বিক্রম ব্যানার্জী, কলকাতা: সাফল্য ছোঁয়া কতটা কঠিন? যাঁরা পরিশ্রম করেন একমাত্র তাঁরাই জানেন এর আসল উত্তর। চলতি ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ মরসুমে মাত্র 14 বছর বয়সি বৈভব সূর্যবংশীও (Vaibhav Suryavanshi) তাঁর পরিশ্রমের ফল পাচ্ছেন। সম্প্রতি গুজরাতের ভয়ঙ্কর বোলিং আক্রমণের সামনে রুখে দাঁড়িয়ে মাত্র 38 বলে 101 রানের দুরন্ত ইনিংস খেলেছিলেন বিহারের এই কিশোর প্রতিভা।
আর এই অবিস্মরণীয় ইনিংসের পরই সর্বকনিষ্ঠ ক্রিকেটার হিসেবে ভারতীয় ক্রিকেট জগতে ইতিহাস লিখেছেন বিহারের সূর্যবংশী। বাবা সঞ্জীব সূর্যবংশীর হাড়ভাঙা কষ্ট ও বলিদানের মাসুল ধীরে ধীরে গুনছে ভারতীয় ক্রিকেটের উদীয়মান তারকা বৈভব। বর্তমানে নিজের ক্রিকেট কেরিয়ার রাঙিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি বৈভবের ব্যক্তিগত সম্পদও যে তরতরিয়ে বাড়বে সে কথা বোধহয় না বললেও বুঝেছেন অনেকেই।
স্বপ্ন ছুঁয়ে দেখছেন বৈভব
বিহারের সমস্তিপুরের এক মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে বৈভব। ছোট থেকেই ক্রিকেটের প্রতি তাঁর টান ছিল একপ্রকার চুম্বকের মতোই। আর সেই লক্ষ্য পূরণে পরিবার অর্থাৎ বাবা মাকে পাশে পেয়েছিলেন তিনি। পরিবারের আর্থিক অবস্থা ভাল নেই জেনেও, ছেলের স্বপ্ন পূরণ করতে একেবারে উঠে পড়ে লেগেছিলেন বাবা সঞ্জীব। সেই সূত্র ধরেই নিজের শেষ সম্বল অর্থাৎ কৃষি জমিটুকুও বিক্রি করে দিয়েছিলেন তিনি। জমি বিক্রির অর্থ দিয়েই চলত ছেলের খেলার খরচ।
বাবার পরিশ্রমের ঠিক উল্টোপিঠে পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধুলায় ছেলের যাতে কোনও রকম কমতি না থাকে সেজন্য যাবতীয় যা করার করতেন বৈভবের মা। নিয়ম করে ব্যাগ গুছিয়ে দেওয়া হোক কিংবা সকালের ব্রেকফাস্ট তৈরি করে দেওয়া, ছেলেকে মানসিক থেকে সাপোর্ট, আসলে মায়ের কাজ যা হয় আর কি। সব মিলিয়ে, পরিবারের সমর্থনেই জীবনের বড় অধ্যায় পার করে এখন সাফল্যের দরজায় বৈভব সূর্যবংশী। রাজস্থানের হয়ে প্রথম ম্যাচ শুধু ঝলক দেখিয়েছিলেন তিনি, তবে গুজরাতের বিপক্ষে গোটা শো দেখিয়ে সকলকে মাত দিয়েছেন বিহারের এই ভূমিপুত্র।
অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র বৈভব
সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকার মারফত জানা গিয়েছে, বিহারের ডক্টর মুক্তেশ্বর সিনহা মডেস্টি বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র বৈভব। খেলাধুলার পাশাপাশি লেখাপড়ার প্রতিও বৈভাব যে যথেষ্ট সচেতন সে কথা আগেই জানিয়েছিলেন বাবা সঞ্জীব। প্রতিদিন ভোরে উঠে টিউশন তারপর স্কুল এবং ক্রিকেট প্র্যাকটিস সবই এক ফ্রেমে বেঁধে এগিয়েছেন সূর্যবংশী। আজ তাঁর পরিশ্রমের ফল স্বচক্ষে দেখতে পাচ্ছেন ভারতীয় ক্রিকেটপ্রেমীরা।
বাবা-মায়ের অবদান স্বীকার করেছেন বৈভব
গুজরাতের বিপক্ষে জয়ের পরই একটি ভিডিওতে বৈভব সূর্যবংশীকে বলতে শোনা যায়, আমি আজ যে জায়গায় পৌঁছেছি তাঁর নেপথ্যে সবচেয়ে বড় অবদান আমার বাবা-মায়ের। আমি যেহেতু একেবারে ভোরে উঠতাম সেজন্য মাও আগে থেকে উঠে আমার জন্য খাবার বানিয়ে রাখত। বাবা উঠে পড়তেন তাড়াতাড়ি। শুধুমাত্র আমার জন্যই নিজের কাজও ছেড়ে দিয়েছিলেন বাবা।
বাবার কাজ ধরেছিলেন দাদা। খুব কষ্ট করে সংসার চলত আমাদের। তাই বাবা বিশ্বাস করতেন আমি একদিন কিছু একটা করতে পারব। সবশেষে বৈভব বলেন, ঈশ্বর সবাইকেই দেখেন। যারা পরিশ্রম করেন তারা সাফল্যও পান। আমি একটাই কথা বলব, আজ আমি যেটুকু যা পেয়েছি সবটাই আমার বাবা মায়ের কৃতিত্ব।
অবশ্যই পড়ুন: মোহনবাগানেরও দুর্দিন! যে ৩ কারণে সুপার কাপে স্বপ্ন ভাঙল সবুজ মেরুনের
কত টাকার মালিক বৈভব সূর্যবংশী? | Vaibhav Suryavanshi Net Worth |
গত নভেম্বরে IPL 2025 নিলাম থেকে বৈভব সূর্যবংশীকে 1.1 কোটি টাকা দিয়ে কিনে নেয় রাজস্থান রয়্যালস। আর সেই সূত্র ধরেই কিশোর বয়সে কোটি টাকা উপার্জনের রাস্তায় প্রথম পদক্ষেপ রেখেছিলেন বৈভব। বেশ কয়েকটি ওয়েবসাইট মারফত যা খবর, বর্তমানে বৈভবের আনুমানিক সম্পদের পরিমাণ প্রায় 2.5 কোটি টাকা। মাত্র 14 বছর যা মাধ্যমিকে বসার যোগ্য নয়, সেই বয়সেই কোটিপতি হয়েছেন বিহারের এই সুযোগ্য প্রতিভা।
জানিয়ে রাখি, বৈভব সূর্যবংশীর আয়ের প্রধান উৎস মূলত রাজস্থান রয়্যালসের বেতন, ঘরোয়া ম্যাচ ফি এবং বিভিন্ন ব্র্যান্ডের বিজ্ঞাপন। বর্তমানে গোছানো ক্রিকেটের জোরে নিজের দক্ষতা প্রমাণ করেছেন তিনি। ফলত, ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের এই চেনা মুখকে আগামী দিনে যে বিভিন্ন সংস্থা বিজ্ঞাপনের জন্য ডাকবে একথা বলাই যায়।
গুরুত্বপূর্ণ খবরের জন্য | Join Group |
চাকরির খবরের জন্য | Join Hood Jobs |
রাশিফলের জন্য | Join Hood Rashifal |
খেলার খবরের জন্য | Join Whatsapp |