প্রীতি পোদ্দার, কলকাতা: একবছর আগে নেওয়া হাইকোর্টের সিদ্ধান্তকে পুনর্বহাল রেখে গত ৩ এপ্রিল একযোগে এসএসসি (SSC Case) মামলায় প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষক-অশিক্ষক কর্মীর চাকরি বাতিল করে দেয় সুপ্রিম কোর্ট। যার ফলে এক লহমায় ভেঙে পড়ে রাজ্যের শিক্ষাব্যবস্থা। পরীক্ষার খাতা দেখা থেকে শুরু করে ছাত্রছাত্রীদের পড়ানো নিয়ে বেশ চিন্তায় পড়েছে বিভিন্ন স্কুলের প্রধান শিক্ষকেরা। কীভাবে গোটা শিক্ষা ব্যবস্থাকে পুনরায় সঠিক ছন্দে নিয়ে আসা যায় তাই নিয়ে বিস্তর ভাবনা নিয়ে সুপ্রিম রায়ে অন্তর্বর্তীকালীন পরিবর্তন চেয়ে শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিল মধ্যশিক্ষা পর্ষদ। আর সেই আর্জিতেই এদিন কিছুটা হলেও নরম হল সুপ্রিম কোর্ট।
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে চাকরি বহাল
গতকাল মধ্যশিক্ষা পর্ষদের আবেদনের শুনানিতে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্না জানিয়েছেন চাকরিহারাদের মধ্যে অযোগ্য চিহ্নিত নয় এমন শিক্ষকরা ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত কাজে যোগদান করতে পারবে। তবে এক্ষেত্রে রাজ্যকে দু’টি শর্ত আরোপ করা হয়েছে। যার মধ্যে একটি হল, ৩১ মে-র মধ্যে রাজ্যকে হলফনামা দিয়ে জানাতে হবে যে তারা চলতি বছরেই নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করবেন। এবং দুই, ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে গোটা নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করতে হবে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নিয়োগ শেষ করতে না পারলে কড়া ব্যবস্থা। অর্থাৎ আগে যেখানে তিনমাসের মধ্যে নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করতে বলা হয়েছিল বৃহস্পতিবারের রায়ে সেই সময়সীমা আরও বাড়ানো হল।
অযোগ্যরাও যোগদান করবে চাকরিতে!
এদিকে সিবিআই-এর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী চিহ্নিত অযোগ্যের সংখ্যা ৬ হাজার ২৭৬। চিহ্নিত অযোগ্য নন এমন শিক্ষাকর্মী ৩ হাজার ৩৯৩ জন। অর্থাৎ আগামী ৯ মাস স্কুলে যাবেন ১৬ হাজার ৮৪ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা। এই সকল শিক্ষক শিক্ষিকারা বেতন পাবেন। পরবর্তীতে সকল শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী মিলিয়ে সর্বমোট ২৫ হাজার ৭৫৩ জনকে পরীক্ষা দিতে হবে। যোগ্য বিবেচিত হলে ১ জানুয়ারি ২০২৬ থেকে স্কুলে যেতে পারবেন। কিন্তু সেক্ষেত্রে এবার চিহ্নিত অযোগ্য শিক্ষকরাও এবার দাবি করলেন যে তাঁরাও যোগ্য শিক্ষকদের সঙ্গে স্কুলে যাবেন ক্লাস করাতে। অর্থাৎ তাঁরাও এখন নিজেদেরকে ‘যোগ্য’ বলে দাবি করতে শুরু করেছেন।
অযোগ্য শিক্ষকদের সংগঠনের তরফে কমলেশ কাপাট দাবি করেন, ‘আদালত তার মূল রায়ে স্পেসিফায়েড টেন্টেড কারা সে বিষয়ে এখনও পর্ষদের তরফে কোনো স্পষ্ট তথ্য দেওয়া হয়নি। আর অযোগ্যদের যেই সংখ্যাটা প্রকাশ্যে এসেছে সেটি হল ১২১২। তাঁরা আউট অফ প্যানেল থেকে নিয়োগপত্র হাতে পেয়েছিলেন। কিন্তু আমাদের নামের তালিকা রায়ের যে সেকশনে উল্লেখ করা হয়েছে, সেখানে বলা হয়েছে, ওএমআরে গোলমাল পাওয়া গিয়েছে। কিন্তু আমাদের জন্য আদালত অযোগ্য কথাটা উল্লেখ করেনি।’ অর্থাৎ তাঁদের দাবি এখনও আদালত সিবিআইয়ের এই দাবিকে মান্যতা দেয়নি। তাই তাঁরাও স্কুলে পড়াতে যেতে পারবেন।
আরও পড়ুনঃ সুপ্রিম কোর্টের রায়ে সাময়িক স্বস্তি এলেও হাইকোর্টে মামলা! চাপে রাজ্য সরকার
আর এই আবহে ‘যোগ্য’ চাকরিহারাদের তরফে মেহবুব মণ্ডল তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছে অযোগ্য চাকরি সংগঠনের ওপর। তিনি বলেন, ‘এই অযোগ্যদের জন্য আমাদের চাকরি গিয়েছে। আমাদের ভবিষ্যৎ অন্ধকারে ডুবেছে। এখন ওরা আবারও রাস্তায় নেমে সব গুলিয়ে দিচ্ছে। অবিলম্বে রাজ্য সরকারকে এদের চিহ্নিত করতে হবে এবং হাতে সঙ্গে সঙ্গে বরখাস্তের চিঠি দিতে হবে।’