটি হল গরুবাথান, রিশপ হয়ে সিকিম। এই রাস্তার অন্তর্গত ৭১৭এ জাতীয় সড়কের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ অংশকে মূলত দুইলেনে রূপান্তর করা হবে বলে জানা যাচ্ছে।
আর এর মধ্যে রয়েছে লাভা মোড় থেকে পেডং বাইপাস পর্যন্ত ১৮.৪২ কিলোমিটার রাস্তা এবং রেশি থেকে রেনক পর্যন্ত ৫.২ কিলোমিটার রাস্তা। আর এই দুই অংশ মিলিয়ে মোট ২৩.৬ কিলোমিটার রাস্তা চওড়া করা হবে বলে জানা যাচ্ছে। ফলে বর্ষাকালে যেসব জায়গা ধস নেমে বন্ধ থাকে, সেই বিকল্প রাস্তাই হবে এবার সব থেকে নির্ভরযোগ্য পথ।
পর্যটন ও আর্থসামাজিক উন্নয়নের দিগন্ত
ইতিমধ্যে নিতিন গডকড়ী তার সামাজিক মাধ্যমে জানিয়েছেন, “বর্ষায় সেবক হয়ে ১০ নম্বর জাতীয় সড়কে যাতায়াত করা খুবই কঠিন হয়ে পড়ে। সেই সময় এই বিকল্প রাস্তাটি সারাবছরের জন্য ব্যবহার করা যাবে। ফলে পর্যটক থেকে শুরু করে ব্যবসায়ীক যাতায়াতের জন্য এটি বড় সুবিধা প্রদান করবে। আর এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে শুধুমাত্র সিকিম নয়, বরং দার্জিলিং এবং তৎসংলগ্ন উত্তরবঙ্গ অঞ্চলের আর্থ ও সামাজিক উন্নয়ন আরো গতি পাবে বলে মনে করা হচ্ছে।
এই রাস্তাটি এত গুরুত্বপূর্ণ কেন?
দার্জিলিং জেলার করোনেশন সেতু থেকে সিকিমের রাজধানী গ্যাংটক পর্যন্ত সংযোগ স্থাপনকারী এই ১০ নম্বর জাতীয় সড়ককে বলা হয় “লাইফলাইন অফ সিকিম”। এই রাস্তাটির মোট দৈর্ঘ্য ১০৪ কিলোমিটার। এর মধ্যে ৮৭ কিলোমিটার সিকিম এবং ১৭ কিলোমিটার পশ্চিমবঙ্গের মধ্যে পড়ে। বর্ষাকালে এই রাস্তার একাধিক জায়গায় ধস নামে। ফলে পর্যটন, পণ্য পরিবহন এবং জরুরি পরিষেবা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়।
আরও পড়ুনঃ ফিক্সড ডিপোজিটে ৭.৬০% সুদ, গ্রাহকদের স্বস্তির খবর শোনাল SBI
এই উদ্যোগ উত্তরবঙ্গবাসী এবং সিকিম ভ্রমণকারীদের জন্য নিঃসন্দেহে খুশির হাওয়া নিয়ে আসবে। দীর্ঘদিন ধরে যে সমস্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছিল, এবার তার সমাধান হতে চলেছে। এতে শুধুমাত্র যোগাযোগ ব্যবস্থা নয়, বরং অর্থনৈতিক দিক থেকেও এক নতুন দিগন্ত খুলে যাবে।