সৌভিক মুখার্জী, কলকাতা: ২০১৬ সালের গোটা এসএসসি প্যানেল বাতিল হওয়ার পর একধাক্কায় চাকরি হারিয়েছেন ২৬ হাজার শিক্ষক। আর এর জেরে শিক্ষকের অভাবে টালমাটাল অবস্থা হয়ে পড়েছে রাজ্যের বহু স্কুল। এই সংকটের মাঝেই অতিরিক্ত দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিতে হচ্ছে স্কুলগুলির পার্শ্ব শিক্ষকদের (Para Teachers)। আর এই বাড়তি কাজের বোঝা আর নাম মাত্র বেতনের প্রতিবাদে এবার তিন দিনের স্কুল বয়কটের পথে হাঁটলেন তারা।
অষ্টম থেকে দ্বাদশ শ্রেণী, সব ক্লাসই সামলাচ্ছেন পার্শ্ব শিক্ষকরা
পূর্বের নির্ধারিত নিয়ম অনুযায়ী অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত প্রতি সপ্তাহে ২০টি ক্লাস নেওয়ার দায়িত্ব ছিল পার্শ্ব শিক্ষকদের। কিন্তু বর্তমানে চিত্রটা বদলে গিয়েছে। স্কুলে পর্যাপ্ত শিক্ষক না থাকায় তাদের গিয়ে পড়াতে হচ্ছে নবম, দশম এমনকি একাদশ, দ্বাদশ শ্রেণীর ক্লাসেও। আর এর সঙ্গে জুড়েছে সপ্তাহে একদিন করে ছাত্রছাত্রীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে স্কুলে ফেরানোর দায়িত্ব। এই কাজের বদলে তাদের পারিশ্রমিক মাত্র ১৩ হাজার টাকা, যা দিয়ে বর্তমান মূল্যবৃদ্ধির বাজারে সংসার চালানো দায় হয়ে পড়ে।
পার্শ্ব শিক্ষক ঐক্য মঞ্চের প্রতিবাদ
আর এহেন অবস্থায় রাজ্য সরকারের উপর বাড়তি চাপ প্রয়োগ করার জন্য গত ৬ই এপ্রিল থেকে বুধবার ৯ই এপ্রিল পর্যন্ত তিন দিনের স্কুল বৈঠকের ডাক দিয়েছেন পার্শ্ব শিক্ষকরা। এই নিয়ে পার্শ্ব শিক্ষক ঐক্য মঞ্চের আহ্বায়ক ভগীরথ ঘোষ জানিয়েছেন, “দীর্ঘদিন ধরেই আমরা বঞ্চনার শিকার হচ্ছি। স্কুলে ক্লাস নেওয়া থেকে শুরু থেকে মাধ্যমিক-উচ্চমাধ্যমিকদের খাতা দেখা, সবই করতে হচ্ছে আমাদের। অথচ এই নাম মাত্র বেতন দিয়ে সংসার চালানো এখন আমাদের দায় হয়ে পড়েছে।”
তাদের এও দাবি করছে, অনেক পার্শ্ব শিক্ষক বাধ্য হয়ে এখন ফলের দোকান, রাজমিস্ত্রির কাজ বা অন্যান্য পার্টটাইম কাজে লেগে পড়েছেন। তবুও তারা স্কুলের দায়িত্ব পালন থেকে কখনো পিছিয়ে আসেনি।
শিক্ষকদের শহরমুখী প্রবণতা সমস্যায় ফেলছে গ্রামাঞ্চলকে
রাজ্য সরকারের উৎসশ্রী পোর্টালের মাধ্যমে এখন বহু স্থায়ী শিক্ষকই বদলি হয়ে শহরের দিকে পা বাড়াচ্ছেন। যার ফলে প্রত্যন্ত এলাকার স্কুলগুলিতে শিক্ষকের অভাব আরো তীব্র হয়ে উঠেছে। আর সেখানে দায়িত্ব সামলাচ্ছেন পার্শ্ব শিক্ষকরা। এদের একাংশ বলছেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যতই রাজ্যের শিক্ষাক্ষেত্রে সাফল্যের কথা বলুক না কেন, যারা এই সাফল্যের নেপথ্যে কালঘাম ছোটাচ্ছেন তাদের প্রাপ্য সম্মানটা মিলছে না।
শিক্ষামন্ত্রীর প্রতিক্রিয়া
তবে এরই মধ্যে সম্প্রতি বিধানসভায় শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু ভাষণ দিয়েছিলেন, স্থায়ী শিক্ষক এবং পার্শ্ব শিক্ষকদের পদ সম্পূর্ণ আলাদা। তবুও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাদের স্বার্থে অনেক কিছুই করছেন।
আর এর প্রেক্ষিতে পার্শ্ব শিক্ষকরা দাবি করছে যে, স্কুলছুটদের ফেরাতে প্রথম সারিতেই পশ্চিমবঙ্গের অবস্থান। আর এই কৃতিত্ব পার্শ্ব শিক্ষকদেরই। আসলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শিক্ষাক্ষেত্রে সাফল্যের কথা উল্লেখ করলেও পার্শ্ব শিক্ষকদের গুরুত্ব দিচ্ছে না।
শিক্ষা দপ্তরের সামনে এখন বড়সড় চ্যালেঞ্জ
এই বয়কটের ফলে আগামী তিনদিন রাজ্যের স্কুলগুলিতে পাঠদান সম্পূর্ণ বেহাল হয়ে পড়বে বলেই মনে করছে উপর মহলের লোকজন। শিক্ষা দপ্তরের পক্ষ থেকে এই পরিস্থিতি কীভাবে সামাল দেওয়া হয় এখন সেটাই দেখার, তবে রাজ্য সরকারের তরফে মুখ্যমন্ত্রী কিংবা শিক্ষামন্ত্রীর পক্ষ থেকে এখনো এবিষয়ে কোন সওয়াল মেলেনি। এখন ভবিষ্যৎ কোথায় দাঁড়ায় সেটা সময়ই বলা দেবে।
গুরুত্বপূর্ণ খবরের জন্য | Join Group |
চাকরির খবরের জন্য | Join Hood Jobs |
রাশিফলের জন্য | Join Hood Rashifal |
খেলার খবরের জন্য | Join Whatsapp |