সৌভিক মুখার্জী, কলকাতা: বিয়ের মাত্র এক সপ্তাহের মাথায় হানিমুনে গিয়ে মৃত্যু। স্বপ্নের কাশ্মীর ভ্রমন মুহূর্তের মধ্যেই দুঃস্বপ্ন পরিণত হয়েছে। জন্মু কাশ্মীরের পহেলগাঁও (Pahalgam Attack) উপত্যকায় ঘটে যাওয়া সেই ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার কবলে পড়েন কোচির বাসিন্দা তথা নেভি অফিসার বিনয় নারওয়াল। সূত্রের খবর, তার স্ত্রী হিমাংশি নারওয়াল ফোনে পরিবারের সদস্যদের জানিয়েছে সেই মর্মান্তিক মুহূর্তের কথা। আর সেই মুহূর্তে বিনয় নাকি নিজের জীবনকে বাজি রেখে জঙ্গিদের আটকানোর চেষ্টা করেছিলেন।
বিনয়ের মৃত্যুর সেই নির্মম দৃশ্য
ফোনে কান্না ঝরানো গলায় তার স্ত্রী বলেছিলেন, বিনয় দুজন জঙ্গিকে ধরে ফেলেছিল। বুকের কাছে চেপে রেখেছিল দুজনকেই। একজন কোনরকমে ছুটে পালিয়ে যায়। আর সেই মুহূর্তে মাথায় গুলি চালিয়ে বিনয়কে মেরে ফেলে তারা। ঘটনার পর থেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে একটি ভিডিও। সেখানে দেখা যাচ্ছে যে, হিমাংশি সবার কাছে সাহায্য চাইছেন এবং আতঙ্কিত কন্ঠে বলছেন, ওরা ওকে গুলি করল। ওরা আগে নাম জিজ্ঞাসা করল, ধর্ম জিজ্ঞাসা করল। তারপরেই ওকে গুলি করল। শুধু তাই নয়, আরও একটি ছবি ভাইরাল হয়েছে। যেখানে হিমাংশিকে দেখা যাচ্ছে মাটিতে শুয়ে থাকা বিনয়ের দেহের পাশে বসে থাকতে।
এক মুহূর্তে পরিবারের শোকের ছায়া
বিনয়ের পরিবার জানিয়েছে যে, গত ২১ এপ্রিল হিমাংশি এবং বিনয় জম্মু-কাশ্মীরের উদ্দেশ্যে হানিমুনের জন্য রওনা দেয়। পহেলগাঁওয়ের এক হোটেলে ছিলেন তারা। ২২ এপ্রিল দুপুরে তারা দুজন মিলে হাঁটতে বেরিয়েছিলেন। পথে একটি ছোট্ট দোকানে ভেলপুরি খেতেও থামেন। আর সেই মুহূর্তেই আক্রমণ হানে জঙ্গি।
আরও পড়ুনঃ দুই জঙ্গিকে ধরেও ফেলেছিলেন বিনয়, কীভাবে মৃত্যু হল নেভি অফিসারের? প্রকাশ্যে এল সত্য
জঙ্গিরা আর্মির পোশাকে ছিল। আর তারা পর্যটকদের নাম, ধর্ম ইত্যাদি জিজ্ঞেস করতে থাকে। পরিস্থিতি আঁচ করতে পেরে বিনয় ২ জঙ্গিকে ধরেও ফেলেন। কিন্তু একজন হাত ছাড়িয়ে পালিয়ে যায় এবং গুলি চালিয়ে বিনয়কে হত্যা করে ফেলে। আর ওই দুজন আরও অনেক পর্যটকদের হত্যা করে বলে জানিয়েছে হিমাংশি।
জন্মদিনের বদলে শোকের ছায়া নামলো পরিবারে
জানলে অবাক হবেন, বিনয়ের জন্মদিন ছিল আগামী ১ মে। তার পরিবার ভেবেছিল জাঁকজমক করে তার জন্মদিন পালন করবে। এমনকি তার জন্য গেস্ট হাউসও বুক করা হয়েছিল কেরালার কোচিতে। ৩ মের মধ্যে তাঁদের ফেরার পরিকল্পনা ছিল। সেই সমস্ত পরিকল্পনা শুধু আজকের স্মৃতির পাতায় লেখা।
এমনকি বিনয়ের কাকা সুরজিত নারওয়াল জানিয়েছেন, হিমাংশি ফোন করে জানিয়েছে যে, ওরা খাবার খেতে থেমেছিল। আর সেই সময়ই ওদের উপর আক্রমণ হানার চেষ্টা করেছিল। বিনয় দুজন জঙ্গিকে ধরেও ফেলেন, কিন্তু সব শেষ হয়ে যায় মুহূর্তের মধ্যে।
পহেলগাঁওয়ের নৃশংস হত্যা
গত ২২ এপ্রিল মঙ্গলবার, জন্মু-কাশ্মীরের পহেলগাঁওতে সন্ত্রাসবাদীরা পর্যটকদের লক্ষ্য করে নির্বিচারে গুলি চালিয়েছিল। আর এই হামলায় ২৬ জন প্রাণ হারান। এদের মধ্যে বেশিরভাগই ছিল পর্যটক। আর জঙ্গিরা সেনার পোশাকে ছিল বলেই খবর। তারা প্রথমে পর্যটকদের নাম, ধর্ম ইত্যাদি জিজ্ঞাসা করে। তারপরেই নির্মমভাবে গুলি চালায়। এমনকি নিহতদের মধ্যে দুজন বিদেশি এবং একজন স্থানীয় মুসলিমও ছিলেন।