বিক্রম ব্যানার্জী, কলকাতা: পহেলগাঁও জঙ্গি হামলায় প্রাণ গিয়েছে 26 জন নিরীহ পর্যটকের। যেই হত্যালীলা বিগত কয়েক বছরে দেখেনি জম্মু ও কাশ্মীর। পাক মদতপুষ্ট সন্ত্রাসীদের এমন কর্মকাণ্ডের পর কড়া বার্তা দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। নক্কারজনক ঘটনার তীব্র নিন্দা করে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, কাউকে রেয়াদ করা হবে না। আর সেই বক্তব্যের রেশ ধরে রেখেই বুধবার পাকিস্তানের(Pakistan) বিপক্ষে প্রথম বড় পদক্ষেপ নিয়েছে ভারত।
যা জানা যাচ্ছে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, 3 সেনাপ্রধান, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল ও পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রিদের সাথে বৈঠকের পরই পাকিস্তানের সাথে সিন্ধু জল বন্টন চুক্তি বাতিল করেছে দিল্লি। এখানেই শেষ নয়, নয়া দিল্লিতে বন্ধ করা হয়েছে পাকিস্তানের দূতাবাস। সেই সাথেই, পাক নাগরিকদের ভিসা বাতিলের পাশাপাশি আগামী 1 মে তারিখের মধ্যে সমস্ত পাকিস্তানিকে ভারত ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্র। এহেন আবহে, মোদির অ্যাকশনে বিরাট ক্ষতির আশঙ্কায় ডুকরে ডুকরে মরছে পাকিস্তান।
বুধবার সন্ধাতেই প্রত্যাঘাত করেছে ভারত
গতকাল সন্ধ্যা 6টা নাগাদ দিল্লিতে বৈঠকে বসেন ভারতের 3 সেনাপ্রধান। একই সাথে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, গৃহমন্ত্রী অমিত শাহ, প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিংরা। এদিন ভিডিও কনফারেন্সে কাশ্মীর থেকে বৈঠকে জুড়েছিলেন শাহ। সন্ধ্যার সেই বৈঠক শেষ করেই কূটনৈতিক স্তরে পাকিস্তানের উদ্দেশ্যে বিরাট বার্তা দেয় ভারত।
দিল্লির তরফে স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দেওয়া হয়, ঐতিহ্যের সিন্ধু জল বন্টন চুক্তি আপাতত বাতিল করা হচ্ছে। সঙ্গে ছিল আরও একাধিক কড়া ডোজের পদক্ষেপ। ভারতের এমন সিদ্ধান্তের পরই পাকিস্তান যে বড়সড় ক্ষতির মুখে পড়বে একথা বলাই বাহুল্য। কিন্তু কতটা ক্ষতি হবে পাকিস্তানের? সিন্ধু জল বন্টন চুক্তি বাতিল করায় কতটা প্রভাব পড়বে সে দেশে?
কবে হয়েছিল সিন্ধু জলবন্টন চুক্তি?
1960 সালের 19 সেপ্টেম্বর ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু ও সেই সময়কার পাক প্রেসিডেন্ট জেনারেল আয়ুব খানের মধ্যে প্রথমবারের জন্য ভারত-পাকিস্তান সিন্ধু নদীর জল বন্টন নিয়ে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। পাকিস্তানের করাচিতে বসে এই চুক্তিপত্রে সই করেছিলেন স্বয়ং পন্ডিত নেহেরু। জানা যায়, দুই দেশের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হলে সিন্ধু নদী ও তার উপনদী গুলির জল ব্যবহারের জন্য মধ্যস্থতা করেছিল বিশ্ব ব্যাঙ্ক। জানিয়ে রাখি, ভারতের সিন্ধু নদীর ওপর পাকিস্তানের কৃষক সমাজ ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল।
কতটা ক্ষতি হবে পাকিস্তানের?
পহেলগাঁও জঙ্গি হামলার পর ভারত যে পাকিস্তানের ওপর ক্ষিপ্ত হবে একথা কার্যত স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল প্রধানমন্ত্রীর সৌদি সফর সংক্ষিপ্ত করে ফিরে আসার পরই। এদিন সৌদি থেকে দিল্লি ফেরার পথে পাকিস্তানের আকাশ সীমা ব্যবহার করেননি প্রধানমন্ত্রী। পরিবর্তে, সৌদি আরব থেকে ওমানের পথ ধরে একেবারে আরব সাগর হয়ে ভারতে ঢুকেছিল মোদির বিমান। আর এই ঘটনার পরই পাকিস্তানের কুকর্মের প্রত্যাঘাত করল ভারত। বিশেষজ্ঞ মহলের দাবি, ভারত সিন্ধু জল বন্টন চুক্তি বাতিল করায়, বিরাট ক্ষতি হবে পাকিস্তানের।
জানা যাচ্ছে, ভারতের এমন পদক্ষেপে পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের জলসেচ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। কেননা, সে দেশের কৃষি ব্যবস্থা প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে ভারতের সিন্ধু নদীর জলের ওপর নির্ভরশীল। কাজেই এই সুবিধা চিরতরে বন্ধ হয়ে গেলে আর্থিক সঙ্কটে ভুগতে থাকা পাকিস্তানের অবস্থা একেবারে শোচনীয় হয়ে যাবে। জানিয়ে রাখি, সিন্ধু ও তার উপনদী গুলির ওপর নির্ভর করে পাকিস্তানের 80 শতাংশ কৃষিকাজ।
অবশ্যই পড়ুন: প্রাণ নাশের হুমকি টিম ইন্ডিয়ার হেড কোচ গম্ভীরকে
উল্লেখ্য, সীমান্তে সন্ত্রাসের ছক কষলে তার প্রভাব সিন্ধু জলবন্টন চুক্তির ওপর পড়তে পারে সে কথা বহু আগেই জানিয়ে রেখে পাকিস্তানকে হুঁশিয়ারি দিয়েছিল মোদি সরকার। 2023 সালের জানুয়ারিতে, সিন্ধু চুক্তির পুনর্মূল্যায়ন জন্য একেবারে প্রথমবারের মতো পাকিস্তানকে নোটিস পাঠিয়েছিল দিল্লি। সেই চিঠিতে 1960 সালের পর দুই দেশের বিপুল জনসংখ্যা বৃদ্ধির যুক্তি রাখা হয়েছিল। তবে ইসলামাবাদ সেই কথায় সায় দেয়নি। আর এরপরই পাকিস্তানকে সীমান্তে সন্ত্রাস নিয়ে দ্বিতীয় চিঠি দেয় নয়া দিল্লি। সেখানেই কড়া বার্তার আভাস দিয়েছিল মোদি সরকার। এবার সেই সতর্কতার 8 মাসের মধ্যেই অ্যাকশন নিল ভারত।
গুরুত্বপূর্ণ খবরের জন্য | Join Group |
চাকরির খবরের জন্য | Join Hood Jobs |
রাশিফলের জন্য | Join Hood Rashifal |
খেলার খবরের জন্য | Join Whatsapp |